বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কিছু মানুষের দেহে আছে এইচআইভি প্রতিরোধ ক্ষমতা?

  •    
  • ১৭ নভেম্বর, ২০২১ ১৪:১৭

এইচআইভির চিকিৎসা আবিষ্কারে বহুমুখী সব গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা, এখনও করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে আছে জিন থেরাপি; দেহ থেকে ভাইরাস নির্মূলে ‘কিক অ্যান্ড কিল’ প্রচেষ্টা; ভাইরাসের বিস্তার কোষের মধ্যেই আটকে রাখতে ‘ব্লক অ্যান্ড লক’ পদ্ধতি ও প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা। আজ পর্যন্ত চিকিৎসকরা মাত্র দুইজনকে চিকিৎসা দিয়ে সম্পূর্ণ সারিয়ে তুলতে পেরেছেন; তাও জটিল ও বিপজ্জনক স্টেম সেল প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।

আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে এইচআইভি ভাইরাস ও এর মাধ্যমে সৃষ্ট প্রাণঘাতী এইডস রোগ নিরাময় অযোগ্য। অংসখ্য গবেষণা সত্ত্বও আজ পর্যন্ত মেলেনি রোগটির চিকিৎসা কিংবা প্রতিষেধক।

তবে এইচআইভি শনাক্ত এক নারী নিজে নিজেই সেরে উঠেছেন বা ভাইরাসমুক্ত হয়েছেন বলে ধারণা করছেন গবেষকরা।

এনবিসি নিউজের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, আর্জেন্টিনার ওই নারীর দেহে এইচআইভি ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছিল। ভাইরাসটি অনিরাময়যোগ্য হলেও ওই নারী সম্ভবত নিজ দেহের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বলেই সেরে উঠেছেন।

ঘটনাটি সত্যি হলে সারা বিশ্বে এ ধরনের দ্বিতীয় ব্যক্তির তথ্য হাতে পেলেন গবেষকরা। ৩০ বছর বয়সী ওই নারীর পরিচয় প্রকাশ করেননি তারা; তাকে আখ্যায়িত করা হচ্ছে ‘এস্পেরাঞ্জা রোগী’ বলে। ইংরেজি শব্দ ‘এস্পেরাঞ্জা’র অর্থ হলো ‘আশা’।

সন্তানের জননী ‘এস্পেরাঞ্জা রোগী’র দেহে প্রথম এইচআইভির উপস্থিতি ধরা পড়ে ২০১৩ সালে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নারী ই-মেইলে স্প্যানিশ ভাষায় এনবিসিকে লিখেছেন, ‘আমি সুস্থ আছি, আমার ভালো লাগছে। আমার পরিবারের সবাই সুস্থ। আমার ওষুধ নিতে হচ্ছে না। অন্য স্বাভাবিক মানুষের মতোই আমি বাঁচছি। আমি সৌভাগ্যবতী।’

চিকিৎসাবিজ্ঞান সাময়িকী অ্যানালস অফ ইন্টারনাল মেডিসিনে গত সোমবার গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের সহ-লেখকরা জানান, বিশ্বজুড়ে এইচআইভি নিয়ে বাঁচছেন প্রায় তিন কোটি ৮০ লাখ মানুষ। ‘এস্পেরাঞ্জা রোগী’র ওপর গবেষণা ফল তাদের নতুন করে আশার আলো দেখাতে পারে। এইচআইভির চিকিৎসা নিয়ে গবেষণার পরিধিও আরও বাড়তে পারে।

দেহের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাসটি নির্মূল করে দিতে পারে বলে প্রচলিত ধারণার পক্ষে দুটি প্রমাণের একটি এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের বস্টনে র‍্যাগন ইনস্টিটিউটের ভাইরাস প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ ও গবেষণা প্রতিবেদনের সহ-লেখক ড. শু ইউ বলেন, ‘এটা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার একটা অসাধারণ চমৎকার।’

ওই নারীর দেহে সক্রিয় এইচআইভি ভাইরাসের উপস্থিতি আছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে রীতিমতো চিরুনি তল্লাশি চালিয়েছেন প্রধান গবেষক ড. নাটালিয়া লফার। তিনি আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসের ইনবার্স ইনস্টিটিউটের ফিজিশিয়ান সায়েন্টিস্ট।

গবেষক দলে না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ফ্রান্সিসকোর ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার এইচআইভি চিকিৎসাবিষয়ক গবেষক ও বিখ্যাত চিকিৎসক ড. স্টিভেন ডিকস বলেন, ‘এখন আমাদের কাজ হলো, কিভাবে কোন প্রক্রিয়ায় এটি সম্ভব হয়- সেটা বের করা। তারপর এইচআইভি ও এইডসের চিকিৎসায় সেই পদ্ধতিটিকে কাজে লাগানো।’

