বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গ্রহাণুতে আঘাত হানতে ডার্ট মহাকাশযান রওনা দেবে কাল

  •    
  • ২৩ নভেম্বর, ২০২১ ১১:০৪

ডিমরফস গ্রহাণু যখন পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি আসবে, তখন সেটিকে ধাক্কা দিয়ে কক্ষপথ থেকে প্রায় ৬ দশমিক ৮ মাইল দূরে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে ডার্ট মহাকাশযান। ঘটনাটি ঘটার সম্ভাব্য সময় ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর।

এক বিশাল পাথরের খণ্ড আর মহাকাশের সঙ্গে মানবজাতির সম্পর্কে নতুন মোড়। একটি গ্রহাণুকে কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত করতে সেটিতে মহাকাশযান দিয়ে ধাক্কা দেবে নাসা।

গ্রহাণুটিতে আঘাত করতে গিয়ে বিস্ফোরিতও হতে পারে মহাকাশযানটি। তবে এর প্রভাবে শেষ পর্যন্ত গ্রহাণুটি কক্ষপথ থেকে সরে কি না, কিংবা গতিপথ পাল্টায় কি না- সেটিই দেখার অপেক্ষা।

বিশ্বে কিংবা হয়তো গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে এ ধরনের পরিকল্পনা এটাই প্রথম। মানবজাতির ইতিহাসে এর আগে কখনও সৌরজগতে মহাকর্ষীয় ছন্দপতন ঘটানোর মতো ইচ্ছাকৃত হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেনি।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, পৃথিবীকে বিপজ্জনক গ্রহাণুর আঘাত থেকে সুরক্ষিত রাখার পদ্ধতি আবিষ্কারে পরীক্ষামূলকভাবে এ অভিযান পরিচালনা করবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। ডাইনোসর বিলুপ্ত করে দেয়া গ্রহাণুর মতো বিপজ্জনক মহাজাগতিক বস্তুর আঘাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষার সম্ভাব্য উপায় হিসেবে চালানো হচ্ছে এ পরীক্ষা।

গ্রহসংক্রান্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আবিষ্কারে এ প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে ‘ডাবল অ্যাস্টারয়েড রিডাইরেকশন টেস্ট’, বা সংক্ষেপে ডার্ট।

এর আওতায় ডিমরফস নামের একটি ঝুঁকিমুক্ত গ্রহাণুতে মহাকাশযান দিয়ে ধাক্কা দেবে নাসা। ডিমরফস আদতে চাঁদের চেয়ে ছোট একটি উপগ্রহ, যার ব্যাস প্রায় ১৬০ মিটার।

ডার্ট মিশনে ৬১০ কেজি ওজনের একটি মহাকাশযান ব্যবহার করবে নাসা। এটি বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত ভ্যান্ডেনবার্গ স্পেস ফোর্স বেজ থেকে রওনা হবে। ডার্ট মহাকাশযানটিকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে স্পেসএক্সের ফ্যালকন নাইন রকেট।

ডার্ট মহাকাশযানের গন্তব্য সৌরজগতের ডাইডিমস সিস্টেম। পৃথিবীর জন্য বিপজ্জনক নয়, এমন এক জোড়া গ্রহাণুকে বলা হয় ডাইডিমস সিস্টেম, যার অন্যতম হলো ডিমরফস নামের ১৬৩ মিটারের ‘মুনলেট’ গ্রহাণু। ডাইডিমস নামের ৭৮০ মিটারের একটি গ্রহাণুকে চাঁদের মতো প্রদক্ষিণ করে বলে ছোট্ট ডিমরফসকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘মুনলেট’।

ডাইডিমস ও ডিমরফস- দুটি গ্রহাণুই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। খুব কমই পৃথিবীর কাছাকাছি আসে তারা।

ডিমরফস গ্রহাণু যখন পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি আসবে, তখন সেটিকে ধাক্কা দিয়ে কক্ষপথ থেকে প্রায় ৬ দশমিক ৮ মাইল দূরে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে ডার্ট মহাকাশযান। ঘটনাটি ঘটার সম্ভাব্য সময় ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর।

বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশা, ছোট গ্রহাণুটির গতিবেগ বর্তমানের তুলনায় ১ শতাংশ হলেও কমবে এবং ডাইডিমসকে ডিমরফসের প্রদক্ষিণ করার সময়ও কয়েক মিনিট কমবেশি হয়ে যাবে।

২০২৪ সালে ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার হেরা মহাকাশযান ডাইডিমসের কাছে যাবে এবং এ বিষয়ে বিশদ বিশ্লেষণের জন্য আরও কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করবে।

পরীক্ষাটি সফল হলে ভবিষ্যতে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসতে থাকা বিপজ্জনক গ্রহাণুগুলোকে পথ থেকে সরিয়ে দিতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।

ওয়েলসের ন্যাশনাল নিয়ার আর্থ অবজেক্টস ইনফরমেশন সেন্টারের পরিচালক জে টেইট বলেন, ‘পৃথিবীর কাছাকাছি বস্তুর গতিপথ আটকানোর চেষ্টার পথে এটি প্রথম পদক্ষেপ। পরীক্ষাটি সফল হলে তা মানবজাতির জন্য সত্যিকার অর্থে একটি বড় অর্জন হবে। কারণ এর মাধ্যমে প্রমাণ হবে যে মানবজাতিকে রক্ষায় কারিগরি সক্ষমতা আমাদের আছে।’

ময়লার স্তূপ, উল্কাখণ্ড এমনকি ছোট ছোট গ্রহাণু সারাক্ষণই পৃথিবীকে আঘাত করছে। প্রতিনিয়ত এ ধরনের নানা মহাজাগতিক ধ্বংসাবশেষ বা বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট টুকরা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে ঠিকই; কিন্তু সেগুলো সাধারণত ভূপৃষ্ঠে আঘাত হানার আগেই বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণে পুড়ে যায় বা ভেঙেচুরে আরও ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে।

তবে ভূপৃষ্ঠে ছাপ রেখে যাওয়ার মতো গ্রহাণুর শক্তিশালী আঘাত বিরল ঘটনা। কয়েক শ থেকে হাজার, এমনকি শতকোটি বছরের বিরতিতে একবার এ ধরনের ঘটনা ঘটে। প্রায় ছয় কোটি ৬০ লাখ বছর আগে এ ধরনের একটি মহাজাগতিক সংঘর্ষে পৃথিবীর বুক থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।

ওই গ্রহাণুর আঘাতে বায়ুমণ্ডলের ওপরের অংশে যে পরিমাণ ধুলা-ময়লা ও ধ্বংসাবশেষের কণা জমেছিল, তার ফলে পৃথিবীতে সূর্যের আলো প্রবেশ আটকে গিয়েছিল; ভেঙে পড়েছিল বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশের খাদ্য-শৃঙ্খল ব্যবস্থা।

বিজ্ঞানীদের মতে, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়া অসম্ভব নয়। তাই মানবজাতির স্বার্থে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা গ্রহাণুগুলোকে পথচ্যুত করার উপায় খুঁজে বের করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে আশার আলো দেখাচ্ছে নাসার ডার্ট মিশন। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাস্তবসম্মত উপায়ে গ্রহাণুকে পথচ্যুত করা যায় কি না, সেটাই পরীক্ষা করে দেখবে নাসা।

মহাকাশযান স্বয়ংক্রিয়ভাবে পথ বদলে গ্রহাণুর দিকে যেতে পারে কি না, সেটিকে আঘাত করতে পারে কি না এবং এতে গ্রহাণু কতটুকু সরল- সে তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করবেন বিজ্ঞানীরা।

এ বিভাগের আরো খবর