মাহফুজা শান্তা আক্ষেপ করে বললেন, ‘গত চার মাসে এলপিজি গ্যাস ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারের দাম ৮৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩৫০ টাকা। মাসে দুটি সিলিন্ডারে বাড়তি খরচ যোগ হয়েছে ১ হাজার টাকা। সঙ্গে খাবারের দাম তো বেড়েই চলেছে। হাজার বিশেক টাকার বেতনে পোষায় না। তাই জ্বালানি গ্যাস বাদ দিয়ে সিমেন্টের রেডিমেড চুলা বসিয়ে খড়ি দিয়ে রান্না শুরু করেছি।’
মাগুরায় একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন শান্তা। ছয়জনের পরিবার তার আয়ের ওপরই মূলত নির্ভরশীল। স্বামীর স্বল্প আয়ে পরিবারের খরচ মেটে না।
মাগুরায় একটি বেসরকারি সংস্থায় (এনজিও) চাকরি করেন বিল্লাল মুন্সি। তিনি বলেন, ‘আমার যে বেতন, তা দিয়ে সাতজনের পরিবারে হেসেখেলে চলে যেত। ছয় মাস আগেও আজকের মতো পরিস্থিতি হয়নি। মাস শেষ না হতেই বাকি আর ধার করে সংসার চলছে। বাজারে আগুন লেগেছে চাল, ডাল, তেলসহ প্রতিটি জিনিসের। রান্না করব সেই গ্যাসের দামও অনেক বেশি। তাই খরচ সীমিত করে বাড়িতে চুলায় রান্না শুরু হয়েছে। খড়ি কিনেছি ৫ মণ। হয়তো অনেকটা পোষাতে পারব।’
কলেজশিক্ষক আফজাল হোসেনও গ্যাসের চুলা সরিয়ে রেখেছেন। তিন মাস ধরে মাটির চুলাতেই রান্নাবান্না চলছে তার বাসায়। ধোঁয়ার যন্ত্রণা হলেও খরচ কিছুটা কমেছে।
গত চার মাস ধরে দফায় দফায় বেড়েছে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম। বাড়িতে ব্যবহৃত ১২ কেজি একটি সিলিন্ডারের দাম সরকার নির্ধারিত ১ হাজার ৩১৩ টাকা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৯০ থেকে ১ হাজার ৩৪০ টাকায়। গ্যাস বিক্রেতারা বলছেন, কমে গেছে সিলিন্ডারের চাহিদা।
মাগুরা গ্যাস হাউস নামে এক গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির দোকানের মালিক মাহমুদুল হক স্বাক্ষর বলেন, ‘১০০ জনের মধ্যে এখন গ্যাস নিচ্ছেন ৪০ থেকে ৫০ জন। চার মাস আগেও আমরা ১২ কেজির একটি গ্যাস সিলিন্ডার ৮৩০ টাকায় বিক্রি করেছি। তখন ভ্যানওয়ালা থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের মানুষ রান্না করতেন গ্যাসে। এখন তারা তো নেয়ই না, মধ্যবিত্তরাও গ্যাস নিচ্ছে না।’
নতুন বাজার এলাকার জ্বালানি কাঠ ব্যবসায়ী নির্মল কুমার জানান, গত কয়েক মাসে কাঠের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়েছে। প্রতি মণ জ্বালানি কাঠ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১৬০ টাকায়। এখন দিনরাত কাঠ জোগাড় করতে হচ্ছে তাকে।
তিনি বলেন, ‘মাস চারেক আগেও বিক্রি হতো না কাঠ। বেকার বসে থাকতাম দোকানে। এখন অবস্থাপন্ন মানুষও দেখছি খড়ি কিনতে আসছেন।’
নতুন বাজারের এলপিজি গ্যাসের পরিবেশক উত্তম কুমার বলেন, ‘গ্যাস কয়েক মাস আগেও নিম্ন আয়ের মানুষের বাড়িতে ব্যবহার হয়েছে। এখন দাম বাড়ায় তারা নিতে চাইছেন না। দাম কমলে লোকে আবার নিয়মিত গ্যাস নেবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।’