স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিন দিনের সফরে বুধবার ঢাকায় আসছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। তার সঙ্গে থাকবেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। রামনাথ কোবিন্দের সফরকালীন দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
মঙ্গলবার দুপুরে ভারতের রাষ্ট্রপতির সফর নিয়ে আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে ১৫-১৭ ডিসেম্বর রামনাথ কোবিন্দ ঢাকা সফর করবেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাবেন। বিমানবন্দরে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার দেয়া হবে। এরপর তিনি সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন। সেখান থেকে তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যাবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের রাষ্ট্রপতি তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন ১৫ ডিসেম্বর। ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে মোমেন বলেন, ‘এ সফরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত থেকে বাকি টিকা পেতে কোনো ধরনের সন্দেহ নেই। ভারতে মহামারি ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ার ফলে টিকা আসা বন্ধ হয়েছে। দেশটি তাদের সুবিধামতেআ টিকা পাঠাবে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক ও সোনালি অধ্যায় চলছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে দুই দেশের ভিসা ধীরে ধীরে চালু করা হচ্ছে।
‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত একটি ট্যাংক ও একটি বিমান বাংলাদেশকে উপহার দেবে ভারত, এমনটি নিশ্চিত করেছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ,’ যোগ করেন মন্ত্রী।
‘ঢাকা সফরকালে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রপতি বৈঠক করবেন। সে সময় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত একটি টি-৫৫ ট্যাংক ও একটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান বাংলাদেশকে উপহার দেবেন। এই ট্যাংক ও বিমান প্রদর্শনীর জন্য জাদুঘরে রাখা হবে,’ যোগ করেন মন্ত্রী।
মোমেন জানান, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বাংলাদেশের ৫০তম বিজয় দিবস উদযাপনে যোগ দিতে ঢাকায় আসবেন।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ হবে।
ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের এটাই হবে বাংলাদেশে প্রথম সফর।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘এবারের সফরটি বিশেষ করে আনুষ্ঠানিক। এ সফরে কোনও চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা নেই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারত বাংলাদেশের প্রতিবেশী এবং অকৃত্তিম বন্ধু দেশ। বাংলাদেশ ও ভারত শুধু সীমান্তের সম্পর্কে আবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বন্ধুপ্রতীম এ দেশটির অকুন্ঠ সমর্থন দুইদেশের মধ্যে সুসম্পর্কের ভিত্তি রচনা করেছে।
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী, মুজিববর্ষের সমাপনী দিন উদ্যাপন এবং বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এই সফর করবেন। এ রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতের ফার্স্ট লেডি এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির কন্যা, ভারতের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, দুইজন সংসদ সদস্য, পররাষ্ট্র সচিবসহ বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা তার সঙ্গী হিসেবে যোগ দেবেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
সফরের প্রথম দিন, ১৫ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে স্বাগত জানাবেন। এসময় ভারতের রাষ্ট্রপতিকে বিমান বন্দরে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। এরপর তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করবেন। একই দিন দুপুরে তিনি ধানমন্ডি ৩২-এ অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন এবং জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন।
‘একই দিন বিকেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। এসকল সৌজন্য সাক্ষাতে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে বলে আমরা আশা করছি।’