‘করোনা সুরক্ষায় বিভিন্ন দেশে টিকার বুস্টার ডোজ দেয়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের পেক্ষাপটে এই বুস্টার ডোজ প্রয়োগ করাটা হবে অনৈতিক। এটাকে অবৈজ্ঞানিকও বলা যায়।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান খসরু এমনটা মন্তব্য করেছেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ‘কোভিড-১৯, ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন ডেল্টা-ওমিক্রন’- বিজ্ঞান, নৈতিকতা ও বৈষম্য… বিষয়ক এক সেমিনারে তিনি একথা বলেন।
ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে নিবন্ধিত হয়েছে মাত্র ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ। নিবন্ধন ছাড়া প্রায় কোটির মতো বয়স্ক মানুষ এখনো টিকার বাইরে। এখন পর্যন্ত তাদেরকে টিকার এক ডোজও দেয়া সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের বুঝতে হবে ঝুঁকিটা কার বেশি। ঝুঁকিতে থাকা মানুষের টিকা নিশ্চিত না করে টিকা প্রদানে বয়সসীমা নামিয়ে আনাটাই ঠিক হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে দেশে বুস্টার ডোজ দেয়াটা হবে অনৈতিক; এটা বিজ্ঞানসম্মতও নয়।’
তিনি বলেন, ‘একদিনের লকডাউনে তিন হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। অথচ বিনা টাকায় প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করাতে পারলেও অর্থনীতি সচল থাকত। প্রয়োজনে পরীক্ষার জন্য মানুষকে টাকা দিতে হবে। তবেই লকডাউন নামক এই জঞ্জাল থেকে আমরা মুক্তি পাব।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল।
তিনি বলেন, ‘ধারণার চেয়েও দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন। ইতোমধ্যে ৪৫টি দেশে এটি শনাক্ত হয়েছে। তবে ডেল্টা ধরনের মতো এটি ভয়ঙ্কর নয়।’
বিজন কুমার বলেন, ‘ওমিক্রনকে ভয়ঙ্কর ভাবার কারণ এর মিউটেশন। এখন পর্যন্ত ডেল্টা ধরনের সর্বোচ্চ ১৫টি মিউটেশন হয়েছে। সেখানে ওমিক্রনের হয়েছে ৫০টি। ধরনটির ৩২টি স্পাইক প্রোটিন, যা দিয়ে সে মানুষকে খুব সময়ে সংক্রমিত করে এবং এর মাধ্যমে ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়। এই যে ব্যাপক পরিবর্তন, এতে করে ধরনটি শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। এজন্যই মনে করা হচ্ছে, হয়তো ওমিক্রন ডেল্টার চেয়েও ভয়ানক হবে।
‘ফিউরিন নামক একটি প্রোটিন পুরো ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য পাল্টে দিতে পারে। এটি সার্সকপ-১ এ ছিল না, তবে সার্সকপ-২তে আছে। এখন এটি যদি আরও বিস্তার লাভ করে তাহলে ডেল্টার চেয়েও মারাত্মক হতে পারে। তবে এই মুহূর্তে ডেল্টার মতো আতঙ্কিত করার মতো অবস্থায় যায়নি ওমিক্রন। তবে এটাই শেষ নয়, খারাপ হতে পারে। আফ্রিকা থেকে অন্যান্য দেশে শনাক্তের পর এটি আরও শক্তিশালী হয়েছে, সংক্রমণ যত বাড়বে ততই এটি মারাত্মক হতে থাকবে।’
এই গবেষক বলেন, ইতোমধ্যে যারা করোনার ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তারা অনেকটা সুরক্ষিত। তবে এর বিপরীতে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কতটুকু তা নিয়ে এখনো পর্যালোচনা চলছে।’