বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শেয়ার দরে স্বস্তি, ১২৪ কর্মদিবসের সর্বনিম্ন লেনদেনে অস্বস্তি

  •    
  • ৯ নভেম্বর, ২০২১ ১৫:১০

গত ২৮ এপ্রিল লেনদেন ছিল ৯৪০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আর মঙ্গলবার লেনদেন কোনো রকমে এক হাজার কোটি টাকা পেরিয়ে হয়েছে ১ হাজার ৭ কোটি ৭৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।

টানা পতনের মধ্যে থাকা পুঁজিবাজারে অবশেষে একটি ভালো দিন দেখলেন বিনিয়োগকারীরা। তবে লেনদেন কমল আরও।

বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি থাকায় নতুন করে বিনিয়োগ না করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। একপর্যায়ে লেনদেন হাজার কোটি টাকার নিচে থেমে যাবে- ধারণা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা ছাড়ায় এই ঘর।

তবে যে লেনদেন হয়েছে, তা ১২৪ কর্মদিবস পর হয়েছে সর্বনিম্ন।

গত ২৮ এপ্রিল লেনদেন ছিল ৯৪০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আর মঙ্গলবার লেনদেন কোনো রকমে এক হাজার কোটি টাকা পেরিয়ে হয়েছে ১ হাজার ৭ কোটি ৭৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।

সপ্তাহের প্রথম দুই কর্মদিবসে ১০৭ পয়েন্ট সূচক পতনে উৎকণ্ঠিত বিনিয়োগকারীরা তৃতীয় কর্মদিবসের লেনদেনের দিকে অধীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন।

আগের কয়েক দিনের মতোই আধা ঘণ্টায় সূচক বেড়ে যায়। সকাল ১০টা ৫৯ মিনিটে আগের দিনের চেয়ে ৬০ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হচ্ছিল। পরের ৪০ মিনিটে সেখান থেকে ৫৪ পয়েন্ট সূচক পড়ে যাওয়ায় আরও একটি বড় পতনের শঙ্কা তৈরি হয়।

তবে বেলা ১১টা ৭ মিনিট থেকে ১২টা ৫৩ মিনিট পর্যন্ত টানা সূচক বাড়ে শেয়ার দরে উত্থানের কারণে। সে সময় আগের দিনের চেয়ে ৮৫ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হচ্ছিল। এরপর বেলা শেষে কিছুটা কমে ৬৮ পয়েন্টে বেড়ে শেষ হয় লেনদেন।

দুই দিনে ১০৭ পয়েন্ট সূচক পতনের পর ৬৮ পয়েন্টের এই উত্থান বিনিয়োগকারীদেরকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে

গত বছর করোনার প্রাদুর্ভাবের পর পুঁজিবাজারে ধস নামে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার পর ঘুরে দাঁড়ানো শুরু হয়। সেই সময় থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত টানা উত্থান হয়। সূচক বহু বছর পর ছয় হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি উঠে আসে।

তবে ১৪ জানুয়ারি থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাজার সংশোধনে সূচক প্রায় ৯০০ পয়েন্ট কমে যায়। এরপর ৫ এপ্রিল লকডাউনের প্রথম দিন থেকে জুনের শেষ পর্যন্ত হয় আরেক দফা উত্থান। সূচক ছাড়িয়ে যায় ৬ হাজার পয়েন্ট।

ওই অবস্থানে এক মাস ঘুরপাক খাওয়ার পর জুলাইয়ের শেষ থেকে আরেক দফা উত্থান হয় ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সূচক ছাড়ায় ৭ হাজার পয়েন্ট।

১২ সেপ্টেম্বর থেকে আবার দর সংশোধনেও বড় মূলধনি কয়েকটি কোম্পানির উত্থানে সূচক বেড়ে গত ১১ অক্টোবর ২০১০ সালের মহাধসের পর সর্বোচ্চ অবস্থান ৭ হাজার ৩৪৫ পয়েন্ট পৌঁছে।

