ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের ছাত্রী এলমা চৌধুরী মেঘলাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে জড়িতদের বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছেন তার মা-বাবা। এতে অংশ নেন এলমার শিক্ষক ও সহপাঠীরাও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে রোববার দুপুরে নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে রোববার দুপুরে এ মানববন্ধন হয়।
এলমার সঙ্গে যা ঘটেছে সেটাকে হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করে তার মা শিল্পী চৌধুরী বলেন, এই হত্যায় এলমার শ্বশুরবাড়ির সবাই জড়িত।
তিনি বলেন, ‘মেয়েকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল, কিন্তু সেটা ভেঙে গেল। আমি মাঝে মাঝে তাকে বিয়ের কথা বলতাম। সে বিয়ে করতে চাইত না। তার স্বপ্ন ছিল, সে পড়াশোনা করে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে অনেক বড় হবে। আমার মেয়েকে সে (এলমার স্বামী) নানা রকম মিষ্টি মিষ্টি মিথ্যা কথা বলে তাকে বিয়ে করে।
‘তার এই খুনের পেছনে তার (এলমার স্বামী) পরিবারের সবাই জড়িত। কেন তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করছি, তার পরিবারের সবাইকে গ্রেপ্তার করেন। তাহলে সব তথ্য পাবেন।’
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে এলমার মা বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার একটা আবেদন আছে। আপনি তো একজন মা, আপনি আমার মেয়ে হত্যার সঠিক তদন্ত করেন মা। তার পরিবারকে ধরলে সব বেরিয়ে আসবে, আপনি আমাদের সাহায্য করেন মা।’
মেয়ে হত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে অশ্রুসিক্ত এলমার বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমার প্রাণের মেয়ে যাকে আমি কত আশা নিয়ে উচ্চশিক্ষিত করেছি, আজকে আমার সেই মেয়েকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা মিলে তিন দিন ধরে অত্যাচার করে হত্যা করেছে। আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি এই অসহায় বাবার কথাটা শোনেন। আপনি এর বিচার করেন। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে দেশের কোনো মানুষ নিরাপদ থাকবে না। আর যেন এলমার মতো কাউকে জীবন দিতে না হয়।’
নৃত্যকলা বিভাগের প্রভাষক এ্যাগনেস প্যারিস বলেন, ‘আজকে এখানে এভাবে দাঁড়াতে হবে কখনও ভাবতেও পারিনি। মানুষ হত্যার মতো জঘন্য কিছু আর হতে পারে না। এলমা যদি আমাদের একবার জানাতো এই জঘন্য মানুষটির সঙ্গে আমরা তাকে থাকতে দিতাম না। তাকে বাঁচানোর জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করতাম।’
এলমার সহপাঠী স্বর্ণালী বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থী অনেক আশা-স্বপ্ন নিয়ে আসে, কিন্তু এলমার স্বপ্ন অঙ্কুরেই ধ্বংস করে দেয়া হলো। এলমাকে হারানোর দুঃখ আমাদের থেকে যাবে। এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার হলে আরও অনেক এলমা রক্ষা পাবে।’
১৪ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর বনানী এলাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে এলমা চৌধুরী মেঘলার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় এলমার বাবার করা মামলায় তার স্বামী ইফতেখার আবেদীনকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।