শুধু বাংলাদেশেই নয়, আমেরিকা-সুইজারল্যান্ড-ইংল্যাণ্ডের মতো উন্নত দেশেও প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি ও দেরি হয় বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণ একটি মারাত্মক সমস্যা। অনেকে জমি দিতে চায় না। এটা চলমান সমস্যা তারপরও প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে এমন দেরি শুধু বাংলাদেশে নয় সুইজারল্যান্ড-ইংল্যান্ডেও হয়।’
একনেক সভায় মোট ১০টি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়। সভায় ১০ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সভা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন।
প্রকল্প বাস্তবায়নে বার বার সময় কেন বাড়ানো হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ইট ইজ নট ইন মাই কান্ট্রি অ্যালোন, গো টু আমেরিকা, গো টু ইংল্যান্ড, গো টু সুইজারল্যান্ড। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি এসব দেশেও প্রকল্পে দেরি হয়। সুইসরা ঘড়ির মতো চলে, তাদের জেনেভা শহরে আমি গত বছর গিয়েছি, তার আগেও গিয়েছি। মানুষ বকাঝকা করছে, রাস্তা কাটা অনেকদিন ধরে ঠিক হচ্ছে না। আমার পরিচিত লোকজন আমাকে বলল, আর বলবেন না, বলেছে এক বছরে হবে, তিন বছর ধরে রাস্তা ঠিক হচ্ছে না।’
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘বারবার প্রকল্প রিভিশন একটা রানিং সমস্যা, তাই সেটা নিয়ে আলোচনা হয়। দুর্নীতি যেমন একটা বড় সমস্যা, সবাই এটা নিয়ে চিন্তা করে, প্রকল্প বাস্তবায়ন তেমনি একটি সমস্যা। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাস্তব কারণে প্রকল্পে একটু দেরি হয়। করোনা তেমনি একটি কারণ। মাঝে মাঝে রেট সিডিউল চেঞ্জ হয়ে যায়, কাজ শেষ করার সময় দেখা যায় মাঝে মাঝে পাথর-বালু-সিমেন্টের দাম বেড়ে যায়। ফলে আবার রিভিশনের প্রয়োজন হয়, টাকার পরিবর্তন হয়।
‘আমাদের দেশে জমি একটা ভয়ঙ্কর সমস্যা। মানুষ জমি ছাড়তে চায় না। আরও সমস্যা রয়েছে যখন প্রকল্পের সার্ভে করে তখন ঠিকমতো সার্ভে হয় না। মাঠে না গিয়ে রিপোর্ট বানিয়ে দেয়। এটা একটা ফ্যাক্ট। এটা একটা জাতীয় সমস্যা। এমন অনেক জটিলতা রয়েছে। তবে আমরা আমাদের সাধ্যমতো এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের নদীগুলো দুটি মন্ত্রণালয়ের আওতায় পড়ে। পানি বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের, নদীর নাব্যসহ নৌচলাচল দেখার বিষয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের। এজন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন যাতে এই দুইটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় করে নদী সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ করা হয়।’
একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, আমাদের ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে ইসলামিক শিক্ষা দিতে হবে। যেন যুবকরা জঙ্গিবাদে ঝুঁকে না পড়ে।’
তিনি আরও বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দক্ষিণাঞ্চলে বেশি করে ধান চাষ করতে হবে।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে সঠিকভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। কাজের মান ভালো হতে হবে। যে টাকা ব্যয় হয় তা যেন যথাযথভাবে ব্যয় হয়।’