বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিএনজির মিটার ‘জাদুঘরে’

  •    
  • ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৯:৩৩

রাজধানীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলে আইন-কানুনের কোনো তোয়াক্কা নেই। সরকার নির্ধারিত ভাড়া এখানে পুরোমাত্রায় অকার্যকর। কোনো অটোরিকশাই আর মিটারে যায় না। এ ব্যাপারে আইন আছে। প্রয়োগের নজির খুব একটা নেই।

সবুজ রঙের সিএনজি অটোরিকশা। মিটার আছে, কিন্তু ভাড়া নির্ধারণে বহু বছরে সেগুলো একবারও ব্যবহার হয়নি। অটোচালকরা কম দূরত্বের গন্তব্যে যেতে চান না।

সবুজ অটোরিকশার বাইরে রুপালি রঙের কিছু সিএনজি অটোরিকশা ভাড়ায় চলে রাজধানীতে। পেছনে লেখা প্রাইভেট। ব্যক্তিগত কাজের জন্যে কিনে অবসরে ভাড়ায় চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে এগুলোকে। কিন্তু বাস্তবে এগুলো পূর্ণকালীন বাণিজ্যিকভাবে চলছে। ট্রাফিক পুলিশ এদের ব্যাপারে দেখেও না দেখার ভান করে।

বুধবার সকালে রাজধানীর তালতলা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন গৃহবধূ হামিদা বানু। সঙ্গে তার স্বামী আলী হোসেন পেটের ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। মোহাম্মদপুরের একটি ক্লিনিকে যাবেন ডাক্তার দেখাতে।

নিউজবাংলাকে হামিদা বানু বলেন, ‘এক ঘণ্টা ধরে সিএনজি খুঁজছি। এখানে অনেক সিএনজি। কেউ যাবে না। বেশি ভাড়া দেয়ার কথা বলা হলে তাতেও রাজি হলো না।’

রাজধানীতে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে যাত্রীদের এমন বাগবিতণ্ডা অহরহ চলছে। সিএনজিচালকদের কাছে রীতিমতো জিম্মি সাধারণ যাত্রীরা।

যাত্রীদের অভিযোগ, রাজধানীতে একটি সিএনজি অটোরিকশাও মিটারে চলাচল করছে না। অনেক সিএনজিতে মিটার নষ্ট। আবার মিটার গাড়িতে লাগানো থাকলেও চালকরা গন্তব্যে যেতে চান নিজের খেয়ালখুশিমতো।

তবে চালকরা বলছেন, অটোরিকশার মালিকরা সরকারি নির্দেশনার চেয়ে জমার টাকা বেশি নেয়ায় বাধ্য হয়ে তারা বেশি ভাড়া চাইছেন। মিটারে গেলে তাদের পোষায় না।

বিআরটিএ এর তথ্য অনুযায়ী, মালিকদের জমা রোজ ৯০০ টাকা, কিন্তু সরকারি এই নির্দেশ উপেক্ষিত।

রাজধানীর মগবাজারের সিএনজিচালক তাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মালিককে ১ হাজার টাকা জমা দিই। এর বাইরে রোজ গ্যারেজভাড়াসহ অন্যান্য খরচ হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা।’

মিটারে ভাড়া নেন না কেন, জানতে চাইলে সাফ জবাব, ‘পোষায় না’। তার ভাষ্য, গত দুই বছরে গ্যাসের দাম বেড়েছে। নিত্যপণ্যসহ সব কিছুর দাম বেড়েছে। মিটারে চালালে ঢাকা শহরে চলাই দায় হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে ৯০ শতাংশ সিএনজি অটোরিকশা মিটারে চলে না। মিটারের চাইতে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়।

এই চিত্রই বলে দেয় এ খাতে চরম নৈরাজ্য চলছে। নানা চেষ্টার পরও সিএনজি পরিবহণে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারেনি সরকার। সিএনজি অটোরিকশায় যে মিটার ব্যবস্থা, তা এখন ‘জাদুঘরে’ চলে গেছে।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিএনজিচালকরা আইন মানতে চান না। আমরা তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। মিটারে না চালালে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট জরিমানা করছে। সার্জেন্টরাও মামলা করছেন।’

বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইনের ৩৪-এর ৩ এবং ৪ ধারায় ‘অতিরিক্ত’ ভাড়া আদায়ের দায়ে অনধিক ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জনসেবার অংশ হিসেবে আমরা ‍সিএনজির চালককে বলি মিটারে চালাতে, কিন্তু তারা কথা না শুনলে তেমন কিছু করার থাকে না। কারণ আইনে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলা নেই। যে কারণে সিএনজিচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না।’

তিনি আরও বলেন, সিএনজি যান্ত্রিক যানবাহন না। আবার অযান্ত্রিকও বলা যায় না। ফলে এখানে একটা বিভ্রান্তি রয়েছে। চালকদের মিটারে চালাতে বাধ্য করতে হলে তাদের আইনি কাঠামোর আওতায় আনতে হবে।

মাঠপর্যায়ে ট্রাফিক সার্জেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনো যাত্রী যদি বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ করে, তা হলে চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

বিজয় সরণি রোডে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মিটার ছাড়া গাড়ি চালানো সরকারি আদেশ লঙ্ঘনের শামিল। এই অপরাধে বিদ্যমান আইনের ৯১ এর ১ ধারায় চালককে প্রথমবার ১ হাজার টাকা এবং পরবর্তী ধাপে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়।’

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘আইন আছে, প্রয়োগ নেই। ১০টা সিএনজি ধরে যদি জরিমানা করা হয়, আর সেই খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়, তাহলে সব চালকই আইন মানতে বাধ্য হবে।’

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাইভেট লেখা সিলভার রঙের সিএনজিগুলোর বেশির ভাগেরই মিটার নেই। এগুলো বাণিজ্যিকভাবে চালানোর কথা নয়। তারপরও ট্রাফিক সার্জেন্টদের ‘ম্যানেজ’ করে চলছে।

২০০৩ সালের জানুয়ারি থেকে যাত্রীদের জন্য ঢাকায় সিএনজি অটোরিকশা চালু করা হয়।

সিএনজি অটোরিকশার নির্ধারিত ভাড়া প্রথম ২ কিলোমিটার ৪০ টাকা। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটার ১২ টাকা। এ ছাড়া যানজট হলে তার জন্য ওয়েটিং চার্জ প্রতি মিনিটে ২ টাকা।

বিআরটিএর পরিসংখ্যান মতে, বর্তমানে ঢাকা শহরে ২০ হাজার ৬৩৭টি সিএনজি আছে।

এর মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন করেছে ১৩ হাজার। অবশিষ্ট সিএনজি প্রাইভেট। আর সারা দেশে সিএনজি অটোরিকশা চলছে ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৯টি।

যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী দাবি করেন, ঢাকার বাইরে যেসব সিএনজি অটোরিকশা চলছে তার অর্ধেকেরই নিবন্ধন নেই।

সিএনজি অটোরিকশার দাম এত বেশি কেন?

চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে একটি সিএনজি অটোরিকশার দাম ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা। এর কারণ ২০০৩ সালের পর থেকে নতুন অটোরিকশার নিবন্ধন বন্ধ রেখেছে সরকার। ফলে চাইলেও কেউ নতুন গাড়ি নামাতে পারছে না। এতে ঢাকা শহরে সিএনজি অটোরিকশার সংকট রয়েছে।

প্রতিটি অটোরিকশার আয়ুষ্কাল ধরা হয় ১৫ বছর। ২০০৩ সালে যেসব গাড়ির নিবন্ধন দেয়া হয়, তার মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালে। ওই বছর পুরাতন সব সিএনজি প্রতিস্থাপন (রিপ্লেসমেন্ট) করা হয়। মূলত সেই সব গাড়ি এখন রাস্তায় চলছে।

শুরুতে বিআরটিএ একটির দাম নির্ধারণ করে দেয় ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। সেই গাড়ি এখন ১৫ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

এ বিভাগের আরো খবর