ধসে পড়া স্ল্যাব মেরামতের পর গাজীপুরের টঙ্গী ব্রিজ যানচলাচলের জন্য প্রস্তুত বলেই জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। খুলে দেয়ার ঘোষণার পরও সেটি রোববার বেলা ১১টা পর্যন্ত বন্ধই রাখা হয়েছে।
এর আগে শনিবার দুপুরে বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক (সেতু বিভাগ) মহিরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত অংশের মেরামত শেষ হয়েছে। শনিবার রাত ৯টায় সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। এ খবর জেনে ওই সড়ক ব্যবহারকারীরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন।
এরপর শনিবার রাতে কর্তৃপক্ষ জানায়, ব্রিজের সংস্কারকাজ শেষ হলেও ঢালাই অংশে বিটুমিনের প্রলেপ কাঁচা থাকায় ব্রিজ খুলে দেয়া হয়নি। রোববার সকালে এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হতে পারে।
তবে রোববার সকালেও সেতু বন্ধ রয়েছে। এতে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ফের ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
রাজধানীর পান্থপথে একটি আইটি ফার্মে কাজ করেন ইব্রাহিম হোসেন। রোববার সকালে টঙ্গী ব্রিজ খুলে দেয়া হবে ভেবে একটু স্বস্তিতে ছিলেন তিনি। তবে সকালে এসে সেতু বন্ধ দেখে ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর এই সড়কে যানজটে আটকা পড়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছি৷ এই ভোগান্তির শেষ কবে?’
উত্তরার মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থী রোকসানা আফরোজ বলেন, ‘টঙ্গী থেকে উত্তরায় কলেজ যেতে প্রতিদিনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়তে হয়। প্রায়ই নির্ধারিত সময়ে ক্লাসে পৌঁছাতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হচ্ছে।’
উত্তরখান এলাকার মুদি দোকানি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘টঙ্গী বাজার থেকে পাইকারি দরে মালামাল কিনে নিয়ে দোকানে বিক্রি করি। গত ১১ দিন ধরে টঙ্গী সেতু বন্ধ থাকায় টঙ্গী বাজার থেকে মালামাল কিনতে পারিনি। রোববার সকালে সেতু খুলে দেয়া হবে শুনে বাজারে এসে দেখি এখনও বন্ধ।’
সেতু বন্ধ থাকায় টঙ্গী বাজারের ক্রেতা কমে গেছে বলে জানিয়েছেন পাইকারি বিক্রেতা মিন্টু হোসেন। তিনি বলেন, ‘সেতু বন্ধ থাকায় রাজধানীর ক্রেতারা টঙ্গী বাজারে আসছেন না। এর ফলে গত কয়েকদিনে লোকসান গুনতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।’
ব্রিজ খুলে দেয়ার বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সেতুর সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি অন্য কোনো সমস্যা না থাকলে ডিএমপির সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা সেতুর উপর দিয়ে যানচলাচল করাতে পারব।
‘স্টেশন রোড থেকে মুন্নু গেট পর্যন্ত ময়মনসিংহমুখী পূর্বপাশে বিআরটির পাইলিং কাজ চলছে। এজন্য পশ্চিম পাশে একটি নতুন করে লেন তৈরির কাজ চলমান। এই লেনের কাজটি শেষ হলে রাস্তা খুলে দিতে পারব।’
বিআরটি প্রকল্প পরিচালক (সেতু) মহিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ব্রিজের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। বিটুমিনের প্রলেপ দেয়ার কাজও শেষ। আমরা ব্রিজ জিএমপি ও ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগকে বুঝিয়ে দিয়েছি। এখন উনারা সমন্বয় করে যানচলাচলের জন্য ব্রিজটি উন্মুক্ত করে দিবে।’
এর আগে শনিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে টঙ্গী সেতু পরিদর্শনে যান সড়ক ও জনপথের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুস সবুর ও বিআরটি প্রকল্প পরিচালক (সেতু) মহিরুল ইসলাম খান।
পরিদর্শন শেষে প্রকৌশলী আব্দুস সবুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের আগে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সেতুর সংস্কারকাজ শেষ করতে পেরেছি। আশা করি, যান চলাচলে আর কোনো অসুবিধা থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, গত ১০ দিন টঙ্গী সেতু বন্ধ থাকায় চলাচলে কিছুটা অসুবিধা হয়েছে। তবে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। পাশের কামারপাড়া সড়ক ও বেইলি ব্রিজ দিয়ে যান চলাচল করেছে। এতে কিছুটা যানজটের মুখে পড়তে হয়েছে এ পথে চলাচলকারীদের।
গত ৯ নভেম্বর রাত ৩টার দিকে সেতুর একটি স্ল্যাবের অংশবিশেষ ধসে পড়ে। ১০ নভেম্বর রাত ১২টা থেকে সেতুটি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে।
এতে উত্তরবঙ্গের গাড়িগুলো সরাসরি টঙ্গী বাজার বেইলি ব্রিজ দিয়ে ঢাকায় ঢোকে। আর ঢাকার গাড়িগুলো বিশ্ব ইজতেমা মাঠের পশ্চিম পাশের সড়ক দিয়ে কামারপাড়া হয়ে রাজধানী ছাড়ে।