বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অপ্রত্যাশিত লভ্যাংশের ‘ফাঁদে’ বিনিয়োগকারী

  •    
  • ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৯:৪৫

গত দুই মাসে চারটি কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বা অপ্রত্যাশিতভাবে লভ্যাংশ ঘোষণার পর শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলেও পরে বড় আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। তবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সচেতনতা কতটা, সে প্রশ্ন উঠে। হামিদ ফেব্রিক্স, প্রাইম টেক্সটাইল ও ফারইস্ট নিটিংয়ের একই ধরনের অভিজ্ঞতার পর আরামিট সিমেন্টের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। অপ্রত্যাশিতভাবে শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ ঘোষণার পর শেয়ারদর একদিনেই বাড়ল ১৮.৫০ শতাংশ, টাকার অঙ্কে ৬ টাকা ৪০ পয়সা।

অপ্রত্যাশিত বা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি লভ্যাংশের খবরে অস্বাভাবিক হারে শেয়ারদর বেড়ে যাওয়ার পর সম্প্রদি তিনটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ব্যাপক লোকসান করেছে বিনিয়োগকারীরা। এই তিক্ত অভিজ্ঞতার পরও আরও একটি কোম্পানির অপ্রত্যাশিত লভ্যাংশ ঘোষণায় সেই তিনটির মতোই শেয়ারদর দিয়েছে লাফ।

গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে চার বছর পর মুনাফায় ফিরেও লভ্যাংশ দেয়নি আরামিট সিমেন্ট। অথচ এবার লভ্যাংশ পাওয়ার সম্ভাবনায় শেয়ারদর বাড়ছিল তরতর করে। গত এক বছরে শেয়ারমূল্য সর্বনিম্ন ১৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৬৪ টাকা পর্যন্ত উঠে।

গত ২৮ অক্টোবর লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার দিন শেয়ারদর ছিল ৫৯ টাকা ১০ পয়সা। পরের কর্মদিবসে মূল্যসীমা না থাকার সুযোগে এক লাফে শেয়ারদর প্রায় ২৫ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৪৫ টাকা ৫০ পয়সা।

এরপর গত ১৮ নভেম্বর প্রথম প্রান্তিকে বড় লোকসান দেয়ার পরিসংখ্যান জানানোর পর শেয়ারদর আবার কমতে কমতে ২ ডিসেম্বর ৩০ টাকা ১০ পয়সায় নামে।

রোববার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ হিসেবে ৫ শতাংশ নগদ, অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যেটি ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশ হয় সোমবার।

এই খবরে শেয়ারদর দেয় লাফ। আগের দিন দর ছিল ৩৪ টাকা ৬০ পয়সা। দিনের লেনদেন শুরু হয় ১৯ শতাংশ বেড়ে ৪১ টাকা ৫০ পয়সায়।

দিনভর দর উঠানামা করে ৩৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ৪২ টাকা ৭০ পয়সায়। দিন শেষে দাম স্থির হয় ৪১ পয়সায়। বাড়ে ৬ টাকা ৪০ পয়সা বা ১৮.৫০ শতাংশ।

কোম্পানিটি ২০১৬ সালের পর এই প্রথম লভ্যাংশ ঘোষণা করল কোম্পানিটি।

পতনমুখি আরামিট সিমেন্টের শেয়ারদর অন্তর্বর্তী লভ্যাংশের ঘোষণায় এভাবে বেড়েছে

ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা প্রধান দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লভ্যাংশ দিলেই সেই কোম্পানির শেয়ার কিনতে হয়, এমন নয়। আবার কোম্পানি এক বছর লাভ করলে পরের বছর লাভ করবে, এই ধারণাও ঠিক নয়। কোম্পানি কী উৎপাদন করছে, তাদের পণ্যের বাজার কেমন, ভবিষ্যৎ কী, তা বিবেচনা করে শেয়ার কেনা উচিত।’

দর এক দিনে প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ার দিন শেয়ার বিক্রিও হয়েছে বেশি। সারা দিনে হাতবদল হয়েছে ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৯৯২ টি। আগের দিন লেনদেন ছিল ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৫৩টি। তারও আগের দিন লেনদেন ছিল ৯০ হাজারের কিছু বেশি।

