বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পৃথিবী অস্থায়ী, আজকে আছি কালকে নাই: মেয়র জাহাঙ্গীর

  •    
  • ১৯ নভেম্বর, ২০২১ ১৫:৩৯

‘আমি কোনো সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় নাই। পার্টি যেটা ভালো মনে করে সেটাই করবে। আমি আওয়ামী লীগ করি, আওয়ামী লীগের সমর্থক। দায়িত্ব, পদ এগুলোতে একেক সময় একেকজন থাকবে। পৃথিবী অস্থায়ী, আজকে আছি কালকে নাই। আমার কোনো অন্যায় নাই, ভুলও নাই।’

ঘরোয়া আলোচনায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের কিছু ভিডিও ও কিছু অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়া নিয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের যখন অপেক্ষা, সে সময় কেমন আছেন গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম?

ঘটনা মাস দুয়েক আগের। আর এই ঘটনায় তার দল আওয়ামী লীগ কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার জন্য এখন অপেক্ষায় তিনি।

দলের সিদ্ধান্ত যখন আসছে, তার আগে নিউজবাংলাকে এই রাজনীতিক তার জীবন দর্শনের কথা তুলে ধরলেন, বললেন, ‘পৃথিবীটা অস্থায়ী। আজকে আছি, কালকে নাই।’

বিকেলে বসছে ক্ষমতাসীন নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভা। জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে সাংগঠনিক কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, তার ঘোষণা আসবে এতে।

মেয়র দলীয় পদ গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকবেন কি থাকবেন না, তার মেয়র পদই হুমকিতে পড়ে কি না, এই বিষয়ে গত কদিন ধরেই রাজধানী লাগোয়া নগরে চলছে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক।

তবে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলছেন, এ নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পার্টি আছে, পার্টি সিদ্ধান্ত নেবে। এ নিয়ে আমি চিন্তিত না। আমি কোনো অন্যায় করিনি, অন্যায়কে প্রশ্রয় দিইনি। যেহেতু পার্টি আমার গার্জিয়ান, নেত্রী আমার গার্জিয়ান ওনারা যেটা ভালো মনে করেন করবেন।’

দলের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাকে কেন্দ্র করে মেয়র বিরোধীরা আগের মতো প্রকাশ্যে তৎপর না থাকলেও ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে মেয়রবিরোধী নানা প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে। আজকের সভায় মেয়রের শাস্তি নিশ্চিত ধরে নিয়ে অনেকেই উল্লাস শুরু করেছেন। তাদের দাবি, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করার অপরাধে দলীয় পদ হারাচ্ছেন জাহাঙ্গীর আলম।

আর মেয়র সমর্থকরা বলছেন, সুপার এডিট করা কথিত বক্তব্যকে পুঁজি করে এক শ্রেণির মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগী লোক অপরাজনীতি করছেন। তারা সফল হলে নগরীর চলমান উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। মহানগর আওয়ামী লীগের যে শক্ত ভিত ছিল তা ভেঙে পড়বে। মেয়রের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব উপস্থিতি রয়েছে তাদের।

মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ইস্যুতে বিভক্ত গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ। দলটির একটি বৃহৎ অংশ মেয়রের এই রাজনৈতিক সংকটকালে পাশে নেই। তারা চান বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তিপূর্ণ মন্তব্য করায় মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কঠিন শাস্তি হোক। তবে দলের আরেকটি অংশ ও সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কাউন্সিলর মেয়রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের দাবি, জাহাঙ্গীর আলমকে দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হলে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ ও সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও ৪৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম নুরু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে নেতার জন্ম না হলে আমরা স্বাধীন দেশ পেতাম না, সেই মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র জাহাঙ্গীর আলম কটূক্তিপূর্ণ মন্তব্য করার সাহস কীভাবে পায়। গাজীপুরের সিনিয়র রাজনীতিকদের বিরুদ্ধেই বিভিন্ন সময়ে মেয়র কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তার এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের বিচার অবশ্যই হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব অপরাধ ক্ষমা করলেও বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করার অপরাধ ক্ষমা করবেন না নিশ্চয়।’

তবে মেয়রের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘গত তিন বছরে জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে গাজীপুরে যে উন্নয়ন হয়েছে তা বিগত ২০ বছরেও হয়নি। দলের স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে রায় দেবেন।’

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান বলেন, ‘দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা প্রত্যেকটি নেতা-কর্মী সে সিদ্ধান্ত মেনে নেব।’

মেয়র জাহাঙ্গীর আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি কোনো সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় নাই। পার্টি যেটা ভালো মনে করে সেটাই করবে। আমি আওয়ামী লীগ করি, আওয়ামী লীগের সমর্থক। দায়িত্ব, পদ এগুলোতে একেক সময় একেকজন থাকবে। পৃথিবী অস্থায়ী, আজকে আছি কালকে নাই। আমার কোনো অন্যায় নাই, ভুলও নাই।’

শোকজের জবাবে আপনি ক্ষমা চেয়েছেন কি না এমন প্রশ্নে মেয়র বলেন, ‘আমি জবাব দিয়েছি নেত্রীর কাছে, অন্য কারও কাছে তো দেই নাই। আমি ক্ষমা চেয়েছি নাকি চাই নাই সেটা অন্যরা জানবে কীভাবে? নেত্রী কি কাউকে দেখাইছে? আমিও কাউকে বলিনি, আমার নেত্রীও কাউকে বলে নাই যতটুকু জানি।’

রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে মেয়র জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। জাতির পিতাও ১৪ বছর জেল খেটেছেন। আমার নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) বহুবার হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। ভালো কাজ করলে শত্রু হয়।’

যে রেকর্ডকে কেন্দ্র করে বিতর্ক

গত ২২ সেপ্টেম্বরের প্রথমে ৪ মিনিটের একটি রেকর্ড ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সে সময় মেয়র ছিলেন দেশের বাইরে। পরে ৫০ মিনিটের আরেকটি রেকর্ড প্রকাশ হয়। এটি থেকেই কেটে কেটে আগের ৪ মিনিটের রেকর্ডটি ফাঁস হয়েছিল।

ভিডিওটির প্রথম দিকে মেয়র জাহাঙ্গীরকে নীল রঙের জামা পরে চেয়ারে বসে কারও সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।

ভিডিওটির প্রথম দিকে মেয়রকে দেখা গেলে বাকি অংশে শুধু অডিও বক্তব্য শোনা যায়। কিছু কিছু অংশ ছিল অস্পষ্ট।

ভিডিওটি কে বা কারা কবে ধারণ করেছেন, সেটি জানা যায়নি। কারাই বা সেটি ফেসবুকে ছেড়েছে, সেটিও অজানা।

ভিডিওটির শুরুতে মেয়র জাহাঙ্গীরকে মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে শোনা যায়। তার দাবি, বঙ্গবন্ধু তার স্বার্থে এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। পাকিস্তান ভাঙার পেছনে রাষ্ট্রপতি হওয়ার বাসনা কাজ করেছে বলেও মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা।

তার ধারণা, বাংলাদেশ স্বাধীন না হয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে থাকলে পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত জাতি থাকত এখানকার মানুষ।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের প্রসঙ্গে টেনে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি রাসেল সাহেবকে এইখানে নিয়া ফালাইছি। আমি চাইছি রাসেল সাহেব ভুল করুক। আমি ইচ্ছা করেই চাইছি হেও মিছিলটাতে এটেন্ড করুক।’

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজমত উল্লাহ আমারে জীবনে মারার লাইগা লোক কন্টাক্ট করছে, সব করছে। এখন সে আমার কর্মী হইছে। ...আমারে জিগায় কী করছ? আমারে কয়দিন জিগাইছে কী করো, কেমনে সম্ভব? হেও সব জানে না! আমি তো খেলা জিতছি।’

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি মন্ত্রীরে নিয়া মাথা ঘামাই না। জাহিদ আহসান রাসেল আছে না? তারে নিয়া আমি এক মিনিটও চিন্তা করি না। খালি জাস্ট শুইনা রাখো, বিশ্বাস করার দরকার নাই। আমি চিন্তা করলাম সে তো মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠই। দরকারটা কী আমার এখানে, পরিবর্তনে কী হইব? এখানে পরিবর্তনের লাভটা কার?’

গত তিন বছরেও গাজীপুর সিটি করপোরেশনে প্যানেল মেয়র নির্বাচন করা হয়নি। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনাও চলছে। এ বিষয়ে ভিডিওটিতে মেয়রকে বলতে শোনা যায়, ‘প্যানেল মেয়র দেই না। দিলে কী হইব? আমারে কি কাউন্সিলররা মেয়র বানাইছে? আমার কি মেয়রগিরি যাইবগা? যেমন আমি এখানে প্যানেল মেয়র করি নাই। রাসেল এমপি অনেকরে মেয়র বানাইয়া দিতেছে, অনেকরে কাউন্সিলর বানাইয়া দিতেছে। প্রধানমন্ত্রী আরেকজনরে ভারপ্রাপ্ত দিব?’

বাংলাদেশের দুটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্তাব্যক্তি তার নিকটাত্মীয় উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বাতাসটা আমার কাছে বইলা যায়।’

বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এমনকি হেফাজতের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলার কথাও বলেন মেয়র জাহাঙ্গীর।

তিনি বলেন, ‘আমি জামায়াতের সাথে চলি না? বিএনপির সাথে চলি না? অন্য পার্টি আছে না সবার সাথেই তো কথা বলি। এই যে আমার সাথে ঘণ্টা তিনেক আগেও বাবুনগরী (হেফাজতের প্রয়াত আমির) প্রায় ৪৭ মিনিট কথা বলছে। সে আসতে চায়। আমি কথা বলছি না?

‘ধীরাশ্রম, ঝাঝর, চান্দরা আছে ৮/১০ বিঘা, দিঘিরচালা আছে ১৬ বিঘা, তেলিপাড়াও আছে। আমার এখানে সাড়ে তিন শ বিঘা জমি আছে। এই নির্বাচনের সময়েও দশ হাজার কোটি টাকা আনছি।’

মেয়রবিরোধী আন্দোলন ও দলীয় শোকজ

বিষয়টি পছন্দ হয়নি স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় অংশের। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে নানাভাবে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তারা। ভিডিওর বক্তব্যের বিষয়ে এরই মধ্যে জাহাঙ্গীরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় সংসদ। সেই নোটিশের জবাবও দিয়েছেন জাহাঙ্গীর।

শুরু থেকেই ভিডিওকে বানোয়াট বলে আসছেন জাহাঙ্গীর। তিনি তার অনুসারীদের নিয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর একটি সমাবেশও করেন। পাশে তার বিরোধীদেরও অবস্থান ছিল। পুলিশ বিরোধীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার পর জাহাঙ্গীর নির্বিঘ্নে সমাবেশ করেন।

এ বিভাগের আরো খবর