বগুড়ার গাবতলীতে নৈশপ্রহরীদের হাত-পা ও মুখ বেঁধে তিনটি মার্কেটে ডাকাতির ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১২ আশুলিয়ায় রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে দেলোয়ার হোসেন, আব্দুল হালিম, আলী হোসেন, সুমন মুন্সি ও হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করে।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিদেশি পিস্তল, দেশীয় অস্ত্র ও লুট করা মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানিয়েছেন, বিভিন্ন পেশার সঙ্গে জড়িত থাকলেও ডাকাতি করাই ছিল তাদের প্রধান কাজ। তারা বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা হলেও সাভার ও এর আশপাশের এলাকায় বসবাস করতেন। তাদের দলের সদস্য ১২ থেকে ১৫।
সংঘবদ্ধ এই দলটি ট্রাকে করে বিভিন্ন এলাকার বাসা-বাড়ি ও মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে ডাকাতি করে। অস্ত্র, তালা ও গ্রিল কাটার যন্ত্র চালকের আসনের নিচে লুকিয়ে রেখে আগেও তারা ঢাকা, মানিকগঞ্জ, কালামপুর, টাঙ্গাইল, সিংগাইর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করেছে।
সর্বশেষ, গত ৬ নভেম্বর দিবাগত রাতে বগুড়া জেলার গাবতলী থানার দুর্গাহাটা বাজারের তিনটি মার্কেটে ডাকাতি করে। মুন্সি সুপার মার্কেট, পুকুর পাড় মার্কেট ও মসজিদ মার্কেটে অস্ত্রের মুখে তারা নৈশপ্রহরীদের হাত-পা ও মুখ বেঁধে সদর দরজার তালা ভেঙে ৯টি দোকানে ডাকাতি করে। এ সময় তারা স্বর্ণালংকার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, কাপড় ও মোবাইলসহ প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল ও নগদ অর্থ লুট করে।
এ ঘটনায় দোকানের মালিকদের পক্ষ থেকে পরদিন গাবতলী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতি মামলা করা হয়। ডাকাতির এ ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করে।
পরে ঘটনাস্থলে প্রাথমিক তদন্ত, সিসিটিভি ফুটেজ ও নৈশপ্রহরীদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরেই ডাকাত দলকে শনাক্ত করে র্যাব। দলকে গ্রেপ্তারে র্যাব ছায়া তদন্ত করে অভিযান চালায়।
অভিযানে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত একটি পিস্তল, চারটি গুলি, একটি বোল্ট কাটার, দুটি রামদা, তিনটি শাবল, দুটি ছুরি, একটি কাঁচি, দশটি লাঠি, একটি হাতুড়ি, একটি টর্চলাইট ও একটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুর্গাহাটা বাজারে ডাকাতির সময় লুট করা সোনার গয়না ও কাপড় উদ্ধার করা হয়।
বগুড়ায় ডাকাতি ঘটনার জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, দলের সরদার দেলোয়ারের নির্দেশে দলের ৯ জন ঘটনার আগের দিন বিকেলে সাভারের নবীনগরে একত্রিত হয়ে বগুড়ার গাবতলীর উদ্দেশে ট্রাকে করে রওনা দেন। পথে আরও তিনজন সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া থেকে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন। পরিকল্পনা মোতাবেক মোট ১২ জনের দলটি দুটি ভাগে ভাগ হয়ে দুর্গাহাটায় ডাকাতি করেন।
ডাকাতি শেষে লুট করা বস্ত্র ও কাপড় সাভারের নবীনগরের একটি মার্কেটে বিক্রি করে দেন। টেলিভিশন, মোবাইল ও অর্থ তারা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন। এ ছাড়া বেশকিছু সোনার গয়না পরদিন অন্য দুটি মার্কেটে জুয়েলার্সের দোকানে বিক্রি করেন।
দলের নেতা দেলোয়ার জানান, গত ৬ থেকে ৭ বছর ধরে তিনি ডাকাতি করছেন। ডাকাতির আগে তিনিই অন্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার নামে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন থানায় চারটি ডাকাতিসহ চুরি ও মাদকের মামলা রয়েছে। এদিকে ডাকাত দল ও লুট করা মালামাল পরিবহন করেন হুমায়ুন কবির।
জিজ্ঞাসাবাদে কবির স্বীকার করেন, ডাকাতির কাজে ব্যবহার করতেই তিনি এই ট্রাকটি চুরি করেন। তার নামে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানায় ডাকাতির একটি মামলা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিটি ডাকাতির সময় তারা ট্রাকের নম্বর প্লেট পরিবর্তন করেন। এই নম্বর প্লেটের খোঁজ থেকেই ডাকাত দলের সন্ধান পান বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
আরও বলা হয়, গ্রেপ্তার আলী হোসেন, আব্দুল হালিম ও সুমন মুন্সি দুর্গাহাটা বাজারে ডাকাতির ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন। তারা বিভিন্ন দোকানের তালা ভাঙা, মালামাল বস্তায় ভরা ও সর্বশেষ ট্রাকে তোলার কাজে সহায়তা করেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘তারা পেশাদার ডাকাত। বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় তারা নিয়মিত ডাকাতি করে আসছিলেন। বিভিন্ন ডাকাতি মামলায় তারা গ্রেপ্তারও ছিলেন।