হামিদ ফেব্রিক্স

হামিদ ফেব্রিক্স শেষ অর্থবছরে শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ১ টাকা ৭৫ পয়সা। তারপরও শেয়ারধারীতের রিজার্ভ থেকে ৫০ পয়সা হারে লভ্যাংশ দিয়েছে। এমন খবরেও উত্থান ছিল কোম্পানিটির শেয়ার দর।

২৭ অক্টোবর লভ্যাংশ ঘোষণার দিন কোম্পানির শেয়ার দর ছিল ১৮ টাকা ৩০ পয়সা। পরের দিন শেয়ার দরে কোনো সীমা না থাকায় সেখান থেকে এক লাফে বাড়ে দর ৬৭.২০ শতাংশ। দিন শেষে দাম স্থির হয় ৩০ টাকা ৬০ পয়সায়।

এ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে পরের কয়েক দিন দাম আরও বাড়ে। একপর্যায়ে গত কয়েক বছরের সর্বোচ্চ দাম ৩৮ টাকা ৫০ পয়সায় পৌঁছে যায়।

তবে গত ১০ নভেম্বর থেকে টানা কমছে দাম। সোমবার শেয়ার দর স্থির হয়েছে ২৪ টাকা ৩০ পয়সায়। অর্থাৎ লভ্যাংশ ঘোষণার পর দিন যে দাম ছিল, সেই দামের চেয়েও নিচে নেমে গেছে।

সর্বোচ্চ দরে যারা শেয়ার কিনেছিলেন, তাদের লোকসান এখন শেয়ার প্রতি ১৪ টাকা ২০ পয়সা।

লভ্যাংশ ঘোষণার পর হামিদ ফেব্রিক্সের শেয়ারদর এভাবে লাফ দিয়ে পরে কমে যায়

আবার দর বাড়ার সুযোগে কোম্পানির প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা হাতের হাতে থাকা শেয়ারের অর্ধেকের বেশি বিক্রি করে বেরিয়ে গেছে। গত ৩১ অক্টোবর মোট শেয়ারের ৪২.৮২ শতাংশ শেয়ার ছিল তাদের হাতে। এক মাস পর ৩০ নভেম্বর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হিস্যা কমে হয়েছে ২০.০৬ শতাংশ।

অন্যদিকে অক্টোবর শেষে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে শেয়ার ছিল ৫.৬৭ শতাংশ। সেটি বেড়ে এখন হয়েছে ২৮.৪৩ শতাংশ।

আবার শেয়ারদর যখন বাড়ছিল, তখন লেনদেনও হয়েছে ব্যাপক। এখন দর কমে আসার পর ক্রেতা কমে এসেছে।

হামিদ ফেব্রিক্সের শেয়ারে লভ্যাংশ ঘোষণার আগের নয় মাসে কখনও দিনে ২০ লাখ শেয়ার হাতবদলের রেকর্ড পাওয়া যায়নি। এই সময়ে মাত্র একদিন সর্বোচ্চ ১৭ লাখ শেয়ার একদিনে হাতবদলের হিসেব পাওয়া যায়।

লভ্যাংশ ঘোষণার দিন ২৭ অক্টোবর শেয়ার হাতবদল হয়েছিল ৫০ হাজার ৬৩২টি শেয়ার। এই ঘোষণা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে আসার দিন শেয়ার হাতবদল হয় এক কোটি ৪১ লাখ ৪৩ হাজার ১৯৩টি।

একদিন পরই কোটি শেয়ার হাতবদলের সংখ্যা নেমে আসে ৪০ লাখে। তারপর একদিনে সর্বোচ্চ ৫৮ লাখ ৯৫ হাজার শেয়ারের রেকর্ড পাওয়া গেছে।

প্রাইম টেক্সটাইল

হামিদ ফেব্রিক্সের মতোই অভিজ্ঞতা হয় প্রাইম টেক্সটাইলে। এই কোম্পানিটি তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত বড় লোকসানে ছিল। চতুর্থ প্রান্তিকে অস্বাভাবিক আয় দেখিয়ে শেয়ার প্রতি ৬২ পয়সা মুনাফা করার কথা জানানো হয়। আর এর মধ্যে ২০ পয়সা বিনিয়োগকারীদেরকে লভ্যাংশ হিসেবে দেয়ার সিদ্ধান্ত কোম্পানি নেয় ১ নভেম্বর।

