থাইল্যান্ডের জাহাজে চড়ে মোংলা বন্দরে এসে পৌঁছেছে মেট্রোরেলের সপ্তম চালান।
বন্দরের ৮ নম্বর জেটিতে ৮টি বগি ও ৪টি ইঞ্জিন নিয়ে বেলা ৩টায় নোঙ্গর করে ‘এসপিএম ব্যাংকক’ নামে জাহাজটি। বগি ও ইঞ্জিনের পাশাপাশি এটি এনেছে মেট্রোরেলের জন্য প্রয়োজনীয় ৪৯০ টন সরঞ্জাম।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ও হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, জাপানের কোবে বন্দর থেকে জাহাজটি ছেড়ে আসে। বিকাল থেকেই মালামাল খালাস শুরু হয়েছে।
থাই জাহাজটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট এনশিয়েন্ট স্টিম শিপ কোম্পানির ব্যবস্থাপক মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, এখন পর্যন্ত মোট ৭টি জাহাজে করে মেট্রোরেলের মোট ৬০টি বগি মোংলা বন্দর দিয়ে দেশে এসেছে। আগামী মাসে আরও একটি চালান আসার কথা রয়েছে। সব মিলিয়ে ২০২২ সালের মধ্যে মেট্রোরেলের আরও ৯০টি বগি ও ইঞ্জিন আসবে।
ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এন এম সিদ্দিক এর আগে জানান, আগামী বছরের ডিসেম্বরে যাত্রীবাহী মেট্রোরেল চলবে। এটির আনুষ্ঠানিক পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হয়েছে গত ১২ ডিসেম্বর।
এমএএন সিদ্দিক বলেন, ‘জাপানের তৈরি এসব ট্রেন দেশটির কোবে সমুদ্রবন্দর থেকে জাহাজে প্রথমে মোংলা বন্দরে আসে। সেখান থেকে নৌপথে ঢাকায় ডিপোতে আসে। তারপর পারফরম্যান্স টেস্ট, টেস্ট রান, ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট, ট্রায়াল রানসহ অনেকগুলো ধাপ পার হতে হয়।’
কর্তৃপক্ষ জানায়, মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি। রোববার পরীক্ষামূলক চলাচলে প্রথম চারটি স্টেশনে সেই গতিবেগ বজায় ছিল, তবে এরপর স্টেশনগুলোয় ট্রেনটি সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার গতিতে চলেছে।
দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও স্টেশনের দূরত্ব প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার। এর মাঝে নয়টি স্টেশনের সাতটিতে ট্রেন কিছুক্ষণ থেমে এসেছে।
দেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্প মেট্রো রেললাইন-৬ বা এমআরটি-৬-এর আওতায় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেলের রুট নির্মাণকাজ চলছে। শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এই ট্রেন চলাচলের কথা রয়েছে।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল-৬ রুটে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রতি ৫ থেকে ১০ মিনিট পরপর ছেড়ে দেবে এক একটি ট্রেন। ট্রেনের প্রথম সেট গত এপ্রিলে ঢাকায় ডিপোতে পৌঁছায়। এসব ট্রেনের প্রতিটিতে ছয়টি গাড়ি বা কোচ রয়েছে।
স্টেইনলেস স্টিলের কোচগুলোর ভেতরে দুই পাশে লম্বালম্বি বসার আসন রয়েছে। একটি ট্রেনের দুই প্রান্তের দুটি কোচকে বলা হচ্ছে ট্রেইলার কার, যা ট্রেনকে চালিয়ে নিয়ে যাবে। এতেই চালক থাকবেন।
এক সেট ট্রেন একবারে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮ জন যাত্রী বহন করতে পারবে। মতিঝিল পর্যন্ত রুটে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার এবং দিনে পাঁচ লাখ যাত্রী বহন করবে মেট্রোরেল।
মোট ১৬টি স্টেশনে থামবে ট্রেনগুলো। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারবে এ ট্রেন।
ট্রেনগুলো তৈরি করছে জাপানের কাওয়াসাকি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। পরে এগুলো দেশটির কোবে সমুদ্রবন্দর থেকে জাহাজে করে দেশে আনা হয়।
ঢাকার যানজট নিরসন এবং দ্রুত ও আরামদায়ক যাতায়াত নিশ্চিত করতে উত্তরা-মতিঝিল রুট ছাড়াও পাঁচ রুটে মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ করা হবে। ঢাকাকে ঘিরে সব মিলিয়ে ১২৮ কিলোমিটারের নেটওয়ার্ক হবে মেট্রোরেলের।