জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাড়ানো হয়েছে বাসের ভাড়া। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বন্ধ রয়েছে সিটিং সার্ভিস ও ওয়ে বিল।
তবে বেশ কিছু পরিবহনের শ্রমিকরা মনে করছেন, সরকার নির্ধারিত নতুন ভাড়ায় লাভ হচ্ছে না তাদের। ভাড়া নিয়ে প্রতিনিয়ত যাত্রীদের সঙ্গে জড়াতে হচ্ছে বাগ্বিতণ্ডায়।
এমন বাস্তবতায় বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর মিরপুর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের বাস বন্ধ রাখেন শ্রমিকদের একাংশ। তাদের এ কর্মসূচিতে সায় ছিল মালিকদেরও।
শ্রমিক-মালিকদের এমন প্রতিবাদে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বাস না পেয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের।
বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, বাস না পেয়ে অন্য ব্যবস্থায় গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বরাবরের মতো রাইড শেয়ারিং সার্ভিস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা অন্য পরিবহনগুলো ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে।
অফিসের সময় মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকা থেকে কারওয়ান বাজার যেতে প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারেননি শারমিন নামের এক যাত্রী।
পুরো সময়ে আলিফ পরিবহনের একটি বাস পান তিনি, তবে বাসটি যাত্রীতে ঠাসা থাকায় উঠতে পারেননি।
সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে গন্তব্যে যেতে চাওয়া শারমিন বলেন, ‘যে পথ আমি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় যেতাম, আজকে ৩০০ টাকার নিচে কেউ চাইছে না। বেশি ভাড়া তো চাইছেই, তার সঙ্গে আবার পর্যাপ্ত সিএনজিও (অটোরিকশা) নেই। যেগুলো পাওয়া গেছে, তার অধিকাংশ যাত্রী নিয়ে চলাচল করছিল।’
সরকার ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর বাসমালিক-শ্রমিকরা ধর্মঘটে যান। এর পরিপ্রেক্ষিতে দূরপাল্লায় ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়। আর নগর পরিবহনে ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে বড় বাসে ২ টাকা ১৫ পয়সা আর মিনিবাসে ২ টাকা ৫ পয়সা নির্ধারণ করে সরকার।
কী বলছেন শ্রমিক-মালিকরা
বাস কমিয়ে দেয়ার বিষয়ে শ্রমিকরা জানান, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বিআরটিএর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করেন, কিন্তু এতে যে টাকা বাড়ানো হয়েছে তাতে শ্রমিক-মালিক লাভ পাচ্ছেন না। এদিকে প্রতিদিনই যাত্রীদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে তর্ক ও বিতর্ক হচ্ছে। যাত্রীরা নতুন তালিকা অনুযায়ী ভাড়া দিতে চাইছেন না।
শ্রমিকরা আরও জানান, এখন গাড়ি নিয়ে বের হয়ে দিনে চারটি ট্রিপ দিয়েও বেতন উঠে আসছে না। তাই তারা গাড়ি না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
প্রজাপতি পরিবহনের শ্রমিক আয়নাল বলেন, ‘ভাড়া বাড়ছে, ঝামেলা বাড়ছে। আমাদের তো কিছুই বাড়ে নাই। সবকিছু দিয়ে আমাদের বেতনই থাকে না। গাড়ি চালায়া কী লাভ?’
শ্রমিকদের এই দাবির সঙ্গে একমত বিভিন্ন কোম্পানির বাস মালিকরা।
মঞ্জিল পরিবহনের মালিক মো. সুমন বলেন, ‘যাত্রীদের সঙ্গে প্রতিদিনই স্টাফদের ঝামেলা হচ্ছে। ভাড়া বাড়িয়ে যে সমন্বয় করা হয়েছে, তা ঠিকঠাক হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমার গাড়ি চলে ফ্যান্টাসি কিংডম থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত, কিন্তু ভাড়া চার্টে আছে সাইনবোর্ড পর্যন্ত। যাত্রী তো চার্ট দেখে ভাড়া দেয়। আমাদের এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে।’
মালিক সমিতির ভাষ্য
সিটিং সার্ভিস এবং ওয়ে বিল চালু করতে শ্রমিক ও মালিকদের একাংশের দাবিকে অযৌক্তিক বলেছেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।
তিনি বলেন, ‘সরকার যেভাবে ভাড়া নির্ধারণ করেছে, সেভাবেই ভাড়া আদায় করতে হবে। সিটিং সার্ভিস, ওয়ে বিল বন্ধ থাকবে। এগুলো চালুর দাবি অযৌক্তিক।’
যারা সরকারের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সড়কে বাস নামাবে না বা বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।