হামিদের মতোই পরিস্থিতি হতে পারে, এই প্রত্যাশ্যায় আগের কয়েক দিন ধরেই শেয়ারদর বাড়ছিল কোম্পানিটির। ২৫ অক্টোবর শেয়ারদর ছিল ১৯ টাকা ৪০ পয়সা। ৫ কর্মদিবস পর লভ্যাংশ ঘোষণার দিন দাম দাঁড়ায় ২৪ টাকা ২০ পয়সা।

প্রাইম টেক্স লভ্যাংশ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় লাফ দিয়েছিল একদিনই। এখন দর লভ্যাংশ ঘোষণার আগের চেয়ে কমে গেছে

সেই বিকেলে ঘোষণা আসার পরের দিন ছিল না মূল্যসীমা। সেদিন দাম উঠে ৩২ টাকা পর্যন্ত। তবে দিন শেষ করে ২৯ টাকা ৬০ পয়সায়।

হামিদ ফেব্রিক্সের লভ্যাংশ ঘোষণার পর বেশ কয়েকদিন দাম বেড়েছে। কিন্তু প্রাইমের ক্ষেত্রে ওই এক দিনই বাড়ে।

এখন শেয়ারদর নেমে এসেছে ২৩ টাকা ৯০ পয়সায়। অর্থাৎ যারা সর্বোচ্চ দরে কিনেছিলেন তারা শেয়ার প্রতি ৮ টাকা ১০ পয়সা করে লোকসানে আছেন।

হামিদ ফেব্রিক্সের মতোই প্রাইমের ক্ষেত্রেও দেখা যায় দর বাড়ার দিন লেনদেন ছিল বেশি। লভ্যাংশ ঘোষণার দিন ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৯৯৪টি শেয়ার হাতবদল হয়েছিল। এই ঘোষণার পর প্রান্তসীমা না থাকার দিন বেশি দামে হাতবদল হয় ৫১ লাখ ৯৮ হাজার ৪০৩টি শেয়ার। গত দুই বছরেও কোনো এক দিনে এত বেশি শেয়ার লেনদেন হয়নি।

সোমবার ‘কম দামে’ শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৯১টি।

ফারইস্ট নিটিং

এই কোম্পানিটি লভ্যাংশ দেবে না-এমন ধারণা ছিল না। তবে লভ্যাংশের হারে চমৎকৃত হয়েছিল বিনিয়োগকারীরা।

গত ৭ অক্টোবর বিকেলে লভ্যাংশ ঘোষণার আগে ওই দিন শেয়ার লেনদেন হয় ১৭ টাকা ৯০ পয়সায়। সন্ধ্যায় জানা যায়, শেয়ার প্রতি ৭৯ পয়সা আয় করে তারা এক টাকা হারে লভ্যাংশ দেবে।

দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে ১০ অক্টোবর যেদিন মূল্যসীমা ছিল না, সেদিন শেয়ারদর এক লাফে বেড়ে যায় ২৫ টাকা ৩০ পয়সা।

আয়ের চেয়ে বেশি লভ্যাংশের ঘোষণায় ফারইস্ট নিটিংয়ের শেয়ারদর এভাবেই বেড়ে পরে কমে

তবে এই বেশি দামে শেয়ার কিনে এখন হতাশ বিনিয়োগকারীরা। শেয়ার দর কমে এখন দাঁড়িয়েছে ১৬ টাকা ৬০ পয়সা।

অর্থাৎ সর্বোচ্চ দামে যারা কিনেছেন তারা শেয়ার প্রতি লোকসানে আছেন ৮ টাকা ৭০ পয়সা।

এই কোম্পানিটির শেয়ারও দর বাড়ার পর বেশি হাতবদল হয়েছে। লভ্যাংশ ঘোষণার দিন ৭ অক্টোবর কোম্পানিটির ৭ লাখ ২৫ হাজার ৪৬০টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। পরের দিন এই লভ্যাংশের ঘোষণায় মূল্যসীমা না থাকার দিন বেশি দামে ১০ অক্টোবর হাতবদল হয়েছে ১ কোটি ৯১ লাখ ৯৬ হাজার ১০টি শেয়ার।

দাম কমার পর সোমবার হাতবদল হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ৩টি।

এ বিভাগের আরো খবর