বাবা, মা, স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে ছিল রুবেল হোসেন মণ্ডলের সংসার। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষে সহিংসতায় রুবেলের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউই। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে বাকি সদস্যরা এখন দিশেহারা।
২০০৩ সালের ডিসেম্বরে বিজিবিতে যোগ দেন রুবেল। নীলফামারী-৫৬ বিজিবির ল্যান্স নায়েক রুবেলের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শালমারা ইউনিয়নের বেইগুনি গ্রামে।
গ্রামের বাড়িতেই থাকেন কৃষক বাবা নজরুল ইসলাম, মা রুলি বেগম, স্ত্রী জেসমিন বেগম এবং দুই সন্তান রাফিহুর রহমান ও রাফিয়া আকতার রিয়া।
২৮ নভেম্বর নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের গাড়াগ্রাম ইউপি নির্বাচনের ফল ঘোষণা শেষে পশ্চিম দলিরাম মাঝাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাতীয় পার্টির পরাজিত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মারুফ হোসেন অন্তিকের সমর্থকরা হামলা চালায়। হামলায় রুবেল নিহত হন বলে অভিযোগ ওঠে।
মোবাইলে কথা হয় রুবেলের স্ত্রী জেসমিন বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কীভাবে সে মারা গেল এখনও জানতে পারি নাই। কেউ বলে গুলিতে মরছে। কেউ বলে ডাংগে (পিটিয়ে) মারছে।
‘বিজিবির সদস্যরা বাড়িত লাশ আনছে। সন্ধ্যায় পারিবারিক কবরস্থানে মাটি হইছে। এখন আমার ছেলেমেয়েকে দেখবে কে? আমরা চলব কীভাবে?’
এতটুকু বলার পর কিছুক্ষণ থেমে জেসমিন আবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার চাই। যারা আমাকে বিধবা করল আল্লাহ তাদের শাস্তি দেবেন।’
রুবেলের ১২ বছরের ছেলে রাফিহুর স্থানীয় একটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে আর ১০ বছরের মেয়ে রিয়া পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে।
বাবার মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে দুই সন্তানই কেঁদে যাচ্ছে।
রুবেলের বাবা নজরুল ইসলামের প্রশ্ন, ‘ছেলেটাক ওমরা (তারা) কীসক (কেন) মারল? ওর কী দোষ?’
মায়ের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে রুলি বেগম কিছুই বলতে পারেননি। শুধু কাঁদছিলেন।
রুবেলের হত্যার ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা হবে না বলে জানানো হয়েছে। সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় মৃত্যু হওয়ায় বিজিবির পক্ষ থেকে মামলা হবে বলে জানানোয় তাদের এই সিদ্ধান্ত।
মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে রুবেলের ভায়রা ভাই আবদুর রশিদ বলেন, ‘পিটিয়ে মারছে কি না তা বলতে পারব না। তবে বিজিবি যে ভাষ্য এখানে দিছে তা হলো, গলায় গুলি লাগছে। পোস্টমর্টেম বা কাটাকাটি যে করছে আমরা তার প্রমাণ পাইছি। লাশের গলায় কাফনের কাপড় প্যাঁচায়ে রাখা ছিল।’
তবে কার গুলিতে মৃত্যু হয়েছে তা নিশ্চিত নন রশিদ। তিনি বলেন, ‘পুলিশের গুলিতেও হতে পারে, বিজিবির গুলিতেও হতে পারে। আবার আর কেউও গুলি করতে পারে। তবে গুলিতেই যে মারা গেছেন এটা সত্যি।
‘ডিফেন্সের যে পলিসি আছে সে মোতাবেক কিছু টাকা, দাফনের অর্থ আর চাল-ডাল পেয়েছি। বিজিবিই মামলা করবে বলেছে। তাই পরিবার কোনো মামলা করবে না।’
শালমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমির হোসেন শামীম জানান, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রুবেলের দাফন হয়েছে। জানাজায় পরিবার, প্রতিবেশী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অংশ নেয়।
চেয়ারম্যান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রুবেলের পরিবার একেবারে অসহায় হয়ে গেল। তার অর্থেই পুরো পরিবার চলত। পরিবারটাকে এখন কে দেখবে?’
নির্বাচনি সহিংসতায় বিজিবি সদস্য নিহতের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নীলফামারী পুলিশ।