বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অতিরিক্ত হাত বদলে সবজির দাম লাগামহীন: গোয়েন্দা প্রতিবেদন

  •    
  • ২১ ডিসেম্বর, ২০২১ ২২:৫৮

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিজেলের দাম বাড়ার আগের ও পরের মূল্য পর্যালোচনায় দেখে গেছে মাঠ পর্যায়ে কাঁচামালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। শীতকালীন সবজির উৎপাদন বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাজারে সবজির দাম তুলনামূলক কম হওয়ার কথা। অথচ সবজির দাম না কমে দেড় থেকে দুইগুণ বেড়েছে। কোনো কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির হার আরও বেশি।

সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষক হতে শহরের ভোক্তার নিকট পৌঁছানো পর্যন্ত হাত বদল কমাতে হবে। সম্প্রতি এমন সুপারিশ করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে।

গোয়েন্দা পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ডিজেলের দাম বাড়ার আগের ও পরের মূল্য পর্যালোচনায় দেখে গেছে মাঠ পর্যায়ে কাঁচামালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। শীতকালীন সবজির উৎপাদন বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাজারে সবজির দাম তুলনামূলক কম হওয়ার কথা। অথচ সবজির দাম না কমে দেড় থেকে দুইগুণ বেড়েছে। কোনো কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির হার আরও বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে যেকোনো সবজি শহরের ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর আগে বেশ কয়েকবার হাত বদল হয়। হাত বদল, যান ব্যবহার ছাড়াও অসাধু ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফালোভী মনোভাব, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যানজটসহ নানা কারণে বাজারে সবজির দাম বাড়ে। পাইকারি ক্রয়মূল্যের শতকরা ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারও বেশি লাভ করার প্রবণতা খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে।

উত্তরবঙ্গ থেকে দেশের সবজির চাহিদার বড় অংশ পূরণ করা হলেও সেখানে তেমন বড় কোনো পাইকারি বাজার নেই। এ কারণে রংপুর, নাটোর, বগুড়া ইত্যাদি জেলা থেকে সবজি গাড়িতে করে বড় পাইকারি বাজার কুমিল্লার নিমসার আড়তে আসে। এখান থেকে আবার হাত বদল হয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জেলা শহরে এসব সবজি নিয়ে যাওয়ার জন্য আরেক দফা অতিরিক্ত পরিবহন রয়েছে। এছাড়া এসব জায়গায় হাত বদলের কারণেও সবজির দাম বাড়ছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাওরান বাজার থেকে যারা পুনরায় পণ্য পাইকারি বাজারে বিক্রি করতে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় নেন, তাদের পণ্যবাহী বাহনেও বিভিন্ন রকমের খরচ করতে হয়। প্রথমেই তাদের পিকআপকে দুই-তিন হাজার টাকার বিনিময়ে কাওরানবাজার স্ট্যান্ডে বাৎসরিক ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত হতে হয়। এছাড়া প্রতি ট্রিপে শতকরা ১০ টাকা হারে স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণকারীদের দিতে হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাওরান বাজারে ৪০০ বর্গফুট জায়গা প্রতি রাতের জন্য ভাড়া ২ হাজার ১০০ টাকা এবং একই জায়গায় প্রতি দিনের জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকা দিতে হয়। একারণে পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে।

বগুড়ার মহাস্থানহাট থেকে কাওরান বাজার পর্যন্ত প্রতিটি পণ্যবাহী ট্রাককে যেসব ঘাটে চাঁদা দিতে হয়, তার তালিকাও গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, বগুড়া পৌরসভার ৫০ টাকা টোল দিয়ে যাত্রা শুরু করতে হয়। এরপর শেরপুরে ৫০ টাকা, সিরাজগঞ্জ ট্রাক মালিক-শ্রমিক সমিতিতে ৫০ টাকা, সিরাজগঞ্জ শহরে গাড়ি ঢুকলে ৫০ টাকা, সিরাজগঞ্জ মোড় হাইওয়ে পুলিশ খরচ (মাসিক) ৫০০ টাকা, যমুনা সেতু গোল চত্ত্বর হাইওয়ে পুলিশ খরচ (মাসিক) ৫০০ টাকা, টাঙ্গাইল মোড় হাইওয়ে পুলিশ খরচ (মাসিক) ৫০০ টাকা, আমিনবাজার, সাভার (লাঠিয়াল বাহিনী) প্রতি ট্রিপ এক থেকে ২০০ টাকা, কাওরানবাজার পার্কিংয়ে ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়।

এছাড়া প্রতি ট্রিপে যুমনা সেতুতে টোল দিতে হয় ১ হাজার ৪০০ টাকা।

এর বাইরে বগুড়ার মহাস্থানহাট থেকে ঢাকায় আসায় প্রতিটি পাঁচ টনের ট্রাকের প্রতি ট্রিপে ডিজেলে সাড়ে ছয় হাজার টাকা, চালক-হেল্পারের বেতন দুই হাজার টাকা এবং সড়ক খরচ দুই হাজার টাকা খরচ হয়। যদিও পাঁচ টনের ট্রাকে সাধারণত ১২ থেকে ১৩ টন সবজি পরিবহন করা হচ্ছে।

ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খরচ কতটা বেড়েছে সেটিও গোয়েন্দা প্রতিবেদনে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, একটি পাঁচ টন ট্রাক এক লিটার ডিজেলে আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার যায়। তিন টন মিনি ট্রাক এক লিটারে যায় পাঁচ-ছয় কিলোমিটার। এক থেকে দুই টন পিকআপ এক লিটারে যায় সাত থেকে সাড়ে সাত কিলোমিটার।

এ হিসেবে মহাস্থানহাট থেকে ২০২ কিলোমিটার দূরত্বে ঢাকা যেতে গড়ে ডিজেল লাগে পাঁচ টন ট্রাকের ৮০ থেকে ৮১ লিটার।

সম্প্রতি ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকায় সমন্বয় করায় বর্তমানে ডিজেল বাবদ খরচ হয় ৬ হাজার ৪৬৪ টাকা। ডিজেলের দাম বাড়ার আগে খরচ হতো ৫ হাজার ২৫২ টাকা। এ হিসেবে বর্তমানে ডিজেল বাবদ অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে ১ হাজার ২১২ টাকা।

যেহেতু অন্যান্য খরচ আগের মতই রয়েছে, সেহেতু ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে পাঁচ টনের একটি ট্রাকের ভাড়া সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকা বাড়ার কথা। অথচ ট্রিপপ্রতি পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। এ কারণে কাঁচামালের বাজার বেসামাল হয়ে উঠেছে।

বগুড়ার স্থানীয় কৃষক, মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী, আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের সত্যতা পাওয়া গেছে।

যেসব সুপারিশ করা হয়েছে

সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।

# সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষক থেকে শহরের ভোক্তার নিকট পৌঁছানো পর্যন্ত হাত বদল কমাতে হবে।

# হাত বদলের সব স্তরে দাম নির্ধারণ করে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে এবং পরিবহন ব্যয় কমানোর জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর নজরদারি জোরদার করতে হবে।

# বাজার নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী সমাধানের জন্য পাইকারি বাজার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে খুচরা বাজারের মূল্য তালিকা তৈরি ও বাস্তবায়নে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।

# সব স্তরের সবজি ব্যবসায়ীদের এলাকাভিত্তিক তালিকা তৈরি করা জরুরি। ওই নীতিমালা করে ব্যবসায়ীদের তার আওতাভুক্তির মাধ্যমে খুচরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

এ বিভাগের আরো খবর