আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের পর সংবাদ সম্মেলনে আসছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।
গাজীপুর মহানগরীর হারিকেন এলাকায় নিজ বাসভবনে শনিবার দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করবেন তিনি।
মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী আশরাফুল রানা নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ক্ষমতাসীন দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে শুক্রবার বিকেলে জাহাঙ্গীরের দলীয় সদস্যপদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
প্রায় দুই মাস ধরে জাহাঙ্গীরের শাস্তির দাবিতে ক্ষমতাসীন দলের একাংশের বিক্ষোভের মধ্যে শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
ওই দিন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে, সে ইঙ্গিত আগেই ছিল। মেয়র নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা তিনি মেনে নেবেন।
গত ২২ সেপ্টেম্বর ঘরোয়া আলোচনার একটি রেকর্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে তাকে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করতে শোনা যায়। এরপর আওয়ামী লীগের একটি অংশ জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দলীয় ও আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে বিক্ষোভে নামে।
ফেসবুকে রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ার পর মেয়র জাহাঙ্গীরের শাস্তির দাবিতে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে গাজীপুর ছিল উত্তপ্ত
ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে গত ৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীরের ব্যাখ্যা চায় আওয়ামী লীগ। এতে তাকে ১৫ দিন সময় দেয়া হয়। ১৮ অক্টোবর সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই মেয়র তার ব্যাখ্যা দেন বলে নিউজবাংলাকে জানান।
ব্যাখ্যায় কী লিখেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তার বক্তব্য ছিল, ‘আমি বলেছি এটা মিথ্যা, বানোয়াট। আমাকে ফাঁসানোর জন্য, ছোট করার জন্য এটা করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রেখেই অপেক্ষা করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার যিনি প্রধান, আমার গার্জিয়ান (অভিভাবক), উনি যেটা ভালো মনে করেন, সেটাই হবে।’
২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, ১৯ নভেম্বর তাদের দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে জাহাঙ্গীরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
এই বৈঠকের আগে কয়েক দিনে মেয়রের পক্ষে-বিপক্ষে পোস্টারে সয়লাব হয়ে যায় গাজীপুর। মেয়রবিরোধীরা দাবি করতে থাকেন, জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আসছে। তবে তার অনুসারীরা দাবি করতে থাকেন, তার কিছুই হবে না।
শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আসার পরপর গাজীপুরের সালনা, টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ মিছিল বের করেন মেয়রবিরোধীরা।
টঙ্গীতে মেয়রবিরোধীরা সন্ধ্যার পর আতশবাজি পুড়িয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে তারা একে অন্যকে মিষ্টিমুখ করিয়ে আনন্দ করেন।
মেয়র জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আসার পর মিষ্টিমুখ করেন বিরোধীরা
রাত ৮টার দিকে থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট দলে মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দিকে। এ সময় তারা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান এক প্রতিক্রিয়ায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে নিজের মনগড়া বক্তব্য দিয়ে জাহাঙ্গীর যে অপরাধ করেছে, সে অপরাধের শাস্তি সে পেয়েছে। এতে আমরা আওয়ামী পরিবারের লোক, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের লোক, শুধু গাজীপুরের নয়, সারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সপক্ষের লোক খুশি। এ সিদ্ধান্তের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যদের শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’
তিনি বলেন, ‘গাজীপুরের মানুষ এ সিদ্ধান্তে আনন্দে উল্লসিত। কারণ তাদের অন্তরে জ্বালা তৈরি হয়েছিল এ বক্তব্যের পরে। সে জন্য এর বহিঃপ্রকাশ গাজীপুরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে শুরু হয়ে গেছে। নেতা-কর্মীরা দলের সিদ্ধান্তে খুশি।’
দলীয় সিদ্ধান্ত আসার পর ফোনে মেয়রের প্রতিক্রিয়া পায় নিউজবাংলা। মেয়র জাহাঙ্গীর বলেন, ‘জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত। প্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত। দলীয় প্রধান ও দল যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, সেটা আমি মাথা পেতে নিয়েছি। আমার অস্থিমজ্জাজুড়েই আওয়ামী লীগ।’