বাসে বেশি ভাড়া আদায় বন্ধে সারা দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), কিন্তু অভিযান পরিচালনার আগেই খবর পেয়ে সতর্ক হয়ে যাচ্ছে বাস চালকরা।
প্রতিটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে থাকছে পরিবহন সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা। তারাই ফাঁস করে দিচ্ছে কখন কোথায় অভিযান।
যে সড়কে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা অবস্থান নেন, সেই সড়ক ধরে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলোর চালক ও সুপারভাইজারদের আগে থেকেই সতর্ক করে দিচ্ছেন প্রতিনিধিরা। এতে করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যে পয়েন্টে অবস্থান নেন, তা পার না হওয়া পর্যন্ত যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেয়া থেকে বিরত থাকেন সুপারভাইজার বা কন্ডাকটররা।
এতে করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ওই পয়েন্টে বাসগুলো চেক করার সময় বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ পান না। চেক পয়েন্ট পার হয়ে গেলেই ভাড়া নেয়া শুরু হয়।
কয়েক দিন ধরে চলা বিভিন্ন পয়েন্টের ভ্রাম্যমাণ আদালতগুলোর অভিযান ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। শনিবার সকাল থেকে মানিক মিয়া এভিনিউতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফখরুল ইসলাম।
তার এই অভিযান চলাকালে পর্যবেক্ষণে এসেছিলেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। তার সঙ্গে সংগঠনের অন্যান্য নেতা ও বিভিন্ন পরিবহনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে এই প্রতিনিধিদের বিকাশ, ভিআইপি ২৭, মিরপুর সুপার লিংকসহ অন্যান্য পরিবহনের বাসগুলোকে ফোন কল করে সতর্ক করতে দেখা গেছে। তারপরও বাড়তি ভাড়া আদায় করছে এমন কয়েকটি বাসকে জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় ও পুনর্নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা না রাখার অভিযোগে বিকাশ পরিবহন, স্বাধীন ও ৮ নম্বর বাসকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যখন বিভিন্ন কোম্পানির বাস থামাচ্ছিলেন, তখন পেছনে দাঁড়িয়ে টেলিফোনে ‘সতর্ক হয়ে’ ভাড়া তুলতে বলতে শোনা যায় এক ব্যক্তিকে। তিনি ফোনে বলছিলেন, ‘আড়ং পুলিশ বক্সের পরে ম্যাজিস্ট্রেট আছে। সাবধানে আহিস; গাড়ি কিন্তু আটকাইতাছে।’
ফোনে কথা বলা ওই ব্যক্তির পরিচয় জানতে গেলে জানা যায়, তিনি মিরপুর সুপার লিংক পরিবহনের মালিক হাসান শেখ। এই কোম্পানিতে তার বাস রয়েছে ছয়টি।
ফোন কল করে নিজের বাসের চালক বা সুপারভাইজারকে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতির ব্যাপারে সতর্ক করছিলেন কি না জানতে চাইলে হাসান শেখ তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি কাউকে সতর্ক করিনি। আমরা এখানে সরকারের দায়িত্বশীলদের সাহায্য করতে এসেছি।’
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জানান, রাজধানীতে তাদের আটটি সার্ভেইলেন্স টিম কাজ করছে। প্রতিটি টিমে মালিক-শ্রমিক মিলিয়ে ৮ থেকে ১০ জন করে থাকেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে সহায়তা এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে তাদের টিমগুলো কাজ করছে বলে জানান তিনি।
তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার খরব সড়কে থাকা চালক-সুপারভাইজারদের জানিয়ে দেয়ার বিষয়ে সমিতির মহাসচিবের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অভিযোগটি স্বীকার করেছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকার।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন অভিযান চলার সময় গাড়ি ঘুরিয়ে দেয়ার চর্চা আমাদের মধ্যে আছে। এটা সত্য, খবর পৌঁছে দেয়া হয়, কিন্তু শহরজুড়ে ৮-১০টি টিম কাজ করলে কোথাও না কোথাও ধরা পড়তেই হবে। কেউ খবর দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে দিলে অন্য সড়কে গিয়ে তো ধরা পড়তে পারে।’
ভ্রাম্যমাণ আদালতের তথ্য ফাঁস হলেও এ অভিযানে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে মনে করেন সামদানী খন্দকার। তিনি বলেন, ‘শতভাগ ঠিক করা হয়তো সম্ভব না, কিন্তু এভাবে নজরদারি রাখলে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ঠিক করা সম্ভব।’
অন্যান্য দিনের মতো রোববার বিআরটিএ ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও সিটিং সার্ভিসের নামে অবৈধ স্টিকার লাগানোর অপরাধে ২৪৭টি বাস ও মিনিবাসকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই ২৪৭টি গণপরিবহনের মধ্যে ১৯৮টি ডিজেল চালিত ও ৪৯টি সিএনজিচালিত বাস ও মিনিবাস পাওয়া গেছে।