কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার খাতা যথাযথ মূল্যায়ন না করার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরীর কাছে এ অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের এবং ইংরেজি বিভাগের একমাত্র স্বর্ণপদক জয়ী শিক্ষার্থী মেরিয়া নুসরাত সরকার।
বৃহস্পতিবার বিকেলে লিখিত অভিযোগ জমা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দপ্তর।
অভিযোগ পত্রে ওই সাবেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘আমার পরীক্ষা যথেষ্ট ভালো হয়েছিল। তবে আমাকে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। আপনি জেনে অবাক হবেন যে, লিখিত পরীক্ষার পর কয়েকজন প্রার্থী মাত্র দুইটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল বলে আমাকে জানায়। অথচ তারাও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত একজন শিক্ষার্থী হিসেবে মনে করি পরীক্ষা যথেষ্ট ভালো দেয়ার পরও আমার খাতা ইচ্ছাকৃতভাবে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় নি।’
মেরিয়া নুসরাত সরকার কুবির ইংরেজি বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ইংরেজি বিভাগ থেকে প্রথম এবং একমাত্র স্বর্ণপদক পেয়েছেন। ইতোমধ্যে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় বছর ধরে তিনি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া তার একাধিক মৌলিক প্রকাশনাও রয়েছে।
এদিকে, স্বর্ণপদক জয়ী একজন শিক্ষার্থীকে লিখিত পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ দেখানোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ক্ষোভ জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক পদের এক শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকেই একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ফলাফল করেছে। আমরাই তাকে শ্রেষ্ঠত্বের খেতাব দিয়েছি। আবার আমরাই তাকে লিখিত পরীক্ষায় বাতিল ঘোষণা করছি। এর মতো লজ্জাজনক কর্মকাণ্ড আর কিছু হতে পারে না।’
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সহকারী অধ্যাপক পদের আরেক শিক্ষক বলেন, ‘দীর্ঘদিন পড়াশোনার বাইরে থেকেও কোনো শিক্ষকের আত্মীয়তার সূত্রে নিয়োগ পেয়েছে এমন শিক্ষকও তো আমাদের মধ্যে রয়েছে। যে শিক্ষার্থীর কথা হচ্ছে সে তো একজন স্বর্ণপদক জয়ী শিক্ষার্থী এবং সে একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে পড়াচ্ছেও। তাহলে তাকে লিখিত থেকে বাদ দেয়ার বিষয়টি চক্রান্ত ছাড়া আর কিছু দেখছি না। এরকম চলতে থাকলে শিক্ষার্থীরা আর পড়ালেখার দিকে আগ্রহী হবে না।’
এ বিষয়ে ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. বনানী বিশ্বাস বলেন, ‘লিখিত পরীক্ষার সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম না। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। আর এগুলো গোপনীয় বিষয় তাই আমি কিছু বলতে পারছি না।’
অভিযোগের বিষয়ে কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শরীফুল করীম বলেন, ‘রিটেন যে পরীক্ষা হয়েছে ওইটার খাতা তো কোডিং করে হয়েছে। কারও নাম, রোল নম্বর দিয়ে হয়নি। তাই বিষয়টা অন্যভাবে চিন্তা করা সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।’
এ বিষয়ে কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি লিখিত পরীক্ষার স্বচ্ছতার কথা ব্যাখ্যা করে পরীক্ষার বাছাই পদ্ধতি নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠতে পারে না বলে দাবি করেন।