আরফান হোসেন চৌধুরী। রাজশাহী রিভারভিউ কালেক্টরেট স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। তথ্য-প্রযুক্তি বদলে দিচ্ছে তার স্কুলের লেখাপড়ার ধরন। স্কুলে যুক্ত হয়েছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। আগে যেখানে ক্লাসে এলে পেছন থেকে শিক্ষকদের সব কথা ঠিকমতো বুঝতে পারত না। এখন সে সমস্যা নেই, সামনে-পেছনে সব শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়া মনিটরে শিক্ষক কী পড়াচ্ছেন তা দেখতে পায়, মনোযোগ নষ্ট হয় না। আবার স্কুলের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব তাদের তথ্য-প্রযুক্তির সম্পর্কে ভীতিও দূর করেছে।
আরফান হোসেন চৌধুরী জানায়, ‘আগে ক্লাসে পেছনে বসলে সবকিছু বুঝতে পারতাম না। এখন স্যার কী পড়াচ্ছেন তা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি, বুঝতে আরও সুবিধা হচ্ছে। আগের মতো কষ্ট করে পড়া মুখস্থ করতে হচ্ছে না, চোখে দেখছি, আমি শুনছি, বুঝে পড়তে পারছি।
‘আমি এখন কম্পিউটার চালাতেও জানি। তবে কম্পিউটার চালানো শিখতে বাইরে কোথাও যেতে হচ্ছে না। স্কুলে লেখাপড়ার পাশাপাশি বিরতিতে কম্পিউটার শিখতে পারছি। স্যাররা যত্ন করে শেখাচ্ছে, যেকোনো প্রশ্ন করতে পারছি, তার উত্তর দিচ্ছে। কম্পিউটার চালানো নিয়ে আগে যে ভয় ছিল তা এখন নেই। পড়ালেখা শেষ করে আমি নিজে কম্পিউটার কিনে অনলাইনে কাজ করব।’
ডিজিটাল ল্যাবে বেশি কথা হয় একই ক্লাসের শিক্ষার্থী কামরুন নাহারের সঙ্গে। সে জানায়, ‘স্কুল থেকে কম্পিউটার চালানো শিখেছি। পড়ালেখার জন্য ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন তথ্য বের করতে পারি। যারা বিদেশে খবর দেখতে পারি। কম্পিউটারে বাংলা ও ইংরেজি কম্পোজ করতে পারি। মেইল পাঠাতে পারি।’
শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবে বেশ কয়েকটি কম্পিউটার রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীরা স্কুলজীবন থেকেই তথ্য-প্রযুক্তির প্রাথমিক বিষয়গুলো জেনে নিচ্ছে। তাদের মধ্যে সৃজনশীলতা তৈরি হচ্ছে। এই শিক্ষা তাদের জীবনে কাজকে সুগম করবে বলে মনে করে তারা।
স্কুলটির শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বাড়াতে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নিয়মিত প্রকাশ করা হয় দেয়াল পত্রিকা ‘অনুপ্রাস’। এটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলছে, লেখার জন্য ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছে শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি দেয়াল পত্রিকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ রাসেলকে নিয়ে লিখেছে বিদ্যালয়টির দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জারমিন আক্তার।
জারমিন বলে, ‘দেয়ালিকা লিখতে গিয়ে দুজন মহান ব্যক্তির জীবন এবং তাদের জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধু ও শেখ রাসেলকে নিয়ে লিখতে গিয়ে আমি বইয়ের তথ্যের পাশাপাশি শিক্ষকদের সহযোগিতায় ইন্টারনেট থেকেও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছি। তারপর সেগুলো দেখেছি এবং নিজেই কম্পোজ করে জমা দিয়েছি।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মনোয়ারা পারভীন বলেন, ‘সরকার স্কুলগুলোতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের মাধ্যমে স্কুল থেকেই শিক্ষার্থীদের তথ্য-প্রযুক্তির হাতেখড়ির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভবিষ্যৎ যে তথ্য-প্রযুক্তির যুগ, তা স্কুল থেকে শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারছে। যার ফলে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কে তাদের আগ্রহ তৈরি করছে।
‘অনেকেই নিজেদের কর্মসংস্থানের চিন্তাভাবনা করছে এখন থেকেই, কারণ লেখাপড়ার পাশাপাশি তারা অনলাইনে একটু একটু করে আয় করতে পারবেন সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নেবে।’
সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়ন এবং
২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করতে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর হতেই আইসিটি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের অধীন ‘সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে ৬৪ জেলায় নির্বাচিত পাঁচ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়।
এর মধ্যে ৩০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে স্কুল অফ ফিউচার হিসেবেও রূপান্তর করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ৩৬ হাজার শিক্ষককে আইটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
এক লাখ শিক্ষার্থীকে কম্পিউটারের প্রাথমিক জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে। সে সঙ্গে ২০ হাজার শিক্ষক ও বেকার যুবককে বিদেশি ভাষার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয় (পাইলট) পর্যায়ে ১৬০টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। এসব ডিজিটাল ল্যাব তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং নতুন প্রজন্মকে আইটি পারদর্শী দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে সারা দেশে আরও ৫ হাজার স্কুলে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে।