বিদেশি উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। এ কারণে দ্বিপক্ষীয় উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। অথচ এক দশক আগেও বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতো বহুপক্ষীয় উৎস থেকে বেশি ঋণ পেত বাংলাদেশ। ফলে বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে কাঠামোগত পরিবর্তন এসেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার বৈদেশিক উৎস থেকে যত ঋণ নিয়েছে, তার ৬৪ শতাংশই এসেছে দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে। অবশিষ্ট ৩৪ ভাগ এসেছে বহুপক্ষীয় উৎস থেকে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নের জন্য দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ বেড়েছে।’
দেশে বর্তমানে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এগুলোতে অর্থায়ন করছে চীন, জাপান, রাশিয়া ও ভারতের মতো দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগীরা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, দ্বিপক্ষীয় উৎস থেকে পাওয়া ঋণের নেতিবাচক ও ইতিবাচক দুটি দিকই রয়েছে। এই ঋণে সুদের হার তুলনামূলক একটু বেশি। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে জটিল শর্তও জুড়ে দেয়া হয়। তবে এসব ঋণের অর্থ দ্রুত ছাড় হয়।
অপরপক্ষে, বহুপক্ষীয় ঋণে সহজ শর্ত ও সুদ হার কম থাকলেও উন্নয়ন সহযোগীদের সেই ঋণ পেতে অনেক বিলম্ব হয়।
মেট্রোরেলসহ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপান। সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষে এই প্রকল্পের ৭৬ শতাংশ অর্থের জোগান দিচ্ছে জাপান উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)।
এক লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ৮০ শতাংশ অর্থায়ন করছে রাশিয়া। পদ্মা রেল লিংক সেতু, কর্ণফুলী টানেলসহ আরও কয়েকটি বড় প্রকল্পে চীনের অর্থায়ন রয়েছে। এ ছাড়া, ভারতের ঋণে বাস্তবায়ন হচ্ছে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প। দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ থেকে ঋণ আনছে সরকার।
মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার গত অর্থবছরে বৈদেশিক উৎস থেকে ৫৭ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। ওই অর্থবছরে পরিশোধ করা হয়েছে ১১ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা।
বাজেট বাস্তবায়নে এখনও বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরশীল সরকার। বিশেষত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশি সহায়তা লাগে।
বহুপক্ষীয় তথা উন্নয়ন সহযোগী ও দ্বিপক্ষীয় উৎস থেকে এই ঋণ সংগ্রহ করা হয়। এসব ঋণের বেশির ভাগই নমনীয় বা কনসেশনাল হয়। এ জন্য বৈদেশিক উৎস থেকে বেশি ঋণ নিতে আগ্রহী সরকার।
বাংলাদেশ বৈদেশিক উৎস থেকে যত ঋণ নিয়েছে তার ৩৬ ভাগই এসেছে বিশ্বব্যাংক থেকে। এককভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩ শতাংশ ঋণ নেয়া হয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে।
দ্বিপক্ষীয় উৎসের ক্ষেত্রে জাপান থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ নেয়া হয়েছে। এই ঋণের ৫১ ভাগই এসেছে জাপান থেকে। আর চীন ও রাশিয়ার অংশ ১৯ শতাংশ করে। এ ছাড়া, ভারতের ৪ শতাংশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার ৩ শতাংশ ঋণ রয়েছে।