স্ত্রীকে কথিত অপহরণের দায় থেকে খালাস পেলেন দলিত সম্প্রদায়ের তুষার দাস ওরফে রাজ। স্ত্রী সুস্মিতা দেবনাথ অদিতি দীর্ঘ আইনি লড়াই চালিয়ে স্বামীকে ‘দায়মুক্ত’ করতে পেরেছেন।
সুস্মিতাকে অপহরণের অভিযোগে ২০১৯ সালে শরীয়তপুরের তুষার দাস ওরফে রাজকে ১৪ বছর কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। তবে রোববার তাকে খালাস দিয়েছে হাইকোর্ট। কথিত অপহরণ ও বিয়ের সময় অদিতি নাবালিকা ছিলেন এমন দাবির বিষয়টি হাইকোর্টে প্রমাণ হয়নি।
আপিল শুনানি শেষে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো.আতোয়ার রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।
বর্ণপ্রথার রোষানলে পড়ে চার বছরের বেশি সময় বিস্তর হয়রানির শিকার হয়েছেন তুষার-অদিতি। অবশেষে তাদের প্রেম স্বীকৃতি পেল হাইকোর্টে।
আদালতে বিবাদির আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
শরীয়তপুরের ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে সুস্মিতা অদিতি ভালোবেসে ২০১৭ সালে বিয়ে করেন তুষারকে। তবে অদিতির বাবা-মা এই প্রেম মেনে নিতে পারেননি। আর তাই হরিজন সম্প্রদায়ের তুষারের বিরুদ্ধে তারা অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা করেন। গ্রেপ্তারের পর প্রথমে আট মাসের মতো জেল খাটেন তুষার।
এ মামলায় বিচার শেষে আসামি তুষারকে ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক। তবে, ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তুষারকে সে অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ে বলা হয়, তুষার দাস ভিকটিম সুস্মিতাকে অপহরণের পর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে নিয়ে বিয়ে করেন। ‘শিশু’ সুস্মিতাকে এভাবে বিয়ে করা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বিচারক রায়ে আরও বলেন, তুষার ভিকটিমকে ধর্ষণ করেছেন মর্মে চাক্ষুস কোনো সাক্ষী নেই। তবে, সুস্মিতা তার জবানবন্দিতে স্বেচ্ছায় আসামিকে বিয়ে করেছেন ও বিয়ের পর তার সঙ্গে ১১ দিন ঘর-সংসার করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। ওই বছরের ৩ মে সুস্মিতা একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন।
এ রায়ের পর তুষারকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তিনি আপিল করেন। তার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে হাইকোর্ট তুষারকে জামিন দেয়। গত ৭ আগস্ট কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান তুষার।
হাইকোর্ট রোববার তুষারকে খালাস দেয়ার পর স্ত্রী সুস্মিতা বলেন, ‘এ রায়ে আমরা খুশি। এর মধ্য দিয়ে আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি।’