সরকার ডিজেলের দাম যে হারে বাড়িয়েছে, বাস ভাড়া তার চেয়ে বেশি হারে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম প্রহর থেকে ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর সরকারকে চাপে রাখতে তিন দিনের ধর্মঘটের মধ্যে দূরপাল্লার বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ এবং মহানগরে ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বিআরটিএ ও বাসমালিকদের মধ্যে বৈঠকে।
রোববার বিআরটিএর কার্যালয়ে সরকারি সংস্থাটির সঙ্গে মালিকদের দীর্ঘ বৈঠক শেষে এ তথ্য জানানো হয়। বলা হয়, সিএনজিচালিত বাসে বাড়তি ভাড়া কার্যকর হবে না।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দূরপাল্লায় প্রতি কিলোমিটারে বাস ভাড়া হবে ১ টাকা ৮০ পয়সা। আগে ছিল ১ টাকা ৪২ পয়সা। বাড়ল ৩৮ পয়সা।
মহানগরে নতুন ভাড়া ঠিক করা হয়েছে কিলোমিটারে ২ টাকা ১৫ পয়সা। আগে ছিল ১ টাকা ৭০ পয়সা। বাড়ল ৪৫ পয়সা। তবে মিনিবাসে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ১০ পয়সা কম নির্ধারণ করা আছে।
মহানগরে মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করা হয়েছে ৮ টাকা আর বড় বাসে ১০ টাকা।
সন্ধ্যায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, দূরপাল্লা ও নগর পরিবহনের পাশাপাশি ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ) এর আওতাধীন জেলার (নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলা) ভাড়া হবে কিলোমিটারে ২ টাকা ৫ পয়সা। এসব এলাকায় আগে কিলোমিটার প্রতি ভাড়া ছিল ১ টাকা ৬০ পয়সা।
বিআরটিএ অনুমোদিত আসন সংখ্যা কমিয়ে আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য বাস বা মিনিবাসের আসন সংখ্যা পুনর্বিন্যাস করা হলে আনুপাতিকভাবে ভাড়ার হার নির্ধারিত হবে বলে জানানো হয় প্রজ্ঞাপনে। সেক্ষেত্রে রুট পারমিট অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ বা যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি) আনুপাতিকভাবে ভাড়ার হার অনুমোদন করবে।
এ ভাড়া বৃদ্ধি গ্যাস, অকটেন ও পেট্রোল চালিত যানবাহনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলেও জানানো হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
বুধবার মধ্যরাত থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায়। ৬৫ টাকা থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম এক লাফে ৮০ টাকা করে সরকার।
২৩ শতাংশ দাম বাড়ার প্রতিক্রিয়ায় পরদিন সকালে পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধ ঘোষণার ডাক দেয় ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিকদের সংগঠন। পরে প্রথমে চট্টগ্রাম ও পরে বিভিন্ন জেলা থেকে ঘোষণা আসে, শুক্রবার থেকে চলবে না বাসও।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ধর্মঘট বা কর্মবিরতির ডাক অবশ্য দেয়নি। তবে মালিকদের বাস চালানো বন্ধের ঘোষণায় তারা সমর্থন জানায়।
সেদিন বিআরটিএর কাছে বাস ভাড়া ‘যৌক্তিক হারে’ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে চিঠি দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। আর শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি বলে বিআরটিএ ভাড়া পুনর্নির্ধারণ কমিটির বৈঠক ডাকে রোববার।
এর মধ্যে শুক্রবার থেকে বাস ও ট্রাক বন্ধ রাখায় মানুষের ভোগান্তি চরমে ওঠে। রোববার সাপ্তাহিক কর্মদিবসে মানুষের দুর্ভোগ আরও চরমে ওঠে। এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় বিআরটিএর বনানী কার্যালয়ে বৈঠক শুরু হয়। চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
রাজধানীতে সিংহভাগ বাস সিএনজিতে চালানো হলেও তারাও যোগ দেয় ধর্মঘটে। আর মহানগরের বাসের ভাড়াও ৫০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করে মালিকপক্ষ। আর দূরপাল্লার বাসের ভাড়া ৪০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। তবে বৈঠক শেষে খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, যেসব বাস সিএনজিতে চলে সেগুলোর ভাড়া আগের হারেই থাকবে।