চার বছর আগে আইনজীবী মায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান ১৫ বছর বয়সী মুক্তি আলিফ বেলী। সেখানে একটি স্কুলে পড়াশোনা করছিলেন তিনি। সম্প্রতি তার নানি অসুস্থ হলে তাকে দেখতে আসেন নারায়ণগঞ্জে। ২২ ডিসেম্বর তার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল।
শুক্রবার দুপুরে বাবার সঙ্গে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের চাষাঢ়া এলাকায় ট্রাকচাপায় বাবা ও মেয়ে নিহত হন। আহত হন রিকশাচালক। নিহতরা হলেন ৪০ বছর বয়সী আলতাব হোসেন ও তার ১৯ বছর বয়সী মেয়ে মুক্তি আলিফ বেলী। তাদের বাড়ি সোনারগাঁয়ের শম্ভুপুরা এলাকায়।
এ খবর শুনে সেখানে ছুটে যান বেলীর মাসহ পরিবারের স্বজনরা। মরদেহ দুটি বহনকারী ভ্যানের পেছনে ছুটতে ছুটতে বেলীর মা যান নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গের সামনে। সেখানে স্বজনদের আর্তনাদ ও আহাজারিতে হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরাও কেঁদেছেন। মর্গের ভেতরে বাবার পাশেই রাখা হয় মেয়ের মরদেহ। একমাত্র মেয়ে মুক্তি আলিফ বেলী ও তার বাবা ওষুধ ব্যবসায়ী আলতাব হোসেনকে হারিয়ে আহাজারি করেন নারায়ণগঞ্জ আদালতের আইনজীবী মা আয়েশা সিদ্দিকী।
বেলীর বড় খালা মাহমুদা সিদ্দিকী নিউজবাংলাকে জানান, ‘বেলী ছিল আমার বোনের একমাত্র মেয়ে। ছোট বেলাতে আমরা অনেক আদরে এ পর্যন্ত বড় করেছি। চার বছর আগে বেলী ওর মায়ের সঙ্গে আমেরিকা চলে যায়। সেখানে একটি স্কুলে পড়ালেখা করছিল। কিছুদিন ধরে আমার মা (বেলীর নানি) অসুস্থ হওয়ায় আমেরিকা থেকে তারা ৩ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের জামতলায় আমাদের বাড়িতে আসে। তাদের ফিরে যাওয়ার কথা ২২ ডিসেম্বর।’
তিনি বলেন, ‘বেলীর বাবা থাকত সোনারগাঁয়ের শম্ভুপুরা এলাকায়। সেখানে তিনি ব্যবসা করতেন। মেয়ে আসায় প্রায় প্রতিদিন মেয়েকে দেখে যেত আলতাব। শুক্রবার তার বাবার সঙ্গে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য বেলীকে বাসা থেকে আমি সাজিয়ে দিয়েছে, এরপর ওর বাবা এসে মেয়েকে নিয়ে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর শুনি, ওরা নিহত হয়েছে। আমার বেলী নাই।’
নিহত আলতাব হোসেনের বন্ধু মজিবুর রহমান বলেন, ‘গত কয়েক বছর আগে আলতাব হোসেনের প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হলে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করে সোনারগাঁয়ের শম্ভুপুরায় থাকতেন। সোনারগাঁয়ে ওধুষের দোকান দিয়ে সেখানে ব্যবসা করছিলেন তিনি। মেয়ে দেশে আসার পর থেকে দিন-রাত তার কথা বলত আলতাব। সে তার মেয়েকে অনেক আদর করত। কারণ তার একটি মাত্র সন্তান ছিল।’
তিনি বলেন, 'যে গাড়ি আলতাব ও তার মেয়েকে চাপা দিয়েছে, আমরা ওই গাড়ির চালকের শাস্তি চাই।'
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ‘রিকশাটি জামলা তলা থেকে সড়কের কলেজ রোডের মোড় হয়ে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কে ওঠে। ওই সময় উল্টো দিক থেকে আসা দ্রুতগতির ইটভর্তি একটি ট্রাক রিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। তখন রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে বাবা-মেয়ে। তাদের মাথার ওপর ট্রাকের চাকা উঠিয়ে দেয় চালক। এতে আলতাবের মাথা গলে যায় ও বেলী মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের একটি ইজিবাইকে উঠিয়ে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করে স্থানীয়রা। তবে ততক্ষণে তার শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, বাবা-মেয়েকে চাপা দেয়ার পর ট্রাকচালক পালানোর চেষ্টা করে, তখন স্থানীয়রা তাকে আটক করে পাশে থাকা পুলিশ বক্সে নিয়ে যায়। এরপর সেখান থেকে পুলিশ এসে খবর দেয় ফায়ার সার্ভিসকে। তারা এসে লাশ নিয়ে যায় হাসপাতালের মর্গে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন নিউজবাংলাকে জানান, ট্রাকের চাকার নিচ থেকে বাবার ও সড়কের পাশ থেকে মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ চালকসহ ট্রাকটি আটক করেছে।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান নিউজবাংলাকে জানান, ট্রাকচালকে থানায় আনা হয়েছে। নিহতের মরদেহ মর্গে রয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। আহত রিকশাচালককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।