বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বসানোয় আপত্তি তোলায় রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার পর তাকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। স্থানীয়রা বলছেন, তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন।
মেয়রকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি চলছে।
গত ২৩ নভেম্বর থেকে মেয়র আব্বাসের একটি অডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এর পরই লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান তিনি।
মেয়র অফিস করছেন না। তবে তার মোবাইল ফোনটি চালু। কখনও ফোন ধরছেন, কখনও সাড়া দিচ্ছেন না।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে আব্বাস দাবি করেন, অডিওটি এডিট করা। তবে শুক্রবার বিকেলে তিনি ফেসবুকে লাইভে এসে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বসানো নিয়ে আপত্তির বিষয়টি স্বীকার করেন। এ জন্য তিনি ক্ষমাও চান।
ওই দিন তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি রাজশাহীর বাইরে আছি। আমি ফেসবুক লাইভে এসে কথা বলব। সেখানেই অনেক বিষয়ে আপনারা ক্লিয়ার হবেন। আমি কন্টিনিউ লাইভে আসব, সেখানেই প্রশ্নের উত্তর দিব।’
কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীর নামে গত ২৪ নভেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়। নগরীর বোয়ালিয়া থানায় করা মামলার বাদী নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ও ১৩ নম্বর কাউন্সিলর আব্দুল মোমিন। এ ছাড়া ২৩ নভেম্বর চন্দ্রিমা থানায় নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তহিদুল হক সুমান এবং রাজপাড়া থানায় ১৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন একই অভিযোগ এনে দুটি এজাহার জমা দেন।
অডিও প্রকাশের পর থেকে রাজশাহী শহর এবং কাটাখালীতে আলাদা কর্মসূচি থেকে আব্বাস আলীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। তবে এখন তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে।
কাটাখালী পৌরসভার কাউন্সিলর আব্দুল মজিদ জানান, ‘গত ১৫ নভেম্বরের পর থেকেই আব্বাস আলী পৌরসভায় যাননি। আমরা তার গ্রেপ্তার ও শাস্তিসহ বিভিন্ন দাবি করেছি। কিন্তু তিনি কোথায় আছেন, এটি আমরাও নিশ্চিত হতে পারছি না।’
আব্বাসের অনুপস্থিতিতে পৌরসভার সেবা যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য কাউন্সিলররা আন্তরিকভাবে কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আব্বাস আলী যে অপরাধ করেছেন তার জন্য তাকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। তিনি কোথায় সেটি নিশ্চিত হতে পারছি না। তবে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে শুনতে পারছি তিনি ঢাকায় থাকতে পারেন।’
নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘আমরাও আব্বাস আলীকে খুঁজছি। ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তাও নিচ্ছি। আমরা আশা করছি তাকে পেয়ে যাব।’
ওসি বলেন, ‘মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার তদন্ত চলছে। অডিও ক্লিপটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রক্রিয়ার মাঝেই তিনি ২৬ নভেম্বর নিজেই ফেসবুক লাইভে এসে স্বীকারোক্তি দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। কাজেই এটি আর খতিয়ে দেখার কিছু নাই।’
ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘তিনি যে মামলার আসামি তাতে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই। এখন আমরা মূলত তাকে খুঁজে বের করার জন্য যা যা করার দরকার করছি।’