বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচে এ দেশের তরুণ দর্শকদের পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে মাঠে যাওয়ার ঘটনা পরিকল্পিত বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন।
তিনি বলেছেন, ‘আমি সুবর্ণজয়ন্তীর বক্তব্যে বলেছিলাম, পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানোর ঘটনা পরিকল্পিত কি না জানি না। আজকে দেখছি এটা পরিকল্পিত। দেশে বর্তমানে যে জঙ্গি উত্থান রয়েছে, তার সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দারা জড়িত রয়েছে কি না আমরা জানি না। ক্রিকেট প্রেম এক জিনিস, জাতীয় প্রেম, গৌরব ও পতাকা আরেক জিনিস। খেলার মাঠে তাদের সমর্থন করতে পারি। তবে তরুণরা পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে মাঠে যাবে, সেটা হতে পারে না। এটা পরিকল্পিত।’
রোববার একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনে পয়েন্ট অফ অর্ডারে দাঁড়িয়ে তিনি এ কথা বলেন।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করেও বিএনপির পাকিস্তান প্রেম দেখতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করে মেনন বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করার পরও বিএনপির পাকিস্তান প্রেম দেখতে হচ্ছে। বেগম জিয়া অসুস্থ তাকে নিয়ে কথা বলতে চাই না। পরিকল্পিতভাবে আমাদের গৌরব অধ্যায়কে ধ্বংস করার চক্রান্ত চলছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের এক হতে হবে। বিএনপিকে বলব, এখনও সময় আছে, আপনাদের পাকিস্তান প্রেমটা দূরে রাখুন। খেলা নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ থাকবে। তবে বাংলাদেশে অন্য দেশের পতাকা উড়বে না।’
তিনি বলেন, ‘আমি গতকাল (শনিবার) ফ্লোর চেয়েছিলাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলার জন্য। কারণ এ হাউসে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, সেটা কেবল অসত্যই নয়, তিনি তার বক্তব্যে চালাকির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ১৯৭৪ সালের জাতিসংঘের বক্তব্যকেও টেনে এনেছিলেন। তিনি যেটা করতে চেয়েছিলেন, সেটা হচ্ছে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানোর পক্ষে যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা।’
এ রকম ঘটনা বাংলাদেশ সৃষ্টির পরও হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘এ রকম ঘটনা এখন শুধু নয়, বাংলাদেশ সৃষ্টির পরেও হয়েছিল। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর সফর ঘিরেও পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছিল। এখন আবার ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানোর চেষ্টা হয়েছে।’
পাকিস্তানের সঙ্গে অনেক বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে উল্লেখ করে মেনন বলেন, ‘এখনও পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের অনেক বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তারা আমাদের সম্পদ ফেরত দেয়নি। আমাদের হিসাব দেয়নি। তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, এতে সন্দেহ নেই। তবে পাকিস্তান হাইকমিশন যে কাজ করছে সেটা যথাযথ নয় বলে মনে হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, পাকিস্তান হাইকমিশনে যে অনুষ্ঠান হয়, সেখানে আমাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো স্পনসর করে। তাদের ওই কার্ডের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম আপনারা দেখতে পারেন। কোথায় তারা? আমরা দেখেছিলাম যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর বিচারের সময় তার পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য লোক দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। অনেক কষ্টে তা ঠেকানো গিয়েছিল। এগুলো তো ইতিহাস। এগুলো ভুলে গেলে চলবে না। আমাদের গৌরববোধকে কেউ ধ্বংস করবে, বিএনপিসহ সবাইকে বলি এটা মানা যায় না।’
মেনন বলেন, ‘৫০ বছরে দেশ এগিয়ে চলেছে। আমাদের পতাকা, আমাদের জাতীয় সংগীত, সংবিধান অলঙ্ঘনীয়।’