বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাসে টিকিটব্যবস্থা উঠে গেল যে কারণে

  •    
  • ১৬ নভেম্বর, ২০২১ ২২:১০

‘কাউন্টারে টিকিট জালিয়াতি শুরু হলো। যেভাবে জাল টাকা ছাপা হয়, একটি সিন্ডিকেট সেভাবে আমাদের টিকিট ছাপাইত। আর তাদের সঙ্গে মিলল আমাদের কাউন্টারে যারা টিকিট বিক্রি করে তারা।’

রাজধানীতে বাসে টিকিটব্যবস্থা চালু হয়েছিল দুই দশক আগে। টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে এসব বাসে উঠতে হতো। এখন রাজধানীতে কোনো বাসেই আর টিকিটব্যবস্থা নেই।

যাত্রীবান্ধব হওয়া সত্ত্বেও কেন হারিয়ে গেল এ ব্যবস্থা?

এ ব্যাপারে খোঁজখবর করে কয়েকটি কারণ উদঘাটন করেছে নিউজবাংলা। সবচেয়ে বড় কারণ কর্মীদের দুর্নীতি।

কয়েকজন বাসমালিক জানিয়েছেন, টিকিট বিক্রির সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের দুর্নীতির কারণে তারা এ পদ্ধতি তুলে দিতে বাধ্য হয়েছেন। মালিকরা বাসে ভাড়া আদায়ে তাদের নজরদারি আরও পোক্ত করতে অন্য পদ্ধতির শরণ নিয়েছেন।

রাজধানীতে একসময় মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল রুটে চলাচল করত ‘রাজা সিটি পরিবহন’। টিকিট পদ্ধতিতে চলা এই বাস কোম্পানি নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। ওই কোম্পানির অন্যতম মালিক আবদুল্লাহ রাজা নিউজবাংলাকে জানান, শুধু টিকিট পদ্ধতির দুর্নীতির কারণেই তাদের কোম্পানি ডুবে গেছে।

নিউজবাংলাকে আবদুল্লাহ রাজা বলেন, ‘তখন কাউন্টারে যারা টিকিট বিক্রি করত, তারা দুর্নীতি করত। আর বাসের চালক ও হেলপাররাও অনেকে ধান্দা করত। তারা টিকিট ছাড়া যাত্রী তুলে ভাড়া নিজেদের পকেটে ভরত। এতে প্রতিদিন আমাদের ব্যবসায় লস হতো।’

আবদুল্লাহ রাজা বলেন, ‘আমরা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বাস কিনেছি। টিকিটব্যবস্থায় দুর্নীতি হয় দেখে আমরা ড্রাইভারদের কাছে চুক্তি ভিত্তিতে বাসগুলো দিয়ে দিই। এর পরও লস বন্ধ হয়নি। তখন বাসগুলো বিক্রি করে দিই ড্রাইভারদের কাছেই। বর্তমানে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।’

‘ট্রান্স সিলভা’ নামে আরেকটি কোম্পানির বাস চলত রাজধানীর মিরপুর-মতিঝিল রুটে। টিকিটব্যবস্থায় চলাচলকারী এই পরিবহনের মালিক রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কাউন্টারে টিকিট জালিয়াতি শুরু হলো। যেভাবে জাল টাকা ছাপা হয়, একটি সিন্ডিকেট সেভাবে আমাদের টিকিট ছাপাইত। আর তাদের সঙ্গে মিলল আমাদের কাউন্টারে যারা টিকিট বিক্রি করে তারা। এই দুটি পক্ষ মিলে আমাদের কোম্পানির স্টাফদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে এই জাল টিকিট বিক্রি করত। এতে যাত্রী ঠিকই যাচ্ছে, কিন্তু আমরা টাকা পেতাম না।’

তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু প্রেসে ওই জাল টিকিট ছাপানো হচ্ছিল। আমরা এগুলোকে ধরেছিলাম পুলিশ দিয়ে। আমরা রামপুরা ব্রিজের নিচে সে সময় দুই বস্তা জাল টিকিট পেয়েছিলাম। একপর্যায়ে এই দুর্নীতি এমন বেড়ে গেলে যে আমরা আমাদের স্টাফদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়ে গেলাম। এ কারণে টিকিটব্যবস্থা আমরা বন্ধ করে দিই।’

