সিরাজগঞ্জ সদরে যৌনাঙ্গ কেটে ছেলেশিশুকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করা লিপি খাতুনকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বলে দাবি করেছেন তার স্বজন ও এলাকাবাসী।
লিপিকে গুরুতর অবস্থায় সিরাজগঞ্জের ২৫০ শয্যার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি এখন আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
সদর উপজেলার চণ্ডীদাসগাঁতী গ্রামের একটি মাঠ থেকে শুক্রবার গভীর রাতে পাঁচ বছরের শিশু লিমন হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লিমনের মা লিপিকেও আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন গ্রামবাসী। পরে তাকে পুলিশি হেফাজতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সিরাজগঞ্জের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে শনিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, অস্ত্রোপচারের রোগীদের জন্য নির্ধারিত ৩০ নম্বর বেডে রাখা হয়েছে লিপি খাতুনকে। জ্ঞান ফেরার পর থেকে তিনি চিৎকার করে বলছেন, ‘আমার লিমনকে মেরে ফেলেছি, আল্লাহ ওরে নিয়ে গেছে। আমার লিমনের কাছে আমারে নিয়ে যাও।’
লিপি খাতুনের স্বামী ইমরুল কায়েস নিউজবাংলাকে জানান, লিপি তিন বছর ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। শুক্রবার রাতে তিনি সন্তানকে হত্যার পর নিজের পেটে ছুরিকাঘাত করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নৈশপ্রহরীর চাকরি করা ইমরুল বলেন, ‘আমাদের বিয়ে হয় ১২ বছর আগে। আমাদের মেয়ের নাম তামান্না (৮), আর ছেলের নাম লিমন (৫)। অনেক ভালোই ছিল আমার সংসার। হঠাৎ তিন বছর আগে আমার স্ত্রীর মাথায় সমস্যা দেখা দেয়। তখন থেকে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। এরপর আমার বাবার বাড়ি কামারখন্দ থেকে ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি চণ্ডীদাসগাঁতীতেই থাকি।’
তিনি বলেন, ‘স্ত্রীর মাথায় সমস্যার কারণে ছেলেমেয়ের যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্য আমি রাতে কাজ করি। এর মধ্যে লিপিকে তিনবার পাবনা মানসিক হাসপাতালেও ভর্তি করেছিলাম। অনেক চিকিৎসা করেছি। শীত এলেই ওর মাথায় সমস্যা বেশি দেখা দেয়।’
ইমরুল বলেন, ‘এবারও কয়েক দিন ধরে লিপির সমস্যা চলছিল। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অফিসে অনেক কাজ থাকায় কয়েক দিন পর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কাল (শুক্রবার) রাতে আমি অফিসে নাইট ডিউটি করার সময় হঠাৎ ফোন আসে আমার ছেলে লিমনকে মেরে ফেলেছে। আমি এসে দেখি লিমন আর নেই, আর লিপিকে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে।’
লিপির বাবা হেলাল উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলেটা প্রতিবন্ধী। পাঁচ মেয়ের মধ্যে লিপি সবার বড়। তিন বছর ধরে আমার মেয়ে মানসিক রোগী, আমরা অনেক চিকিৎসা করেছি। দুই বছর ধরে ওরা আমার বাড়িতেই থাকে। কাল রাতে কী দিয়ে কী হলো আমরা বুঝলাম না।’
প্রতিবেশী নুরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত রাত আড়াইটার দিকে চিৎকার শুনে দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে দেখি, ফাঁকা জমির মধ্যে রক্তমাখা পেট ধরে লিপি বলছে, আমি ছওয়ালকে মাইরা হালাইছি। আমরা অনেক খোঁজাখুঁজির পরে দেখি, বেশ কয়েকটি জমির পর ঘাসের ক্ষেতে লিমনের লাশ পাটের ছালা দিয়ে ঢাকা রয়েছে।’
স্থানীয় মাতব্বর এমদাদুল হক এমদাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাতে ওদের চিৎকার শুনে এসে দেখি লিপির ছেলের লাশ পড়ে আছে জমিতে, আর লিপি পেট চেপে ধরে বলছে আমি লিমনকে মারছি। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দিই। রাতেই আলীম দারোগা এসে লিমনের লাশ উদ্ধার করে আর লিপিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। লিপি দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগে ভুগছিলেন।’
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ রাতে লিপি খাতুনকে রক্তাক্ত অবস্থায় ভর্তি করে। আমরা রাত থেকেই তাকে চিকিৎসা দিচ্ছি। সে অনেকটা মানসিক রোগী বলে আমরা জানতে পেরেছি। তার পেটে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের কারণে অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। এখন সে শঙ্কামুক্ত।’
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সন্তানকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করেন লিপি খাতুন। কেন এই হত্যা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মানসিক ভারসাম্যহীনতা, নাকি অন্য কিছু রয়েছে তা তদন্তে জানা যাবে। ময়নাতদন্তের পর আমরা শিশুটির মরদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছি। এ ঘটনায় শিশুর চাচা থানায় মামলা করেছেন।’