নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে গেলেন ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে পরাজিত বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান।
মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আজ আমাদের মা (খালেদা জিয়া) মৃত্যুশয্যায় থেকে নির্বাচনে অংশ না নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি একজন জিয়ার সৈনিক হিসেবে সে নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। তাই দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ সমর্থন আর শ্রদ্ধা রেখে আমি এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলাম।’
সাখাওয়াত সরে গেলেও আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক তৈমূর আলম খন্দকার।
বুধবার দুপুরে প্রথমে মনোনয়ন জমা দেন তৈমূর আলম। কিছুক্ষণ পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে জমা দেন ফরম।
মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে তৈমুর বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিএনপির নেতা হিসেবে একমাত্র আমিই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার। ছবি: নিউজবাংলা
তৈমূর বলেন, ‘বিএনপি অনেক বড় একটা দল। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। এই বিএনপিকে অনেক কৌশল অবলম্বন করে চলতে হয়েছে। সিটি করপোরেশনকে পরিবর্তনের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের জনগণের পাশে অবস্থান এবং জনগণের জন্য এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে।’
গত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির অনেক প্রার্থীকে জেলখানায় থাকতে হয়েছে উল্লেখ করে তৈমূর বলেন, ‘অনেক প্রার্থীর বাড়িঘর লুট করা হয়েছে, অনেককে পেটানো হয়েছে। যাদের পেটানো হয়েছে তাদের মামলা পুলিশ নেয়নি। তাদের গায়েবি মোকদ্দমা দিয়ে বাড়িঘর ছাড়া করা হয়েছে।
‘এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বিএনপিকে রাজনীতি করতে হয়েছে কিন্তু বিএনপি কখনও কম্প্রমাইজ করেনি। আন্দোলন সংগ্রামের স্বার্থে বিএনপি কাজ করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দল পৃথিবীর সব জায়গায় কৌশল অবলম্বন করে। আমরা আমাদের অবস্থানে এগিয়ে যাচ্ছি। সময়মতো আপনারা বুঝবেন আমাদের অবস্থানটা কী। দল জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ শহর হতে হবে বায়ুদূষণ ও জলাবদ্ধতামুক্ত শহর। এ শহরে মানুষ নিরাপদে চলাচল করবে, রাস্তা হবে পরিষ্কার। সকল নাগরিক সুবিধা নগরবাসী পাবে। আমরা ২০০২ সালে যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম সে প্রস্তাবের ভিত্তিতে আমরা একটি সুন্দর সিটি করপোরেশন হিসেবে নারায়ণগঞ্জকে তৈরি করতে চাই।’
আইভীর প্রতিশ্রুতি
নির্বাচন কার্যালয় থেকে তৈমূর আলম খন্দকারসহ তার দলীয় নেতা-কর্মীরা চলে যাওয়ার পর সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
সেলিনা হায়াৎ আইভী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিটা মানুষের ব্যক্তিগত বা দলীয় কৌশল থাকতে পারে। তবে আমার দলের কৌশল সরাসরি নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে হবে৷ আমার দল আমাকে মনোনীত করেছে তাই নৌকা নিয়েই নির্বাচন করব৷ তবে নির্বাচনি মাঠে কে কোন প্রতীক নিয়ে আসবে সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। আমার আস্থা আমার জনগণ, আমাকে দীর্ঘদিন তারা দেখেছে, আমি তাদের জন্য কাজ করেছি, আমার বিশ্বাস জনগণ আমাকে ভোট দেবে৷’
বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এখানে প্রতীক মুখ্য বিষয় না, ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ৷ আমার মনে হয় নারায়ণগঞ্জে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে৷ কারণ ২০১১ সালে প্রথম যখন ইভিএমে নির্বাচন হয়েছিল, অনেকে অনেক কথা বলেছিল কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে৷ ইভিএমে সারা দেশে নির্বাচন হচ্ছে৷ আমি তখনও ইভিএমকে স্বাগত জানিয়েছি, এখনও স্বাগত জানাই এবং আমি জয়ের আশা করছি৷’
কেন সরে গেলেন সাখাওয়াত
বুধবার দুপুর ১টার দিকে ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছেন গতবারের পরাজিত বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান।
সাখাওয়াত বলেন, ‘আমি আশা করব আমার মতো নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সব সিনিয়র নেতারা এই নির্বাচন থেকে সরে আসবেন। আমি মনে করি আমাদের দলে যে পর্যায়ের ব্যক্তিরাই হোক এ নির্বাচন থেকে বিরত থাকবেন এবং দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে চলবেন।’
সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিপক্ষে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ভোটে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাখায়াত হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল।
‘আমি দলের নীতিনির্ধারক কমিটির সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, দল আগের সিদ্ধান্তে বহাল আছে। যদি কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। তবে স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থীর প্রতি তাদের দলীয় কোনো সমর্থন নাই। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কাজে আমি অংশগ্রহণ করব না। আমি মনে করি কোনো নেতা-কর্মীও অংশগ্রহণ করবেন না,’ যোগ করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুসারে আগামী ১৬ জানুয়ারি ইভিএম পদ্ধতিতে ২৭টি ওয়ার্ডের ভোট হবে। এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭। এর মধ্যে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৯ পুরুষ ভোটার ও ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৭ নারী ভোটার রয়েছেন। তাছাড়া চারজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন এই সিটিতে।