ট্রান্স সিলভার মালিক রেজাউল করিম আরেকটি সংকট উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় পরিবহন কাউন্টার বসানোর কোনো জায়গা নেই, আগেও ছিল না। আমরা টিকিটের অনেক কাউন্টার করেছিলাম সিটি করপোরেশনের আইল্যান্ডের ওপরে। কাউন্টার করার পর দেখা গেল, যত কোম্পানি তত কাউন্টার। একপর্যায়ে সেগুলো ব্যাঙের ছাতা হিসেবে আখ্যায়িত হয়ে গেল। সরকার এত কাউন্টারকে বসতে দেয় না। সিটি করপোরেশনও ওইগুলো উঠিয়ে দিল।’

বাসে সরকারনির্ধারিত ভাড়ার বেশি আদায় রোধে বিআরটিএর অভিযান। ফাইল ছবি

রাজধানীতে বাসমালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ বাস ওনার্সের সভাপতি খন্দকার রফিকুল হোসেন এ ব্যাপারে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে সিস্টেম কেউ মানতে চায় না। স্টাফরা এইটা বেশি অমান্য করত। এ জন্যই টিকিটের বাসগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘টিকিট বাসগুলোতে মালিকরা সরাসরি টাকা পেত। কিন্তু এর পারিপার্শ্বিক যারা ছিল, তাদের এটা পছন্দ হলো না। শেষের দিকে গাড়ির স্টাফরা সঠিকভাবে মালিকদের টাকা দিত না। স্টাফদের সঙ্গে কাউন্টারের দায়িত্বে যারা ছিল, তাদের প্রতিদিন ঝগড়া লেগে থাকত।’

তিনি দাবি করেন, ‘এই পদ্ধতিতে চাঁদাবাজি করা যেত না, এটাও একটা কারণ। তারপরও এই পদ্ধতিটা বেটার ছিল। টিকিট পদ্ধতির বেশির ভাগ বাস ছিল সিএনজিচালিত। আসলে প্রশাসন ও মালিক সমিতি চায়নি টিকিট বাস থাকুক। এ জন্যই বন্ধ হয়েছে।’

রাজধানীতে টিকিট বাস আবার চালু করা সম্ভব কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওয়েবিল সিস্টেম (বিভিন্ন স্থানে লোক দিয়ে প্রত্যক্ষ তদারকি) কেউ কেউ বন্ধ করার জন্য বলছে। কিন্তু এখন আবার টিকিট বাস চালু করলে পাবলিক পেটাবে। কারণ কঠিন জ্যামের মধ্যে কোন গাড়ি কখন আসবে ঠিক রাখা মুশকিল। আগে তো এমন কন্ডিশন ছিল না।’

টিকিট পদ্ধতির যুগে রাজধানীতে বাস চালাতেন পারভেজ মিয়া। এখনও তিনি নতুন পদ্ধতিতে বাস চালান। তিনিও মনে করেন, পরিবহনের স্টাফদের দুর্নীতির কারণেই টিকিট পদ্ধতি মালিকরা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুনছি, টিকিট সিস্টেমে নাকি মালিকরা ঠিকমতো টাকা পাইত না। অনেক গাড়ির স্টাফ দুর্নীতি করত। এ কারণে টিকিট পদ্ধতি ওনারা (মালিকরা) বন্ধ করে দিছে।’

নিউজবাংলাকে তিনি আরও বলেন, ‘ড্রাইভার আর স্টাফ তো সবাই ভালো না। মানে কাউন্টার থেকে টিকিট দিল, আবার যেখানে টিকিট নাই সেখান থেকেও যাত্রী উঠাইল। এমন অনেক দুর্নীতি হইত। শুধু বাসের স্টাফরা দুর্নীতি করত, এমন না। দেখা যাইত, যারা বাস কম্পানিগুলো চাইলত, ম্যানেজার, তারা আরও বেশি দুর্নীতি করত।’

টিকিট পদ্ধতিই ভালো ছিল বলে মনে করেন রাজধানীতে চলা মালঞ্চ পরিবহনের সুপারভাইজার বিপ্লব রহমান।

মোহাম্মদপুর থেকে পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জে চলাচলকারী বাসটির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তখনই সবচেয়ে গোছানো সবকিছু পাইতাম। অবশ্যই টিকিট কাউন্টার পদ্ধতি ভালো ছিল। আজকে পরিবহনে যে ঝামেলা চলতেছে, সেটা সে সময় অনেক ক্ষেত্রে হইতই না।’

এ বিভাগের আরো খবর