সাড়ে চার মাস পর কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে আবারও ১২ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। টাকার পরিমাণ ৩ কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজারের ওপরে। টাকা ছাড়াও আছে বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার।
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে শনিবার সকাল ৯টার দিকে কিশোরগঞ্জের হারুয়া এলাকার নরসুন্দার তীরের এই মসজিদের আটটি দানবাক্স খোলা হয়।
প্রথমে এক ঘণ্টা ধরে বস্তায় ভরা হয় টাকা। এরপর ১০টা থেকে শুরু হয় গণনা। চলে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। গণনায় অংশ নেন মাদ্রাসার ১২৭ জন ছাত্র, ব্যাংকের ৫০ জন স্টাফ, মসজিদ কমিটির ৩৪ জন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০ জন সদস্য।
দানবাক্স খোলার দিন এই মসজিদের আশপাশে ভিড় জমান স্থানীয় লোকজন। আশপাশের এলাকা থেকেও অনেকে আসেন। সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দেখা যায় মসজিদের মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে।
পাগলা মাদ্রাসা ও এতিমখানার নূরানি বিভাগের ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থী আফওয়াত ফকির নিউজবাংলাকে বলে, ‘দানবাক্স খোলার পর একসঙ্গে এত টাকা, স্বর্ণ, রুপা আর বিদেশি টাকা দেখে আমাদের খুব ভালো লাগে। সবচেয়ে ভালো লাগে টাকা গুনতে। একবার দানবাক্স খোলার পর গণনা শেষ হলে আমরা আবার অপেক্ষায় থাকি কবে খুলবে।’
টাকা গণনা দেখতে আসেন ইটনা উপজেলার মৃগা ইউনিয়নের গোলাম কিবরিয়া।
তিনি বলেন, ‘সব সময়ই শুনি পাগলা মসজিদের দানবাক্সে লাখ লাখ টাকা জমা পড়ে। এবার নিজের চোখে দেখতে এসেছি। একসঙ্গে এত পরিমাণ দানের টাকা দেখে খুবই ভালো লেগেছে।’
এর আগে দানবাক্স খোলা হয়েছিল এ বছরের ১৯ জুন। তখন পাওয়া যায় ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৯ টাকা।
টাকা ছাড়াও মসজিদে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মানুষ। শুধু মুসলমান নয়, অন্য ধর্মের মানুষও এখানে নিয়মিত দান করেন।
মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, এখনও মোট হিসাব শেষ হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, তিন কোটির বেশি টাকা উঠেছে। হিসাব শেষে অর্থের পরিমাণ জানানো হবে।
এত মানুষ এখানে দান করার কারণ কী?
মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান জানান, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করছেন এই মসজিদে। যারা দান করতে আসেন তারা বলেন, এখানে দান করার পরে নাকি তাদের আশা পূরণ হয়েছে। এ কারণে আরও মানুষ নিজেদের মনের আশা পূরণের জন্য দান করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের শুরুতে মসজিদে মুসল্লিদের চলাচল এবং নারীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ থাকলেও দান অব্যাহত ছিল।’
কী করা হয় এই অর্থ দিয়ে?
দানবাক্স কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা খানম জানান, পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স এবং এতিমখানার খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেয়া হয়। অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্তদের সহায়তাও করা হয়।
এ বছর সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের করোনা ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবকদেরও এই দানের টাকা থেকে সহায়তা করা হয়েছে।