বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নির্বিচারে জরায়ু কর্তন: ডাক্তারদের ধরার আইন নেই

  •    
  • ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৪:৪৯

উপকূলবাসী নারীদের নির্বিচারে জরায়ু কেটে ফেলার ঘটনায় অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন খোদ সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন। তিনি জোর দিচ্ছেন ডাক্তারদের নীতিনৈতিকতার ওপরে। সেই সঙ্গে রেগুলেটরি আইন যুগোপযোগী করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

শ্যামনগর, আশাশুনিসহ সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলায় স্থানীয় ক্লিনিকগুলোতে যথাযথ ডায়াগনসিস ছাড়াই হিস্টেরেক্টমি বা এ ধরনের অযৌক্তিক অপারেশন অহরহ হচ্ছে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত নিজেও স্বীকার করছেন এ তথ্য। তবে তিনি বলছেন, এসব প্রতিরোধের সক্ষমতা স্থানীয় প্রশাসনের নেই। এমনকি, নীতিবিবর্জিত যেসব চিকিৎসক এমন অমানবিক কাজে জড়িত, তাদের ধরার বা বিচার করার মতো আইনি ব্যবস্থাও দেশে নেই।

একাধিক দিন খণ্ড খণ্ড প্রশ্নের জবাবে উপকূলবাসী নারীদের নির্বিচারে জরায়ু কেটে ফেলার ঘটনা নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন এই চিকিৎসক-প্রশাসক।

প্রশ্ন: শ্যামনগরের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে যথাযথ চিকিৎসা না দিয়েই অল্প বয়সী নারীদেরও জরায়ু কেটে ফেলার মতো ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে আপনি কতটুকু অবগত আছেন এবং কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?

ডা. শাফায়াত: শ্যামনগর, আশাশুনিসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় স্থানীয় ক্লিনিকগুলোতে এ ধরনের অপারেশন করা হচ্ছে বলে শুনেছি। আসলে ক্লিনিকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো রেগুলেটরি আইন এখনও যুগোপযোগী হয়নি। আমরা, তথা স্বাস্থ্য বিভাগও অতটা এমপাওয়ার্ড (ক্ষমতাপ্রাপ্ত) নই। এসব নিয়ে নীতিনির্ধারক পর্যায়েও ভাবার দরকার আছে।

প্রশ্ন: জড়িতদের বিরুদ্ধে আপনারা কী ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন?

ডা. শাফায়াত: দেখুন, আইনের বিচ্যুতি হলে আমি চাইলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না; বড়জোর বিশেষজ্ঞ মতামত দিতে পারি। শাস্তি দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সুতরাং কোনো ব্যবস্থা নিতে গেলে ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে সমন্বয় করে সেখানে যেতে হয়। অনেক সময় তাদের সঙ্গে সময়ও মেলে না। এ জন্য সব মিলিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

সাতক্ষীরা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত

প্রশ্ন: জরায়ু অপারেশন করার ক্ষেত্রে প্রটোকল কী?

ডা. শাফায়াত: সত্যি বলতে, তেমন কোনো প্রটোকল নেই। এটা আসলে আমাদের ডাক্তারদের নীতিনৈতিকতার ওপরে অনেকটা নির্ভর করে। তবে যা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তাতে করে একজন এমবিবিএস ডাক্তার কতটুকু অপারেশন করতে পারবেন, হিস্টেরেক্টমি করতে কার পরামর্শ নেয়া লাগবে, কখন হিস্টেরেক্টমি করা যাবে- এসবের জাতীয় প্রটোকল করে সেটা উপজেলা পর্যায়ে দেয়া এবং তদারকির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এমনিতে আমাদের লোকবল খুব কম। তা দিয়ে সাতক্ষীরা থেকে ৬০-৭০ কিলোমিটার দূরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ক্লিনিকগুলো ধরা খুব কঠিন।

আরও পড়ুন: জরায়ু কর্তনকারী সেই ডাক্তাররা যা বলছেন

প্রশ্ন: কোনো নীতিমালা না থাকার মানে তো অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়া?

ডা. শাফায়াত: মুশকিল হচ্ছে, আমাদের এই নৈতিক বিষয়গুলো দেখার জন্য রেগুলেটরি সিস্টেম এখনও অত জোরদার হয়নি। এখন যদি কোনো অভিযোগ আসে, তাহলে সেটা বিএমডিসিতে দিতে হবে। সেটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

প্রশ্ন: তাহলে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে ‍যুক্ত চিকিৎসকদের ধরার উপায় কী?

ডা. শাফায়াত: টেকনিক্যাল পারসন হিসেবে ডাক্তারদের বড় স্বাধীনতা আছে। এটা প্রমাণ করা বেশ কঠিন হয় যে, অপারেশনটি অপ্রয়োজনীয় ছিল। ন্যাশনাল প্রটোকল সেভাবে ডেভেলপ করাও কঠিন।

যদি অপ্রয়োজনীয় কোনো অপারেশন করা হয়, রোগীর ভোগান্তি বা কাজেকর্মে অসুবিধা হয়, সে ক্ষেত্রে বিএমডিসি আলোচনা সাপেক্ষে জরিমানা, রেজিস্ট্রেশন স্থগিতের মতো কিছু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। আবার বড় ধরনের কোনো ভায়োলেশেন হলে আদালত প্রত্যক্ষ মামলা নিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দিয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি করতে পারে। সেই কমিটির রিপোর্টে অপরাধ প্রমাণিত হলে ধরন অনুযায়ী জরিমানা বা শাস্তি দিতে পারে আদালত। তবে সেটাও কতটুকু হবে, তা পেনাল কোডে উল্লেখ নেই। অপরাধের ‍গুরুত্ব পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।

তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি যতটুকু পর্যবেক্ষণে দেখেছি, টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলোর এখান থেকে সমাধান বের করা খুব কঠিন। ডাক্তাররা যা বলেন- রোগীরা সেটাই বিশ্বাস করেন। তাই সেবাদানকারী ডাক্তারদের নৈতিকতা এবং শুভবুদ্ধি দিয়ে কাজ করাটা জরুরি। পাশাপাশি রোগীদেরও সচেতন থাকতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর