প্রায় এক দশক সময় আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া জিএমজি এয়ারলাইনসের প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে যে টাকা তোলা হয়েছিল, তার বেশির ভাগ ফেরত দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন জিএমজির মালিক বেক্সিমকো লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান।
সম্প্রতি বেক্সিমকো সুকুক বন্ড ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে তিন হাজার কোটি টাকা তোলার প্রক্রিয়া শুরু করলে জিএমজির প্লেসমেন্ট শেয়ারের বিষয়টি সামনে আসে। শত শত বিনিয়োগকারী ফেসবুকে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে জানান, তারা টাকা দিয়ে ফেরত পাননি। সুকুকের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটবে।
সুকুক বেশ আকর্ষণীয় অফার দিয়ে বাজার থেকে টাকা তোলার চেষ্টা করলেও ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা এতে খুব একটা আগ্রহ দেখাননি। পরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বন্ড কেনেন।
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মিট দ্য প্রেসে জিএমজির প্লেসমেন্ট শেয়ারের ইস্যুটি তোলা হলে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘ব্যক্তি শ্রেণির যারা প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়েছেন তাদের বেশির ভাগ টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।’
তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অনেকের টাকা এখনও রয়ে গেছে, এটা স্বীকার করেছেন তিনি। সেই টাকা ফেরত দেয়ার অঙ্গীকারও করেছেন তিনি।
১৯৯৮ সালের এপ্রিলে জিএমজি এয়ারলাইনস দেশের প্রথম বেসরকারি বিমান সংস্থা হিসেবে লাইসেন্স নেয়। ২০০৯ সালে বেক্সিমকো লিমিটেড কোম্পানিটির শেয়ার কিনে মালিকানায় আসে।
২০১২ সালে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে টাকা তোলার প্রক্রিয়া শুরু করে। এর আগেই পুঁজিবাজারের বাইরে প্লেসমেন্টে শেয়ার বিক্রি করা হয়। ১০ টাকার একেকটি শেয়ার বিক্রি করা হয় ৫০ টাকা করে। সব মিলিয়ে তোলা হয় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছতা ও দুর্বল আর্থিক ভিত্তির জন্য কোম্পানিটির আইপিও আবেদন বাতিল করে দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এতে প্লেসমেন্ট শেয়ারধারীরা পড়েন বিপাকে। কারণ, তাদের বহুজনের টাকা এখনও ফেরত দেয়া হয়নি।
মোজাম্মেল হক নামে একজন প্লেসমেন্ট শেয়ারধারী নিউজবাংলাকে জানান, তিনি ও তার কয়েকজন বন্ধু মিলে এক কোটি টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়েছিলেন। কিন্তু এক টাকাও ফেরত পাননি। তাদের কাছে শেয়ার বরাদ্দের এবং টাকা দেয়ার সব নথিপত্র আছে। বারবার তারা যোগাযোগ করেছেন, কিন্তু তাদের টাকা দেয়া হয়নি।
জিএমজি এয়ারলইনস প্লেসমেন্টধারীরা টাকা ফেরত পাবেন কি না প্রশ্নে আরও বিস্তারিত আলোচনায় এফ রহমান বলেন, ‘প্লেসমেন্ট শেয়ারের মধ্যে পাবলিকের যতগুলো ছিল, মোটামুটি আমরা অনেকগুলো ফেরত দিয়েছি। প্রাতিষ্ঠানিকদের কিছু বাকি আছে। সেগুলো দেব। পর্যায়ক্রমে কিন্তু সেগুলো ফেরত দেয়ার চিন্তা আছে।’
জিএমজি এয়ারলাইনস বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যে সময় জিএমজিকে বন্ধ করেছি, তখন জ্বালানি তেলের দাম ছিল অনেক বেশি। টাইমলি যদি আমরা এটিকে বন্ধ করে না দিতাম তাহলে ইন্ডিয়ার কিং ফিশারের যে অবস্থা হয়েছিল আমাদের ও তাই হতো। কিং ফিশারের অবস্থা পর্যালোচনা করে যদি এটি বন্ধ করে দেয়া হতো তাহলে মালিকের অন্য ব্যবসায় প্রভাব পড়ত না।’
সালমান বলেন, ‘আমরা যদি সে সময় জিএমজি বন্ধ করে না দিতাম, তাহলে পুরো বেক্সিমকোর ওপর প্রভাব পড়ত।’