বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

  •    
  • ৭ নভেম্বর, ২০২১ ২৩:০১

মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সংগঠন ‘লেটস টক মেন্টাল হেলথ’-এর তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে পর্যাপ্ত সাইকিয়াট্রিস্ট ও সাইকোলোজিস্ট নেই। আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠানও কম। জনসংখ্যার বিচারে প্রয়োজনের তুলনায় মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক চিকিৎসকের সংখ্যা অনেক কম।

দেশে তরুণরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এ জন্য অভিভাবক, পরিবার, সমাজ সবাইকে সচেতন হতে হবে।

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রত্যয়ও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে রোববার সন্ধ্যায় মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সংগঠন ‘লেটস টক মেন্টাল হেলথ’-এর তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

জাহিদ মালেক বলেন, ‘সভ্যতার শুরুতে মানুষ সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হতো। ওষুধ, টিকায় সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এরপর অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়া শুরু হয়। হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস বাড়তে শুরু করে। এখন মনোরোগ জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘দেশে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি আত্মহত্যা করে। সারা বিশ্বে বয়স্করা আত্মহত্যায় এগিয়ে থাকলেও আমাদের দেশে তরুণরাই বেশি আত্মহত্যা করে। অন্যান্য দেশে আত্মহত্যায় ছেলেরা এগিয়ে থাকলেও আমাদের দেশে মেয়েরা বেশি এগিয়ে। এর যেসব কারণ আমরা দেখে থাকি, তার মধ্যে মূল কারণ হিসেবে মাদকের ব্যবহারকেই দেখি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে আত্মহত্যার হার এত না হলেও প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। অন্যান্য দেশে আরও বেশি। বিশ্বে ১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করে। জাপানসহ আরও কয়েকটি দেশে এর হার ৫ শতাংশ।’

কারণ প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, ‘একটা ছেলে বা মেয়ে স্কুলে চান্স পেল না, ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারল না, সে হতাশায় আত্মহত্যা করে বসল। এমনটাই আমরা দেখতে পাই। এ ছাড়া আরেকটা বড় কারণ দেখি ড্রাগসের ব্যবহারকে। তরুণ-তরুণীরা হতাশা থেকে মাদক সেবন করে।’

দায় স্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে পর্যাপ্ত সাইকিয়াট্রিস্ট ও সাইকোলোজিস্ট নেই। আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠানও কম। জনসংখ্যা বিচারে প্রয়োজনের তুলনায় মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক চিকিৎসকের সংখ্যা অনেক কম।’

বিষয়টি সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলেও জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘মানসিক স্বাস্থ্য খুব জরুরি বিষয়। কিন্তু আমরা ইগনোর করে আসছি। এটাতে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।’

মানুষ অনেক চাপে থাকে বলে টিভিতে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান প্রচারের আহ্বান জানান তিনি।

সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বেঁচে থাকলে স্যাডনেস, ড্রিপ্রেশন সব কেটে যাবে। কিন্তু বেঁচে না থাকলেই কিছুই নেই। তাই সবাইকে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে টিকা নিয়ে নিতে হবে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ চৌধুরী রাহিব সাফওয়ান। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস

বিশেষ বক্তা হিসেবে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ চৌধুরী রাহিব সাফওয়ান মানসিক স্বাস্থ্যসেবার নানা দিক তুলে ধরেন তার বক্তব্যে।

চৌধুরী রাহিব সাফওয়ান বলেন, ‘আমি তরুণদের দৃষ্টিকোণ থেকে কথা বলতে চাই। আপনাদের বলতে চাই যে, আপনার সন্তান কিংবা আপনার ছোট ভাই-বোনেরা সম্ভবত যে চিন্তা ভাবনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বা ভবিষ্যতে যেতে চায়, তা নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। কারণ সংকটের কথা তারা খোলাখুলি বলতে পারে না। মনের কথা বলতে তখন তারা বেছে নেয়, সমবয়সী কাউকে।’

শিশু-কিশোররা যাতে পরিবারের বড়দের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারে সেই পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানান রাহিব।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ২০ বছরের কম বয়সী পুরুষদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ হিসেবে আত্মহত্যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা বর্তমানে একটি মারাত্মক পথের দিকে যাচ্ছি। মাত্র এক দশকে তরুণদের আত্মহত্যার হার ৬০ শতাংশ বেড়েছে।’

করোনাকালে বাংলাদেশে আত্মহত্যা বেড়েছে জানিয়ে রাহিব বলেন, ‘আপনি ভাবতে পারেন- আপনার সন্তানকে আপনি চেনেন, জানেন। তারা এ ধরনের কাজ কখনও করবে না। কিন্তু আমি বলতে চাই, কেউই এর বাইরে নয়। বিষণ্নতা বা উদ্বেগ বা আত্মহত্যার চিন্তার বিরুদ্ধে কোনও ভ্যাকসিন নেই। বাবা-মায়েরা যদি সন্তানের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনেন তাহলে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেকটা কমে আসবে।’

স্বাগত বক্তব্যে ‘লেটস টক মেন্টাল হেলথ’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা আনুশা চৌধুরী বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতায় গত তিন বছর ধরে নিরলস কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান।

সমাজে আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে, মানুষের কথা শুনতে ‘লেটস টক মেন্টাল হেলথ’ কাজ করে যাবে বলেও জানান সহ-প্রতিষ্ঠাতা।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে মেহতাব খানম বলেন, ‘এত বড় জনসংখ্যার দেশে সাইকিয়াট্রিস্টের সংখ্যা মাত্র ৩০০ কেন, আমি জানি না। কিন্তু এই সংখ্যাটি খুবই অপ্রতুল। সাইকোলোজিস্ট বা সাইকোথেরাপিস্টের সংখ্যা সব মিলিয়ে ৫০০ হবে।’

মনোরোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিশেষায়িত নার্সের সংখ্যাও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন মেহতাব খানম। মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হলে সামগ্রিক ও ব্যাপক পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও জানান তিনি।

অভিনেত্রী শম্পা রেজা বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য মানবদেহের এমন একটি বিষয়, যা অদৃশ্য আর অস্পৃশ্য।

তিনি বলেন, ‘আমি যখন প্রাণিজগতের দিকে তাকাই, তখন ভাবি, তাদের মনের অসুখ নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয় না। কারণ তারা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে মনের চিকিৎসা নিজেই করতে পারে। মানুষ পারে না। প্রকৃতি থেকে এই শিক্ষা মানুষের নেয়া উচিত।’

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অর্থের নেতা না হয়ে মনের নেতা হোন। হাজারও মানুষ মনের যন্ত্রণায় ভুগছে। তাদের নেতৃত্ব দেয়া প্রয়োজন। তাই বলছি মনের নেতা হোন।’

এ বিভাগের আরো খবর