রাস্তা বানিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেয়ায় ২০ বছর আগে গ্রামবাসীর ভোটে সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন নওগাঁর মান্দার পরানপুর ইউনিয়নের আব্দুল কাদের। কথা রেখে প্রায় ৪০০ মিটার রাস্তা তৈরিও করে দেন তিনি।
এবারের নির্বাচনে তিনি জয় পাননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ভোটের এক দিন পর ওই রাস্তার মাটি তিনি খুঁড়ে ফেলেছেন বলে অভিযোগ করেছেন গ্রামের লোকজন। তবে আব্দুল কাদের জানালেন, ওই রাস্তা নিজ জমির ওপর বানিয়েছিলেন; ক্ষুব্ধ হয়ে নয়, জমির প্রয়োজনেই রাস্তা সরিয়েছেন।
এই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ইলিয়াস খান জানান, রাস্তা না থাকায় পরানপুর ইউনিয়নের সদলপুর পুকুরপাড়ার প্রায় ৩০ পরিবারের লোকজন দীর্ঘদিন ভুগেছেন। ওই পাড়া থেকে সদলপুর আদিবাসী পাড়া পর্যন্ত যেতে ৪০০ মিটার পথ জমির আইল দিয়ে হেঁটে পার হতে হতো। তবে যানবাহন চলাচলের উপায় ছিল না।
সাবেক চেয়ারম্যান আরও জানান, ২০ বছর আগে ওই ৪০০ মিটার পথে রাস্তা তৈরির আশ্বাস দিয়েছিলেন সে সময়ের ইউপি সদস্য প্রার্থী আব্দুল কাদের। নির্বাচিত হয়ে প্রতিশ্রুতি রাখেন তিনি; বানিয়ে দেন ভ্যান চলাচল করার মতো একটি রাস্তা। এত বছর ধরে সে রাস্তায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন পুকুরপাড়ার লোকজন।
ইলিয়াস জানান, এরপর তিনবার নির্বাচনে দাঁড়ালেও জয় পাননি আব্দুল কাদের। সবশেষ রোববারের ভোটেও তিনি পরাজিত হন। ১১৩ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী আতাউর রহমান।
মঙ্গলবার ভোরে গ্রামবাসী দেখেন, ওই ৪০০ মিটার রাস্তার মাটি খুঁড়ে ফেলছেন কাদেরের লোকজন। এতে হঠাৎ করেই বেকায়দায় পড়েছেন স্থানীয়রা।
ওই গ্রামের আফসার আলী, লিমা বেগম ও নুরজাহান বিবি নিউজবাংলাকে জানান, আব্দুল কাদের গ্রামে গিয়ে ভোট চেয়েছিলেন। তারা তাকেই ভোট দিয়েছেন। এখন ভোটে পরাজিত হয়ে তাদের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। রাস্তাটি কেটে ফেলায় ভ্যান চলছে না; যাতায়াতে ভোগান্তি হচ্ছে।
রাস্তা কাটার বিষয়টি স্বীকার করে আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমার ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির ওপর দিয়ে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তাই সেটি কেটে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আগে জমির আইল দিয়ে মানুষ যাতায়াত করত। এখনও তেমন অবস্থায় আছে। নির্বাচনে হেরে ক্ষুব্ধ হয়ে কাজটি করেছি- এটি সঠিক নয়।’
এ বিষয়ে পরানপুর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান উজ্জ্বল বলেন, ‘খবর পেয়ে মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আগে ভ্যান যাওয়ার মতো রাস্তা ছিল, সেটা কেটে এখন হেঁটে যাওয়ার মতো জমির আইল করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি।’
সাবেক চেয়ারম্যান ইলিয়াস বলেন, ‘এখন ওই এলাকাবাসীকে বিকল্প রাস্তা হিসেবে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ ঘুরতে হবে, যা তাদের পক্ষে সম্ভব না। ক্ষোভের বসে হোক বা যে দিক দিয়ে হোক না কেন, এটা তিনি (কাদের) ঠিক করেননি।’
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, এ বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পেলে তিনি খতিয়ে দেখবেন।