রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমির দক্ষিণ পাশে কয়েকজন কিশোর-কিশোরী প্রতীকী বধ্যভূমি তৈরি করে। যেভাবে দেশের বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে মেরে ফেলে যাওয়া হয়েছিল, সেই দৃশ্য তারা প্রদর্শন করে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ‘কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর’ এমন প্রতীকী বধ্যভূমি বানিয়ে ভিন্নমাত্রার এক প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের সেই ভয়াবহ দৃশ্যের আলোকে তারা কেউ শিক্ষক, কেউ বুদ্ধিজীবী, কেউ সাংবাদিক, কেউ চিকিৎসকসহ বিভিন্ন বেশে সেজে ইটের টুকরার ওপর নিথরভাবে পড়ে থাকে। তাদের পাশে দেখা যায় আপনজন হারা এক অসহায় নারীকে।
প্রতীকী বধ্যভূমির প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারেও এসেছি। আমাদের খুব ভালো লাগে এখানে অংশ নিয়ে। এর মাধ্যমে আমরা জাতিকে ইতিহাস জানাতে চাই।’
তাদের আরেকজন সানজিদা আক্তার বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর এই দিনে এ দেশের বুদ্ধিজীবীদের যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল সেটা আমরা এখানে জীবন্তভাবে তুলে ধরেছি। রাজাকাররা কীভাবে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের মেরেছিল সেটাই তুলে ধরেছি।’
প্রতীকী বধ্যভূমির বিষয়ে জানতে চাইলে খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন ভূইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলা জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের পক্ষ থেকে ঐতিহাসিক রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে একটি ‘প্রতীকী বধ্যভূমি’ তৈরি করেছি।
‘আশির দশক থেকে প্রতি বছর আমরা এই প্রতীকী বধ্যভূমি তৈরি করে থাকি। প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে আমরা এই প্রতীকী বধ্যভূমি উদ্বোধন করি। এর পরে সারা দেশে জেলা-উপজেলায় এটা পালন করা হয়,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতার লাল সূর্যকে। আমাদের স্বাধীনতার দুই দিন আগে এ দেশকে মেধাশূন্য করার জন্য, এ দেশকে রাজনীতিশূন্য করার জন্য, আমাদের দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের সেই পাকিস্তানের দালাল রাজাকার আলবদর আল-শামসরা বাসা থেকে ধরে এনে রায়েরবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বর্বরভাবে হত্যা করে তাদের ফেলে যায়।
‘তারা দেশে অসংখ্য বধ্যভূমি তৈরি করে। সেই শহীদদের স্মরণে আমরা এই প্রতীকী বধ্যভূমি তৈরি করি। আমরা প্রতীকী বধ্যভূমির মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, সেই রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।