মিরপুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অনুশীলনে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের পতাকা ওড়ানোর প্রতিবাদ না করায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান পাপন এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের পদত্যাগ চেয়েছেন বিশিষ্ট জনেরা।
সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
সমাবেশ থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে পাকিস্তানের সঙ্গে হকি খেলার আয়োজন করায় হকি ফেডারেশনের সভাপতিসহ পরিচালনা পর্ষদের সকল সদস্যের অপসারণেরও দাবি জানানো হয়।
৪০ জন বিশিষ্ট নাগরিকের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন।
সমাবেশে প্রবীণ সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, ‘এখন সংসদ অধিবেশন চলছে। অনুশীলনে পাকিস্তানের পতাক ওড়ানো নিয়ে সেখান থেকে আমরা কোনো প্রতিবাদ উচ্চারিত হতে দেখিনি। আমরা চাই, এ ব্যাপারে সংসদে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন করা হোক। আর যারা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত তাদের বিভিন্ন পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হোক।’
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের (অব.) বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা আমাদের দেশের আইন ভঙ্গ করে পতাকা উড়ালো, অথচ বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ একেবারেই নিশ্চুপ। তারা এদের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নিল না। এটি দুঃখজনক।’
বিসিবি চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ করে এই বিচারপতি বলেন, ‘পাপন সাহেব, আপনার মাকে পাকিস্তানিরাই হত্যা করেছে। আপনি পাকিস্তানিদের সঙ্গে মাখামাখি করছেন। আপনি আর যদি এখন এই মাখামাখি শেষ করতে না পারেন তাহলে পদত্যাগ করুন। কোনো পাকিস্তানপ্রেমীকে বিসিবির পদে আমরা চাই না।’
শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘আমরা শুনেছি ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে হকি খেলা হবে। এই হকি ফেডারেশনে মোনায়েম খানের রক্তের দুইজন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ, মোনায়েম খানের গোষ্ঠীকে হকি ফেডারেশন থেকে বিতাড়িত করা হোক। যদি ১৬ ডিসেম্বর হকি খেলা হয় আমরা কেউ থেমে থাকব না। শুধু হকি না, পাকিস্তানের সঙ্গে পুরো ডিসেম্বর মাস কোনো খেলা চলতে পারে না।’
রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক (অব.) মেজর জেনারেল মোহম্মদ আলী শিকদার বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকে অশ্রদ্ধা করার জন্য পাকিস্তানি ক্রিকেট দল অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তাদের পতাকা উড়িয়েছে। পাকিস্তানকে কেন এই সুযোগ দেয়া হলো বিসিবির পরিচালকের কোনো বক্তব্য আমরা পাচ্ছি না।
‘আর পাকিস্তানের জয়ে যারা পাকিস্তানের পতাকা উড়িয়ে উল্লাস প্রকাশ করছে তারা কুলাঙ্গার। সরকারের প্রতি আমাদের দাবি তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে।’
অবসরপ্রাপ্ত এই মেজর জেনারেল বলেন, ‘আমরা শুনতে পাচ্ছি ইমরান খান বাংলাদেশে আসার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন। ইমরান খান যদি আসলেই ঢাকায় আসতে চায় তাকে শহীদ মিনারে হাঁটু গেড়ে শহীদদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এই অঙ্গীকার না করিয়ে যদি তাকে ঢাকায় আনা হয় তাহলে আমরা কোনোভাবেই তাকে বিমানমন্দরের বাইরে আসতে দেব না। প্রয়োজনে জীবন দেব।’
আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুহিন আফরোজ বলেন, ‘যারা বাংলাদেশে পাকিস্তানের পতাকা ওড়াবে, তাদেরকে ভালোবাসার কথা বলবে, তাদের সংগীত নিয়ে উত্তাল হবে তাদের বিরুদ্ধে আইন করতে হবে। এই আইনের কোনো বিকল্প নেই । কঠোরভাবে সেটিকে প্রয়োগ করতে হবে। এই আইন করে বোঝাতে হবে আমরা বাংলাদেশিরা বেঈমানের জাতি না। আমরা শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করিনি।’
বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. নীম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, ‘বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে মুক্তিযুদ্ধেরবিরোধী শক্তি আশ্রয় নিয়েছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া।