এইচআইভির চিকিৎসা আবিষ্কারে বহুমুখী সব গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা, এখনও করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে আছে জিন থেরাপি; দেহ থেকে ভাইরাস নির্মূলে ‘কিক অ্যান্ড কিল’ প্রচেষ্টা; ভাইরাসের বিস্তার কোষের মধ্যেই আটকে রাখতে ‘ব্লক অ্যান্ড লক’ পদ্ধতি ও প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা।

আজ পর্যন্ত চিকিৎসকরা মাত্র দুইজনকে চিকিৎসা দিয়ে সম্পূর্ণ সারিয়ে তুলতে পেরেছেন; তাও জটিল ও বিপজ্জনক স্টেম সেল প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।

এইচআইভি ভাইরাস দেহের নির্দিষ্ট কিছু দীর্ঘায়ু রোগ প্রতিরোধী কোষে আক্রমণ করে এবং সেখানেই লম্বা সময় পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে পারে। ফলে দেহ থেকে ভাইরাসটিকে পুরোপুরি নির্মূল ভীষণ কঠিন।

২০২০ সালের আগস্টে বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে ড. ইউয়ের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যেটার মূল লেখক ছিলেন তিনি। ওই গবেষণা ৬৫ জনের বিষয়ে তথ্যের বিশ্লেষণ ছিল। আর্জেন্টাইন এই নারীর মতো তাদের দেহেও এইচআইভির বিস্তার নিয়ন্ত্রণ প্রাকৃতিকভাবে হয়েছিল বলে মনে করা হয়।

প্রতি ২০০ এইচআইভি আক্রান্তের মধ্যে এ সংখ্যা মাত্র এক।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ব্যক্তিদের দেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এইচআইভিবাহী কোষগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে ভাইরাস বংশবিস্তার করতে পারে না।

এমনই একজন ব্যক্তি ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা লরিন উইলেনবার্গ। বর্তমানে ৬৭ বছর বয়সী এই নারীর দেহে এইচআইভি পাওয়া গিয়েছিল ১৯৯২ সালে। তার দেহের শত-কোটি কোষ পরীক্ষা করেও পরে সক্রিয় কোনো এইচআইভি ভাইরাস পাননি গবেষকরা।

ড. ইউয়ের মতে, বর্তমান ‘এস্পেরাঞ্জা রোগী’র মতোই প্রাকৃতিকভাবেই এইচআইভি থেকে সেরে উঠেছিলেন উইলেনবার্গও।

২০১৯ সালে ইউয়ের দলকে গবেষণায় সহযোগিতার জন্য স্বেচ্ছাসেবক হন এস্পেরাঞ্জা। তার দেহে সম্ভাব্য সক্রিয় এইচআইভির উপস্থিতি খুঁজতে রক্তের ১২০ কোটি কোষ পরীক্ষা করেন বিজ্ঞানীরা।

২০২০ সালের মার্চে সন্তান প্রসব করেন এস্পেরাঞ্জা। সন্তানটি এইচআইভি নেগেটিভ ছিল। মা ও শিশুর নাড়ির পাঁচ কোটি কোষেও এইচআইভির উপস্থিতি খুঁজেছিলেন তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় অ্যালার্জি ও সংক্রামক রোগ ইনস্টিটিউটের এইডস বিভাগের পরিচালক কার্ল ডাইফেনব্যাচ বলেন, ‘গবেষণায় এই ধারণা মিলছে যে এস্পেরাঞ্জা রোগীর দেহের কোষে বংশবিস্তারে সক্ষম কোনো নিষ্ক্রিয় এইচআইভি ভাইরাসও নেই। এই রোগীদের নিয়ে আমরা যত বেশি কাজ করছি, ততই যেন অতল মহাসাগরে ডুবছি। কীভাবে তারা সেরে উঠেছেন, তা বোঝা কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে।’

ড. উই বলেন, ‘জীবিত, নিষ্ক্রিয় বা পরবর্তীতে সক্রিয় হতে সক্ষম কোনো এইচআইভি ভাইরাসই যে তাদের দেহে নেই, এ বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত কখনোই হওয়া যাবে না। এই রোগীদের মাধ্যমে যা আমরা শিখেছি, তা বাকি রোগীদের ক্ষেত্রে কাজে লাগানোই আমাদের লক্ষ্য।’

গত ৪০ বছরে বিশ্বজুড়ে এইডসে প্রাণ গেছে তিন কোটি ৬০ লাখ মানুষের।

এ বিভাগের আরো খবর