গোখাদ্য ‘চুইন্না’ থেকে মাদারীপুরের শিবচরের চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু গুড়। এ গুড় তৈরি করে অনেকেই বাড়তি আয় করে পরিবারের চাহিদা মেটাচ্ছেন। ‘চুইন্না’ গুড়কে সম্ভাবনাময় মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যতিক্রম স্বাদের এ গুড় কিনতে প্রতিদিন আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে মানুষ পদ্মার চরাঞ্চলের বাড়িগুলোতে প্রতিদিনই আসছেন।
সরেজমিনে পদ্মার চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, শিবচর উপজেলার চরজানাজাত ইউনিয়নের হাওলাদারকান্দি গ্রামের বাসিন্দারা মাঠ থেকে চুইন্না কেটে বাড়ি আনছেন।
সেই চুইন্না থেকে পাতা কেটে তারা গরুকে খাওয়াচ্ছেন। আর চুইন্নাগাছটি ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে একই এলাকার ইব্রাহিমের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। ইব্রাহিম টাকার বিনিময়ে স্যালো মেশিনের তৈরি এক ধরনের মেশিনে চুইন্না ভেঙে তা থেকে রস বের করে দিচ্ছেন। স্থানীয়রা বাড়িতে বসে সেই রস চুল্লিতে পুড়িয়ে তৈরি করছেন সুস্বাদু গুড়।
শুধু হাওলাদারকান্দি গ্রামের মানুষই নন, পাঁচ্চর, মাদবরচর, কাঁঠালবাড়ি, বন্দরখোলাসহ আশপাশের বিভিন্ন ইউনিয়নের লোকজন প্রতিনিয়তই চুইন্না সংগ্রহ করে ইব্রাহিমের কাছে ভাঙিয়ে রস করে নিয়ে যাচ্ছেন। ইব্রাহিম নিজেও গুড় তৈরি করে বিক্রি করেন।
এই গুড় কিনতে মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ভাঙ্গাসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে মানুষ হাওলাদারকান্দি গ্রামে ভিড় জমাচ্ছেন। ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে গুড় বিক্রি হচ্ছে দেদার। চুইন্না থেকে তৈরি গুড় বিক্রি করে স্থানীয়রা বাড়তি আয় করছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সুফিয়া আক্তার বলেন, ‘আমরা প্রথমে শখের বসে চুইন্না ধুয়ে শিল-পাটায় বেটে রস বের করে সেটি গুড় তৈরি করতাম। দেখতাম গুড় খুবই সুস্বাদু হচ্ছে।
বিভিন্ন এলাকার মানুষ ইব্রাহিমের মেশিন দিয়ে চুইন্না ভাঙিয়ে নিয়ে যান। ছবি: নিউজবাংলা
‘পরে ইব্রাহিম ভাই মেশিন আনার পর এলাকার প্রায় সবাই তার কাছ থেকে চুইন্না ভাঙিয়ে গুড় তৈরি করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। অনেক জায়গা থেকে লোকজন এসে গুড় কিনে নিয়ে যায়। আমরা এখন এই গুড় দিয়েই পিঠা-পায়েস রান্না করে খাই।’
স্থানীয় বারেক হাওলাদার বলেন, ‘যে কোনো গুড়ের চেয়ে এই গুড় খেতে অনেক সুস্বাদু। ঝোলের মতো হওয়ায় এটি মুড়ির সঙ্গে ও পিঠা তৈরিতে বেশি ব্যবহার করা হয়। এতে আমাদের বাড়তি আয়ও হচ্ছে।’
স্যালো মেশিন দিয়ে চুইন্না ভেঙে দেয়া ইব্রাহিম হাওলাদার বলেন, ‘এলাকার প্রায় সব বাড়ির নারীকেই দেখি শিল-পাটায় বেটে চুইন্নার রস বানিয়ে গুড় তৈরি করছেন। গুড় খেতেও সুস্বাদু। তাই মেশিন কিনে এনে চুইন্না ভাঙার কাজ করছি। নিজেও চুইন্না থেকে গুড় তৈরি করে বিক্রি করছি।
পাঁচ্চর, মাদবরচর, কাঁঠালবাড়িসহ অনেক এলাকার মানুষ আমার কাছে চুইন্না ভাঙাতে আসে। কৃষিকাজের পাশাপাশি এই গুড় বিক্রি করে আমার মতো অনেকেই বাড়তি আয় করছে।’
এ ব্যাপারে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘কৃষি বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে এই কাজকে কিভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া যায়, এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। প্রয়োজনে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের আরও বেশি উৎসাহিত করার ব্যবস্থা করা হবে।’
মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘চরাঞ্চলেই চুইন্নাগাছ জন্মায়। এর বীজ সেভাবে সংগ্রহ করা যায় না। তবে এসব গাছ থেকে গুড় তৈরি করা গেলে এটিকে সম্ভাবনাময় দিক হিসেবে মনে করছি। কৃষি বিভাগ থেকেও বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’