বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়- এই ঘোষণা দেয়া বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী না দেয়ার কথা জানিয়েছেন।
তবে দলটির এই অবস্থানের মধ্যেই বন্দরনগরীর দুজন নেতা তুললেন মনোনয়নপত্র। বলছেন, দল যদি প্রতীক নাও দেয়, তার পরও তারা ভোটে লড়বেন।
আগামী ১৬ জানুয়ারি ভোটের তারিখ ধরে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সেখানে আওয়ামী লীগ প্রতীক দিয়েছে গত দুবারের নির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে।
রোববার মেয়র পদে ভোটে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাখায়াত হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল।
সাখায়াত হোসেন খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশের মানুষের ভোটাধিকার নেই, এ কারণে জাতীয়তাবাদী দল স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। তবে আমি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলাম, কারণ দলের নির্দেশনা আছে। দল নির্বাচনে না গেলেও কোনো নেতা চাইলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব। বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে গেলে আমি দলীয় প্রতীক ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেব।
‘তবে দল যদি অন্য কোনো নেতাকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে, তাহলে তাকে সমর্থন করে মনোয়নপত্র প্রত্যাহার করব। যদি দল নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে না যায়, তাহলে নারায়ণগঞ্জের মানুষের স্বার্থে, ভোটাধিকারের স্বার্থে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে থাকব।’
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় সিদ্ধান্তে দলের সক্রিয়তা দেখা গেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে দলটির ৯৬ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান হিসেবে জিতে চমকও দেখিয়েছেন।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শেষে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল জানালেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনেও স্বতন্ত্র হিসেবে লড়াই করার নির্দেশনা পেয়েছেন তিনি।
- আরও পড়ুন: ‘বর্জনের ভোটে’ চেয়ারম্যান বিএনপির ৯৬ জন
নিউজবাংলাকে বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমাদের দল নির্বাচনে না যাওয়ার একটা ঘোষণা দিয়েছে, তবে দলের মহাসচিব বলেছেন; কেউ যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চান, তাহলে দলের আপত্তি নেই। এ কারণে দলের নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে রোববার মনোয়নপত্র নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘গত নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তবে এবার যদি উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাররা ভোট দিতে পারে, তবে আমি জয় লাভ করব। দলের একাধিক প্রার্থী থাকতেই পারে। আমি দলের নেতা-কর্মীদের সমর্থন পেলে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকব।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি না জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কোনো নির্বাচনে যাচ্ছি না। এটা একদম স্পষ্ট কথা। আর কোনো কথা নেই।’
ইউপি নির্বাচনে বিএনপির অনেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন, এই নির্বাচনেও তেমন কিছু হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ রকম কয়েকজন আছেন নিজের আগ্রহে দাঁড়িয়েছেন। দল খোঁজও নেয়নি। এখানেও যদি এ রকম কেউ মনে করেন, তিনি স্বতন্ত্র দাঁড়াবেন। সেটা তার ইচ্ছা। তবে দলীয় কোনো সহযোগিতা পাবে না। কারণ বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে না। আর ইউপিতে জয়লাভ করার সংখ্যা খুবই কম। কারণ যারা জিততে পারবেন, তারা নির্বাচনেই দাঁড়াননি।’
২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর সবশেষ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি প্রার্থী করেছিল সাখাওয়াত হোসেন খানকে। শান্তিপূর্ণ সেই নির্বাচনে তিনি আইভীর কাছে হেরে যান ৮০ হাজার ভোটে।
সাখাওয়াতের ধানের শীষে সেদিন ভোট পড়ে ৯৬ হাজার ৪৪টি। অন্যদিকে আইভীর পক্ষে পড়ে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬১১টি।
ভোটের দিন বিএনপি নির্বাচনকে সুষ্ঠু বললেও ফলাফল ঘোষণার পর তাদের অবস্থান পাল্টে যায়। গয়েশ্বর বলেন, ‘ভোট সুষ্ঠু, ফলে কারচুপি।’