ফরিদপুরের মধুখালীতে ধানচাষে পার্চিং পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছেন উপজেলার কৃষকরা।
পার্চিং একটি ইংরেজি শব্দ, যার অর্থ হলো ফসলের ক্ষেতে বা মাঠে ডাল বা কঞ্চি পুঁতে দেয়া। এর ফলে কীটনাশক ছাড়াই ফসল রক্ষা করা যায়।
জমিতে উঁচু স্থানে পাখি বসার সুযোগ তৈরি করাকেই পার্চিং বলা হয়। পাখি ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফসল রক্ষা করে। এটি পরিবেশবান্ধব এবং লাভজনক। কারণ এর মাধ্যমে কীটনাশকের ব্যবহার ও ফসলের উৎপাদন খরচ কমে। এই পদ্ধতির আরও একটি সুবিধা হলো পাখির বিষ্ঠা জমিতে জৈব পদার্থ যোগ করে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে।
মধুখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রোপা আমনের জমিতে পাটের খড়ি বা বাঁশের কঞ্চি পুঁতে রাখা। একটি কাঠি আড়াআড়ি বেঁধে দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে একটি আড়া।
চলতি রোপা আমন মৌসুমে রোপা আমন ধানের জমিতে কৃষকেরা পার্চিং তৈরি করছেন। এখানে পাখি বসে ধানক্ষেতের পোকা খেয়ে নিচ্ছে। ফলে ধানের উপরিভাগে আর কীটনাশক দিতে হচ্ছে না।
পার্চিংয়ে বসে পাখিরা মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গি পোকা, ধানের স্কিপা পোকার মথ, শিষ কাটা লেদা পোকা, সবুজ শুঁড় লেদা পোকা, শুঁড় ঘাস ফড়িং, লম্বা শুঁড় ঘাসফড়িং ও উড়চুঙ্গা ধরে খায়।
জমিতে সার দেয়ার পর থেকেই রোপা-আমন, ইরি-বোরোসহ বিভিন্ন ফসলের জমিতে বাদামি ঘাসফড়িং বা কারেন্ট পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা এবং চুঙ্গি-মাজরাসহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। এতদিন কৃষকরা এসব পোকার আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচাতে কীটনাশকসহ বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করছিলেন।
মধুখালী উপজেলার বাগাট গ্রামের চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পার্চিং পদ্ধতিতে ধানচাষ করে লাভবান হয়েছি। আমার মতো অনেকেই এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। এলাকায় খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পার্চিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ।’
গাজনা ইউনিয়নের আরেক চাষি আসলাম শেখ বলেন, ক্ষতিকর পোকামাকড় চুপচাপ বসে রস চুষে খায় বা ফসল কেটে বা কুরে কুরে খায়। পাখিরা যেন সহজেই ক্ষতিকর পোকামাকড়গুলো দেখতে পায় এবং ধরতে পারে সে জন্যই একটু ঘন ঘন পার্চিং দেয়া হয়। বিঘাপ্রতি পাঁচ থেকে ছয়টি পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করলে কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না।
মধুখালী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এই পদ্ধতিতে ফসলি জমিতে পোঁতা ডালগুলোর ওপর পাখি বসে ফসলি জমির ক্ষতিকারক পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলে। ফলে আর কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। যার ফলে কম খরচে অধিক ফলন পাওয়া যায়। তবে সব ধরনের পাখি পার্চিংয়ে বসে না। মূলত ফিঙ্গে, শালিক, বুলবুলি, শ্যামা, দোয়েল, সাত ভায়রা– এসব পাখি পার্চিংয়ে বসে পোকা ধরে খায়।
তিনি আরও জানান, গবেষণায় জানা যায়, একটি ফিঙ্গে পাখি সারা দিনে কমপক্ষে ৩০টি মাজরা পোকার মথ, ডিম ও পুত্তলি খেয়ে থাকে। একটি পাখির মাধ্যমে প্রতি মাসে হাজার হাজার পোকা ধ্বংস করা সম্ভব হয়। ফসল রোপণের পরপরই পার্চিং স্থাপন করতে হবে।