বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নতুন হার সত্যিই কার্যকর হলে বাস ভাড়া কমবে!

  •    
  • ৭ নভেম্বর, ২০২১ ২২:৪৯

কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকা রুটে বিভিন্ন পথ দিয়ে যেসব বাস চলে, সেগুলো আগে থেকেই সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি হারে ভাড়া আদায় করছে। এতটাই বেশি আদায় করছে যে, নতুন যে হার নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি কার্যকর করতে গেলে উল্টো ভাড়া কমাতে হয়। কিন্তু সেটি যে হওয়ার নয়, তা এরই মধ্যে প্রমাণ পাওয়া গেছে। নতুন হারের তুলনায় ৩০ টাকা বেশি আদায় করা একটি বাস নতুন করে যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে, তাতে তারা ৮০ টাকা বেশি আদায় করবে আসন প্রতি।

ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে বিভিন্ন পথে যে বাস চলে, সেগুলো আগে থেকেই নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করছে। আদায় করা ভাড়া এতটাই বেশি যে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে সরকার নতুন যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে, তা কার্যকর হলে যাত্রীরা লাভবান হবে। কারণ, ভাড়া কমে যাবে।

তবে এটা কখনও হওয়ার নয়; কারণ, সরকার ভাড়া না বাড়ালেও গত আট বছরে নানা অজুহাতে এই পথের বাসমালিকরা ভাড়া ১৬০ টাকা থেকে ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ২৫০ টাকা পর্যন্ত করে ফেলেছেন।

ফলে আগে নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি হারে ভাড়া আদায় করা বাসগুলো এবার ভাড়া আরও বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা।

ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে বাস চলে নানা দিক দিয়ে।

কিশোরগঞ্জের একরামপুর ও গাইটাল বাসস্ট্যান্ড থেকে মহাখালী পর্যন্ত দুটি রুট দিয়ে বাস চলে। একটি রুট গাজীপুরের কাপাসিয়া দিয়ে জয়দেবপুর চৌরাস্তা হয়ে; অন্য একটি রুট নরসিংদীর পাঁচদোনা হয়ে চলে।

একরামপুর ও গাইটাল থেকে কাপাসিয়া হয়ে ঢাকার মহাখালী টার্মিনালের দূরত্ব হয় ১১০ থেকে ১১২ কিলোমিটার। নরসিংদী হয়ে যেসব গাড়ি চলে, সেগুলোর দূরত্ব হয় ১২০ থেকে ১২৫ কিলোমিটার।

এই রুটের কিছু গাড়ি চলে সিএনজিতে, কিছু গাড়ি চলে ডিজেলে। তেলে চললে ইঞ্জিন ভালো থাকে, তাই বেশির ভাগ মালিক তেলে চালান।

একরামপুর থেকে মহাখালী পর্যন্ত চলা উজান-ভাটি পরিবহন ভাড়া নেয় ২২০ টাকা। অপরদিকে অনন্যা পরিবহন ও অনন্যা ক্লাসিক গাইটাল বাসস্ট্যান্ড থেকে ভাড়া নেয় ২৫০ টাকা।

এই ভাড়া সরকারনির্ধারিত হারের চেয়ে আগে থেকেই বেশি। ১১৫ কিলোমিটার ধরলেও প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৪২ পয়সা হিসেবে ভাড়া আসে ১৬৩ টাকা। আর যদি সিএনজিতে চলে, তাহলে কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা করে হয়, তাহলে ভাড়া হয় ১৯৫ টাকা।

যদি নতুন হারে কিলোমিটারে ১ টাকা ৮০ পয়সা করে ভাড়া নেয়া হয়, তাহলে এই দুটি পরিবহনকে ভাড়া কমাতে হবে। উজান-ভাটিকে কমাতে হবে ২০ টাকা, আর অনন্যাকে কমাতে হবে ৪০ টাকার বেশি। আর সিএনজির বাসে ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি আরও ১০ পয়সা করে কম হওয়ার কথা।