কিন্তু এরপর থেকে বড় মূলধনি কোম্পানিগুলোরও দরপতন শুরু হয়। এতে সূচক কমে আসতে থাকে। সোমবার গত ১৯ আগস্টের পর প্রথমবারের মতো ৬ হাজার ৭০০ পয়েন্টের নিচে নেমে আসে।

এর মধ্যে রোববার ৩০৩টি আর সোমবার এক দিনে ২৯৫টি কোম্পানির শেয়ার দর কমে যায়।

তবে বিনিয়োগকারীদের কিছুটা স্বস্তির দিনে ২২৩টি কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ে, বিপরীতে দর হারায় ৯৯টি। দর ধরে রাখে ৫৪টি।

বেশ কয়েকদিন পর সিমেন্ট, বস্ত্র, ওষুধ ও রসায়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ও আর্থিক খাতের শেয়ারের দাম বেড়েছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে বেশিরভাগের ইউনিটও বেড়েছে ১০ থেকে ২০ পয়সা করে। তবে লেনদেন খুবই কম।

বিমা, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, তথ্য প্রযুক্তি ও বিবিধি খাতে ছিল মিশ্র প্রবণতা।

সূচক বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকায় ছিল এই ১০টি কোম্পানি

সূচক বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকায় ছিল লাফার্জ হোলসিম, স্কয়ার ফার্মা, আইসিবি, ইউনাইটেড পাওয়ার, বেক্সিমকো ফার্মা, বিকন ফার্মা, পাওয়ার গ্রিড, বেক্সিমকো লিমিটেড, জিপিএইচ ইস্পাত ও বাংলাদেশ সাবমেরিক কোম্পানি।

এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ৩৮.০৪ পয়েন্ট।

পক্ষান্তরে তুলনামূলক ভালো দিনেও সূচক টেনে ধরেছে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানি, গ্রামীণ ফোন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, রেনাটা, আলিফ, ইউসিবি, সাউথবাংলা ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, বিএনআইসিএল ও পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স।

এই ১০টি কোম্পানির শেয়ার দর হারানোয় সূচক থেকে হারিয়ে গেছে ১০.৭৫ পয়েন্ট।

এই ১০টি কোম্পানির দাম কমায় সূচক কমেছে সবচেয়ে বেশি

লেনদেনে সেরা যারা

লেনদেনে বরাবরের মতোই সেরা বেক্সিমকো লিমিটেড। কোম্পানিটির ৯৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে। শেয়ার দর বেড়েছে দশমিক ৮১ শতাংশ।

কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারে যোগ হয়েছে ১ টাকা ৪০ পয়সা। আগের দিন দাম ছিল ১৭২ টাকা ৯০ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ১৭৪ টাকা ৩০ পয়সা।

লেনদেনের শীর্ষে থাকা দ্বিতীয় কোম্পানি ছিল ওরিয়ন ফার্মা, যার শেয়ার দর বেড়েছে ৫.০৬ শতাংশ। শেয়ারদর ৪ টাকা ৯০ পয়সা যোগ হয়ে পৌঁছেছে ১০১ টাকা ৭০ পয়সায়।

লেনদেন হয়েছে ৫৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

লেনদেনের শীর্ষে তৃতীয় অবস্থানে থাকা লাফার্জ হোলসিম সিমেন্টের শেয়ার দর বেড়েছে ৬.৮৭ শতাংশ। লেনদেন হয়েছে ৫৯ কোটি ২২ লাখ টাকা।

বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ারদর বেড়েছে ১.৯৫ শতাংশ। ২১৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২২৩ টাকা ৪০ পয়সা। লেনদেন হয়েছে ৩৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।

কেবল তিন খাতেই একশ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে

স্কয়ার ফার্মায় লেনদেন হয়েছে ৩৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। শেয়ার দর বেড়েছে ১.৫২ শতাংশ।

এছাড়া জেনেক্সিল ইনফোসিসের লেনদেন হয়েছে ৩০ কোটি ৭৬ লাখ টাকার। শেয়ার দর বেড়েছে ১.১৮ শতাংশ।

আইএফআইসি ব্যাংকে লেনদেন হয়েছে ২৮ কোট ৯৩ লাখ টাকা। শেয়ারদর ছিল অপরিবর্তিত।

এনআরবিসির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। শেয়ার দর ৩৮ টাকা ৭০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৩৮ টাকা ৬০ পয়সা।

ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লেনদেন হয়েছে ২৩ লাখ ৩ লাখ টাকা।

আলিফ ম্যানিফেকচারিং কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। শেয়ারদর কমেছে ৪.৮১ শতাংশ।

খুশির দশ কোম্পানি

ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স টানা পতনের বৃত্ত থেকে বের হয়ে এক দিনেই দর বেড়েছে ৯.৯২ শতাংশ।

এরপরই আছে বিমা খাতের সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স। সদ্য তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির দর টানা তৃতীয় দিন দিনের সর্বোচ্চ দরের সীমা ছুঁয়েঠে। তবে লেনদেনের পরিমাণ খুবই কম। হাতবদল হয়েছে কেবল ২৩৪টি শেয়ার।

এছাড়া ওষুধ ও রসায়ন খাতের এএফসি এগ্রোর শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৬৮ শতাশং।

আট শতাংশ পর্যন্ত শেয়ার দর বেড়েছে একটি কোম্পানির। সেটি ছিল প্রকৌশল খাতের গোল্ডেনসন। কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ৮.২০ শতাংশ।

শেয়ারদর বাড়লেও বেশিরভাগ খাতেই লেনদেন কমছে

খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের লাভেলো আইসক্রিমের দর ৭.৬৬ শতাংশ, পেনিনসুলারের দর ৭.২৭ শতাংশ এবং বস্ত্র খাতের হামিদ ফেব্রিক্সের দর বেড়েছে ৭.১৫ শতাংশ।

ছয় শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে লাফার্জ হোলসিমের। প্রাইম টেক্সটাইলের দর বেড়েছে ৫.৪৬ শতাংশ, আর তমিজ উদ্দিন টেক্সটাইলের ৫.৩৯ শতাংশ।

সব মিলিয়ে তিনটি কোম্পানির দর ১০ শতাংশের আশেপাশে, একটির দর ৮ শতাংশের বেশি, ৭ শতাংশের বেশি তিনটির দর, চারটির দর ৬ শতাংশের বেশি, ৪টির দর ৫ শতাংশের বেশি, ১৪টির দর ৪ শতাংশের বেশি, ২৪টির দর বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি।

যে দশে ছিল লোকসান

দিনের সর্বোচ্চ দর কমে শেয়ারধারীদের লোকসানে নিয়ে গেছে যে দশ কোম্পানি তার মধ্যে প্রথমেই আছে আজিজ পাইপ। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৭.৮৭ শতাংশ। মোট লেনদেন হয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

এছাড়া আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের দর কমেছে ৪.৮০ শতাংশ। আগের দিন কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ২০ টাকা ৮০ পয়সা। মঙ্গলবার তা হয়েছে ১৯ টাকা ৮০ পয়সা।

জুন স্পিনার্সের দর ৪.৪৫ শতাংশ, আমরা নেটওয়ার্কেটর দর ৪.০২ শতাংশ, জেমিনি ফুডের দর ৩.৯১ শতাংশ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির দর ৩.৪৪ শতাংশ, ই-জেনারেশনের দর ৩.২২ শতাংশ, ফার্মা এইডের দর ২.৯৮ শতাংশ, আলহাজ্ব টেক্সটাইলের দর ২.৯৮ শতাংশ, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের দর ২.৮৯ শতাংশ বেড়েছে।

সব মিলিয়ে একটির দর প্রায় আট শতাংশ, তিনটির দর ৪ শতাংশের বেশি, ৩টির দর তিন শতাংশের বেশি, ১৬টির দর বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি।

এ বিভাগের আরো খবর