ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসার পর নগর পরিবহন ও আন্তজেলার কিছু রুটে বাস ছেড়ে যাচ্ছে। তবে সকাল থেকে সব রুটে বাস চালানোর কথা জানাচ্ছেন শ্রমিকরা।
রোববার সন্ধ্যা থেকেই রাস্তায় নামে নগর পরিবহনের বাস, তবে সংখ্যায় কম। বাড্ডার নতুনবাজার থেকে মহাখালী হয়ে গাবতলী রুটে চলা বৈশাখী পরিবহনের বাস চলতে দেখা যায় সন্ধ্যার আগেই।
বাসটির হেলপার সুরুজ মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মালিক বাস নামাইতে কইসে দেইখ্যা চালাইতাছি।’
গত বুধবার রাত থেকে জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন জেলায় শুক্রবার থেকে বাস বন্ধ রাখার ঘোষণা আসে। কেন্দ্রীয়ভাবে ধর্মঘটের ঘোষণা না দিলেও বাসমালিকদের সমিতি সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এই কর্মসূচিতে সমর্থন দেয়।
রাজধানী ঢাকার সিংগভাগ বাসই সিএনজিতে চালালেও তারাও বাস বন্ধ করে রাখে। এর ফলে তিন দিনের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ শেষে রোববার সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর সঙ্গে বাসমালিকদের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে ছিল দেশের মানুষ।
বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বৈঠক শেষে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, দূরপাল্লার বাসে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে।
নগর পরিবহনে বড় বাসে ভাড়া ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ২ টাকা ১৫ পয়সা করার কথা জানান তিনি। আর মিনিবাসে তা ১০ পয়সা কম।
তবে রাজধানীতে চলাচলকারী সিএনজিচালিত বাসে ভাড়া বাড়বে না- এই ঘোষণাও দিয়ে রাখেন খন্দকার এনায়েত উল্লাহ।
ভাড়া বেড়েছে জানিয়ে পরিবহনমালিকদের বাস নামানোর আহ্বানও জানান মালিকদের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘মালিকরা যার যার অবস্থান থেকে তেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে ধর্মঘট পালন করেছেন। এখানে মালিক সমিতি থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আমরা আশা করছি, ভাড়া যেহেতু সমন্বয় করা হয়েছে, তাই মালিকরা তাদের বাস চালু করবেন।’
এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে গাজীপুর থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত চলাচলকারী বলাকা পরিবহনের বাসে যাত্রী তুলতে দেখা যায়।
বাসটির হেলপার আব্দুল মতিন জানান, মালিকের নির্দেশে নতুন ভাড়ায় যাত্রী তুলছেন তারা। তবে নতুন ভাড়া কার্যকর হবে সকাল থেকে। আর এই বাসটি চলে সিএনজিতে। ফলে বর্ধিত ভাড়া তারা নিতে পারবে না।
ঘাটারচর থেকে উত্তরা চলাচলকারী প্রজাপতি পরিবহনের চালক মো. আজিজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সন্ধ্যার পরে ওপর থেকে আমাদের বাস চালানোর নির্দেশনা আসে। তবে সবাই আজকে গাড়ি বের করছে না। কিছু কিছু বাস আজ থেকে চলতে শুরু করেছে। আগামীকাল থেকে আশা করছি নতুন ভাড়ায় স্বাভাবিকভাবে সব বাস চলা শুরু করবে।’
এই বাসটি ডিজেলে বলে চলে জানালেন চালক।
মহাখালী টার্মিনালের অনেক কাউন্টারই বন্ধ দেখা যায়। বেশির ভাগ কাউন্টার থেকে জানানো হয়, নতুন চার্ট পাওয়ার পর সকাল থেকে তারা গাড়ি ছাড়বেন।
ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোণার কয়েকটি বাস রাতেই যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছেড়েছে।
ময়মনসিংহে চলাচলকারী এনা পরিবহনের কাউন্টারকর্মী মনিরুজ্জামান শুভ বলেন, ‘নতুন ভাড়ায় রাত থেকেই বাস ছাড়া শুরু হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নতুন ভাড়ায় ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যেতে একজনের খরচ হবে ২৭০ টাকা, আগে এ ভাড়া ছিল ২২০ টাকা।’
ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলাচলকারী উত্তরা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মোর্শেদ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখনো ভাড়ার চার্ট না পাওয়ায় রাতে বাস ছাড়া হচ্ছে না। আশা করি, সকালের মধ্যে নতুন ভাড়ার চার্ট এসে যাবে। সোমবার সকাল থেকে বাস ছাড়ার প্রস্তুতি আছে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী আরেকটি পরিবহন লাবিবা ক্লাসিকের কর্মী মো. সোহেলও একই কথা বলেন।