কিশোরগঞ্জ জেলা মালিক সমিতির সদস্যসচিব শেখ ফরিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, এই পথের দূরত্ব আরও বেশি এবং তারা সেই হিসেবে কম ভাড়া নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘সরকারি ডিক্লারেশন অনুযায়ী ১৩০ কিলোমিটার রাস্তা। সে অনুযায়ী ভাড়া আসে ২৩৮ টাকা। কিন্তু। আমরা নিচ্ছি ২২০ টাকা। ১৮ টাকা কম নিচ্ছি।’

যদি ১৩০ কিলোমিটারও রাস্তা হয়, তার পরেও আগের হারে ১ টাকা ৪২ পয়সা করে ভাড়া হয় ১৮৪ টাকা।

অন্যদিকে যেসব বাস ভৈরব হয়ে চলাচল করে, সেগুলোর দূরত্ব জিপিওর জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৩৫ কিলোমিটার। সেগুলো সায়েদাবাদ হয়ে চলে বলে দূরত্ব কমে হয় ১৩০ কিলোমিটার।

এই রুটে বত্রিশ বাসস্ট্যান্ড থেকে চলা বত্রিশ পরিবহন ও গাইটাল বাসস্ট্যান্ড থেকে চলা যাতায়াত পরিবহন চলে ডিজেলে। কিন্তু পথের দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া হয় ১৮৫ টাকা। নতুন হার ১ টাকা ৮০ পয়সা করে ভাড়া ঠিক করতে হলেও ভাড়া হয় ২৩৪ টাকা। অর্থাৎ দুটি পরিবহনে ভাড়া কমাতে হবে ১৫ টাকা করে।

তবে সরকারি এসব হিসাব-নিকাশ জেলার বাসমালিকরা যে পরোয়া করেন না, তা এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে।

একই জেলায় চামড়া বন্দর থেকে মিরপুর-১৪ পর্যন্ত একটি বাস চলে, নাম শাহপরাণ পরিবহন। এই পরিবহনে ভাড়া ছিল ৩০০ টাকা। তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এরই মধ্যে ভাড়া বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩৫০ টাকা।

চামড়া বন্দর থেকে কিশোরগঞ্জের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। আর কিশোরগঞ্জ থেকে যে পথে এটি ঢাকায় আসে, তার দূরত্ব ১১০ কিলোমিটার।

বাস মালিক সমিতির নেতা এইটুকু পথের দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার দাবি করেছেন। এ বিষয়টি ধরলেও এই বাস যে হারে ভাড়া নির্ধারণ করেছে, তাতে যাত্রীরা আসনপ্রতি বেশি দিতে বাধ্য হবেন ৮০ টাকা।

যদি এই পথের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটারও ধরা হয়, তাহলে প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৮০ পয়সা হারে ভাড়া হয় ২৭০ টাকা।

অর্থাৎ বাসটি আগে থেকে যে হারে ভাড়া নিচ্ছিল, নতুন হারে ভাড়া সত্যিই কার্যকর হলে ভাড়া কমাতে হয় আসনপ্রতি ৩০ টাকা।

তেলের দাম বাড়ায় খরচ কত বাড়ল

গাজীপুরের কাপাসিয়া দিয়ে ঢাকা রুটে বাস চালানো একজন মালিক জানান, ৫২ আসনের বাসে এই পথে আসা-যাওয়ায় তেল লাগে ৯০ থেকে ৯৫ লিটার। আর ৪০ আসনের বাসে যাওয়া-আসায় ৫৫ থেকে ৫৬ লিটার। পুরোনো বাস হলে ৬৫ থেকে ৭০ লিটার তেল লাগে।

অর্থাৎ তেলের দাম বাড়ায় বড় বাসে খরচ বেড়েছে ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৪২৫ টাকা। যদি একেক যাত্রায় ৪০ জন করেও গড়ে যাত্রী ওঠে (যদিও আন্তজেলা হলেও প্রায় সময়ই যাত্রী দাঁড়িয়ে যায়), তাহলে যাত্রীপিছু খরচ বেড়েছে ১৬ টাকা। আর যদি ৫০ জন যাত্রী ওঠে, তাহলে যাত্রীপিছু খরচ বাড়ে ১৩ টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর