বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বুক খালি করি তিনটা ছাওয়াই চলি গেল’

  •    
  • ৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৫:২৩

বাবা রেজওয়ান হোসেন বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়া গেল। রিকশা চালেয়া কষ্ট করি সংসার চলেবার নাগে। তারপরও সন্তানগুলাক মানুষ করিছি। আইজ থাকি এ্যালা কায় মোক আব্বা করি ডাকাইবে।’

লিমা, মিনা ও মোমিনুর তিন ভাই-বোন বড় হয়েছে নানা-নানির কাছে। ট্রেনে কাটা পড়ে তাদের নিহত হওয়ার খবরে জামাতা রেজওয়ান হোসেনের বাড়িতে ডোলাপাড়া গ্রাম থেকে ছুটে যান শ্বশুর মজির আলী ও শাশুড়ি মোর্শেদা বেগম।

শিশুদের নানি মোর্শেদা বেগমের সঙ্গে বুধবার দুপুরে কথা হয় নিউজবাংলার প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘আট বছর বয়সী লিমা আক্তার, সাত বছর বয়সী মিনা আক্তার ও চার বছর বয়সী মোমিনুর রহমান বড় হয়েছে আমার ওখানে। তাদের না দেখে আমি থাকতে পারি না।

‘বড় মেয়ে লিমা যখন মায়ের পেটে তখন তাকে রেখে জামাই ঢাকায় চলে যান। জন্মের পর থেকে ও বড় হয়েছে আমার ওখানে। লিমার মতো মেজো নাতনি মিনা ও সবার ছোট মোমিনুরও বড় হয় আমার বাড়িতে।’

কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘এভাবে তারা চলে যাবে, ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। একটি-দুটি নয়, তিন তিনটি সন্তান সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যাবে- এটা মেনে নেয়া কি সম্ভব।’

শিশুদের দাদা আবুল কাশেম বলেন, ‘কাজ শেষে যখনই বাড়ি ফিরি তখনই সবাই দৌড়ে এসে জাপটে ধরত। এ্যালা কায় এই রকম করি ধরিবে। বুকের ধন এইভাবে ফাঁকা হয়া গেল।’

নিহত শিশুদের মা-বাবা দুজনই বাইরে কাজ করেন।

প্রতিবেশী সাবিনা ইয়াসমিন জানান, বাবা-মা বের হয়ে যাওয়ার পর থেকে ছোট ভাই-বোনদের দেখাশোনা করত লিমা। বুধবার তাদের অনুপস্থিতে এ ঘটনা ঘটেছে।

বাবা রেজওয়ান হোসেন বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়া গেল। রিকশা চালেয়া কষ্ট করি সংসার চলেবার নাগে। তারপরও সন্তানগুলাক মানুষ করিছি। আইজ থাকি এ্যালা কায় মোক আব্বা করি ডাকাইবে।’

লিমা আকতার দ্বিতীয় শ্রেণিতে এবং মেজো মেয়ে মিনা আকতার ব্র্যাকের স্কুলে পড়াশোনা করত।

দাদি মিনি বেগম বলেন, ‘আইজ সকালে ভাগা পিঠা বানাইছি। খাবার জন্যে ছাওয়াগুলোক কতবার ডাকানু, কাহো আইসেছে না। পরে খবর পানু ট্রেনেত কাটা পড়িছে।’

আসরের নামাজের পর কুন্দপুকুর ইউনিয়নের মনসাপাড়া এলাকার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে তিন ভাই-বোনকে। এ ছাড়া নিহত শামীম হোসেনকেও দাফন করা হবে স্থানীয় কবরস্থানে।

নিহত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে গেছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহারসহ আরও অনেকে।

প্রতিবেশী শাহানা বেগম বলেন, ‘রেলক্রসিং অরক্ষিত। ঠিক থাকলে বাচ্চারা ওখানে যেতে পারত না। তা ছাড়া ট্রেন আজ হুইসেল বাজায়নি। মৃত্যুর ঘটনায় রেল বিভাগ দায় এড়াতে পারে না।’

সৈয়দপুর জিআরপি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান বিশ্বাস বলেন, ‘রেলের চলাফেরা করা, রেলে বসা, রেলে ঘোরাফেরা করা নিষিদ্ধ। আমরা সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করছি।’

‘ট্রেনের হুইসেল বাজানো হয়নি এমন অভিযোগ আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানাব’- বলেন আব্দুর রহমান।

বুধবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে নীলফামারীর কুন্দপুকুর ইউনিয়নের মনসাপাড়া এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে তিন ভাই-বোনসহ চারজনের মৃত্যু হয়।

এ বিভাগের আরো খবর