প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ফাল্গুনী শপ ডটকমের সিইও পাভেল হোসেনকে তিন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও মাদকও উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রতারণার শিকার কয়েকজনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার বিকেল ৫টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত র্যাব-৪ এর একটি দল রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাভেলসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত বাকি তিনজন হলেন- সাইদুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল হাসান ও ফারজানা আক্তার মিম।
অভিযানের সময় ‘ফাল্গুনী শপ ডটকম’ অফিস থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, দুই রাউন্ড গুলি, ২৪ ক্যান বিয়ার, চার বোতল দেশি মদ, একটি প্রাইভেটকার, কম্পিউটার, প্রিন্টার, বিপুল পরিমান এন-৯৫ মাস্ক, ১০০টি ইনভয়েস, ৩০টি চেক বই, ৮০টি সীল ও বিপুল পরিমাণ বিজ্ঞাপনের স্ক্রিনশট উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া পাভেলের প্রতিষ্ঠানের গুদাম থেকে ৪২৩ কেজি চাঁ-পাতা, ৭১৫ কেজি চাউল, ৪১২ কেজি মসুর ডাল, ২৬০ কেজি ফুলক্রিম মিল্ক, ৮টি বাই-সাইকেল, ৪৫০ লিটার সয়াবিন তেল, ২১৪ লিটার সরিষার তেল, ৫০ কেজি লবন, ১১০ কেজি হুইল পাউডার, গ্লাস ক্লিনার, হারপিক ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক এসব তথ্য জানান।
র্যাব আরও জানায়, অভিযুক্ত পাভেল ২০০৯ সালে এইচএসসিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় একটি অস্ত্রসহ র্যাবের হাতে আটক হয়েছিলেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় একটি অস্ত্র মামলাও রয়েছে।
পরে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে জনৈক দিদারুল আলম, কানিজ ফাতেমা ও রহমতুল্লাহ শওকতকে সঙ্গে নিয়ে ‘ফাল্গুনী শপ ডটকম’ নামে একটি অনলাইন বিজনেস প্লাটফর্ম তৈরি করেন পাভেল। কিন্তু ব্যাবসার শুরুতেই পাভেলের অন্য অংশীদাররা তার গ্রাহক ঠকানোর বিষয়টি বুঝতে পারেন এবং তারা তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি এবং এফিডেবিট করে উকিল নোটিশ পাঠিয়ে যৌথ ব্যবসা থেকে সরে যান। তারা বিষয়টি জয়েন্ট স্টক অথরিটিকেও জানান। পাভেল তাদের নামে জাল সীল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে গ্রাহকদের প্রতারিত করার পাশাপাশি যৌথনামে চেক ইস্যুও করতেন।
চলতি বছরের মে মাসে প্রতারণার অভিযোগে কয়েকজন গ্রাহক পাভেলের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় প্রতারণার মামলা করলে পাভেলকে সিআইডি গ্রেপ্তার করে। পরে ২১ দিন জেলে থেকে জামিনে বের হয়ে আগের চেয়েও বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনি। কিছু গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর একাধিকবার ফাল্গুনী শপ ডটকমের আউটলেট বন্ধ করে দেয়।
গত জুলাইয়ে বনশ্রী এলাকায় ‘অরিমপো ডটকম’ ও ‘টেক ফেমিলি ডটকম’ নামে নতুন অফিসের আড়ালেই ফাল্গুনী শপ ডটকমের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন পাভেল। ওই দুই প্রতিষ্ঠানে তিনি এমডি এবং তার স্ত্রী রিতা আক্তার চেয়ারম্যান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
যেভাবে প্রতারণা করতেন পাভেল
র্যাব জানায়, করোনা মহামারির লকডাউনে অনলাইন শপ ‘falgunishop.bd’ এবং ফেইসবুক পেইজ ‘falgunibd’-এর মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম বাজার মূল্যের চেয়ে কম ধরে বিজ্ঞাপন প্রচার করতেন পাভেল। এতে আকৃষ্ট হয়ে ক্রেতারা যোগাযোগ করলে পাভেল তাদের পণ্যের মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করার শর্ত দিতেন। তারপরও সরল বিশ্বাসে অসংখ্য মানুষ বিপুল পরিমাণ অর্ডার দিতে থাকেন। তারা মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন গেটওয়ের মাধ্যমে পণ্যের মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করতেন।
পরে প্রতারক প্রতিষ্ঠানটি কিছু কিছু ক্রেতাকে আংশিক, কিছু ক্রেতাকে নিম্নমানের পণ্য আবার কিছু ক্রেতাকে কোনো পণ্য সরবরাহ না করেই সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করে। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয় পাভেলের প্রতিষ্ঠান। পাভেল এসব টাকা মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট ও অনলাইন গেটওয়ে থেকে অন্যত্র সরিয়ে জমি-প্লট কিনে টাকা লেয়ারিং করতেন।
ক্রেতাদের অভিযোগ, তারা তাদের পণ্য কিংবা পরিশোধকৃত টাকা চাইতে প্রতিষ্ঠানটিতে গেলে পাভেল তাদের অস্ত্র দেখিয়ে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাতেন। এমনকি প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই টর্চার সেলে লাঠি পেটা, বৈদ্যুতিক শকসহ অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।