বুধবার লেনদেনের শুরুতে আগের দিনের যে হতাশার চাপ ছিল পুঁজিবাজারে তা কেটে যাওয়ার আভাস দেখা গেছে। লেনদেনের শুরুতে সূচকের উত্থান হয় ১১৫ পয়েন্ট। লেনদেন শুরুর ১০ মিনিটে সূচকের এমন উত্থান পুঁজিবাজারকে মন্দা থেকে ফেরাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার যে উদ্যোগ তাতে আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।
এদিন লেনদেনের শুরুতে বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখী হওয়ার যে প্রভাব দেখা গেছে, সেটি শেষ সময় পর্যন্ত থাকবে কি না তা নির্ভর করছে আস্থার ওপর।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি মঙ্গলবার বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে। আলোচনা শেষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেয়া বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ জানান, ক্রয়মূল্যে এক্সপোজার লিমিট গণনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একমত হয়েছেন। দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
এক্সপোজার লিমিট ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হলে পুঁজিবাজারের উত্থান বা শেয়ারের দর বেড়ে গেলে নিয়মের মধ্যে থাকতে হঠাৎ শেয়ার বিক্রির চাপে পড়বে না আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। বর্তমানে শেয়ারের ধারণকৃত মূল্য নির্ধারণ করা হয় বাজারমূল্যের ভিত্তিতে। আর এখানেই বিপত্তি।
ব্যাংক তার বিনিয়োগ সীমার মধ্যেই শেয়ার কিনলেও তার দাম বেড়ে গেলে বাজারমূল্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগ গণনার কারণে বিনিয়োগসীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলো তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিতে হয় আগেভাগেই। এতে পুঁজিবাজারে বিক্রয় চাপ তৈরি হচ্ছে। বাজারে হচ্ছে দরপতন।
মঙ্গলবারের বৈঠকের পর দ্রুত এ সমাধান হলে ব্যাংকের ওপর থেকে শেয়ারের দর বাড়লেও বিক্রির চাপ বাড়বে না।
বুধবার লেনদেনের ৪০ মিনিটে সূচকের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৮০৬ পয়েন্টে। আগের দিনের তুলনায় সূচক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৩ দশমিক ১৩ পয়েন্ট। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এর পাশাপাশি বাকি দুই সূচকেরও ছিল উত্থান। লেনদেন হয়েছে ১৯০ কোটি টাকা। দর বৃদ্ধির খাতায় নাম লিখিয়েছে ৩১৫টি কোম্পানি। দর হারিয়েছে ১৪টির।
টানা ছয় দিন দরপতনের পর এক দিন সূচক বাড়লেও মঙ্গলবার আবার সেই হতাশার বৃত্তে ডুব দেয় পুঁজিবাজার। ফলে আট কর্মদিবসের মধ্যে সাত দিনই সূচকের পতন হয়েছে।
বুধবার পুঁজিবাজারের লেনদেন উত্থান শেষ হলে ৯ কার্যদিবসের মধ্যে উত্থানে হিসেবে যোগ হবে দুই দিন।
অন্যদিকে বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে যাচ্ছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তবে কী কারণে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে যাচ্ছেন, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিএসইসির চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ বিনিয়োগকারীদের নতুন আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুঁজিবাজারভিত্তিক গ্রুপগুলোতে নানা আলোচনা উঠে আসে। বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর আবার প্রাণ ফিরে পাবে পুঁজিবাজার।
বুধবার লেনদেনের প্রথম পৌনে এক ঘণ্টায় সূচক উত্থানে বড় ভূমিকা ছিল গ্রামীণফোনের। কোম্পানিটির শেয়ারদর ২.১৫ শতাংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে সূচকের উত্থানে অবদান রেখেছে ১৫.৩১ শতাংশ।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটিবিসি) অবদান ছিল ৬.৫৩ শতাংশ। এই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ১.২৯ শতাংশ।
এ ছাড়া স্কয়ার ফার্মা, ওয়ালটন, বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মা, রবির শেয়ারদর বৃদ্ধি সূচকের উত্থানে অবদান রেখেছে।
পাশাপাশি দর পতনের কারণে সূচককে পতনের দিকে নিতে ত্বরান্বিত করেছে ইউনিলিভার, ব্র্যাক ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
এ সময়ে ব্যাংক খাতের শেয়ারের বেশ উত্থান দেখা গেছে। ব্যাংক খাতের তালিকাভুক্ত ৮১ শতাংশ বা ২৬টি ব্যাংকের শেয়ারদর বেড়েছে, কমেছে তিনটি ব্যাংকের। এ ছাড়া বস্ত্র খাতের ৯০ শতাংশ শেয়ারের দর বৃদ্ধি হয়েছে।
ট্যানারি খাত, বিমা, তথ্য-প্রযুক্তি, ভ্রমণ ও অবকাশ, সিমেন্ট, টেলিকম, পাট খাতের তালিকাভুক্ত সব কটি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে লেনদেনের এই সময়ে।