বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরে ফরাসি ব্যবসায়ীদের এখানে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্যারিসে বুধবার দুপুরে ফ্রান্সের ব্যবসায়ী নেতা ও উদ্যোক্তাদের সঙ্গে এক সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশে ফরাসি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ এখনো অনেক কম। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে এখানে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা প্রত্যক্ষ করতে ফরাসি উদ্যোক্তাদের আমন্ত্রণ জানাই।’
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে কাজ করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ফ্রান্সের বিনিয়োগকারীদের সহায়তা করতে পারলে খুশি হব।’
ফরাসি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে আপনাদের বিনিয়োগ প্রবেশ অধিকতর সহজ করতে অংশীদার হিসেবে একজন স্থানীয় উদ্যোক্তাকে খুঁজে নিতে পারেন।’
ফরাসি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্ব গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে ফরাসি ব্যবসায়ীরা অধিক লাভবান হবেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি নিশ্চিত ফরাসি উদ্যোক্তারা তাদের বিনিয়োগের সর্বোচ্চ লাভ ফেরত পাবেন।’
বাংলাদেশ ব্যবসা ও বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য- এমনটা মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এই অঞ্চলে সবচেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশে বিনিয়োগ করার আমন্ত্রণ জানাই। আমাদের শক্তিশালী আইনি ব্যবস্থা বিদেশি বিনিয়োগকে সুরক্ষা দেয়।’
সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২৮টি হাইটেক পার্ক স্থাপনের উল্লেখ করে সেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে আঞ্চলিক বাজারগুলোতে প্রবেশ সুবিধা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে আঞ্চলিক কানেক্টিভিটির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। এ অঞ্চলের সঙ্গে আমাদের সড়ক, রেল, ম্যারিটাইম, জ্বালানি ও ডিজিটাল কানেক্টিভিটি সত্যিকারের গেম-চেঞ্জার হবে।’
ভৌগোলিক অবস্থানের সুবাদে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বড় অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সেতু হিসেবে কাজ করবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঙ্গলবারের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই বৈঠকের আলোচনায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিতে একমত হয়েছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অর্থনৈতিক অংশীদারত্বেও দ্বিপক্ষীয় সুসম্পর্কের প্রতিফলন হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ। দ্বিপক্ষীয় লাভের ভিত্তিতে ফ্রান্সের ব্যবসায়ীদের উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে বাংলাদেশ প্রস্তুত।’
শেখ হাসিনা বলেন, সার্বিকভাবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধির জন্য সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের অঞ্চলটা অধিকতর শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ।
মহামারিও বাংলাদেশের ব্যাপক বিনিয়োগ ও অবকাঠামো প্রকল্পের কার্যক্রমের গতি কমাতে পারেনি বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা একটি শান্তিপূর্ণ, সর্বজনীন ও সমৃদ্ধ দেশ গড়া।
২০১৭ সালে প্যারিস সফরের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই সফরকালে যেটি বলেছিলাম সেটি এখানে আবার বলছি। আমরা একসঙ্গে উভয় দেশের অর্থনীতির জন্য লাভজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারি।’
বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুই দেশের বাণিজ্য দুই বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ফ্রান্স এখন বাংলাদেশের পঞ্চম রপ্তানি গন্তব্য। ২০২৫ সালের মধ্যে বাণিজ্য দ্বিগুণ করতে হবে।
গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরেন টানা তিনবারের সরকারপ্রধান। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশ ৫ দশমিক ২১ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এশিয়া প্যাসিফিকে এই প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কৌশল হচ্ছে জনগণের জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে কাজ করা।
আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন নীতিমালার কারণে আর্থ-সামাজিক সেক্টরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, বিনা মূল্যে গৃহ প্রদান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বাংলাদেশের অর্জন ব্যাপকভাবে স্বীকৃত।
আগামী বছরের মার্চের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষকে কোভিড-১৯ টিকার আওতায় আনতে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।