সারা দেশে পরিবহন মালিক সমিতির ডাকা বাস ধর্মঘটে ভোগান্তিতে পড়েছেন বান্দরবানে বেড়াতে আসা পর্যটকরা। কিছু পর্যটক বেশি ভাড়া দিয়ে ভেঙে ভেঙে বাড়ি ফিরলেও, অনেকেই পড়েছেন আটকা।
শহরের রোয়াংছড়ি ও রাঙ্গামাটি বাসস্টেশন, রুমা-থানচি বাসস্ট্যান্ড, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, দূরপাল্লার সব বাস অলস পড়ে আছে। কোনো বাস বান্দরবান ছেড়ে যায়নি, অন্য কোনো জেলা থেকেও বাস ঢোকেনি এখানে। শুক্রবার সকাল থেকেই এই অবস্থা।
মো. শফি নামের স্থানীয় একজন বলেন, ‘চট্টগ্রামে যাব বলে বের হয়েছি, কিন্তু বাস বন্ধ। এখন বেশি ভাড়া দিয়ে হলেও ভেঙে ভেঙে যেতে হবে। সরকার যদি তেলের দাম কমিয়ে আনে তাহলে যাত্রীদের ভোগান্তি কমে।’
বাস বন্ধ থাকলেও ছোট ছোট কিছু যানবাহন চলাচল করছে। তবে তারা দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
ধর্মঘট ডাকার পর মাহিন্দ্রা গাড়িগুলোতে ১০ থেকে ২০ টাকা করে বেশি নেয়া হচ্ছে।
ইউসুফ আলী নামের এক যাত্রী বলেন, ‘সরকার তেলের এত দাম বাড়ানোয় আমরা সাধারণ মানুষ বিপদে পড়ে গেছি। বেশি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।’
এ বিষয়ে চালক মো. লিয়াকত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তেলের দাম একবারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ জন্য ভাড়া ১০ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। ভাড়া না বাড়ালে তো পোষাবে না আমাদের। বাধ্য হয়েই বেশি ভাড়া নিচ্ছি।’
জিপ ড্রাইভার শ্যামল তঞ্চজ্ঞা বলেন, ‘বান্দরবান থেকে থানচি তমা-টুঙ্গী এত দিন ছয় হাজার টাকায় যাতায়াত করতাম। এখন সাত হাজার টাকা না হলে লস হবে।’
সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন পার্বত্য এই জেলায়। শুক্রবার অথবা শনিবার রাতে তারা ফিরে যান নিজেদের ঠিকানায়।
কক্সবাজার থেকে বান্দরবান বেড়াতে এসেছিলেন মো. রকিবুল। তিনি বলেন, ‘আসার সময় তো বাসে এসেছিলাম। এখন বাস বন্ধ; মাহিন্দ্রা, অটোরিকশায় ভেঙে ভেঙে যেতে হবে। এভাবে ভাড়া বেশি লেগে যাবে।’
ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন মো. ইমতিয়াজ। তিনি বলেন, ‘কয়দিন ঘুরে খুব ভালো লেগেছে। এখন ফেরার সময় এই দুর্ভোগ। কী করব বুঝতে পারছি না।’
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, বুধবার রাত ১২টা থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে বেড়ে গেছে ১৫ টাকা। এতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরির মালিকরা শুক্রবার ভোর থেকে পণ্য পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দেয়। এরপর পরিবহন মালিক সমিতিও শুক্রবার থেকে বাস চালানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
বান্দরবান পূর্বানী চেয়ার কোচ মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত কান্তি দাশ ঝন্তু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে বুধবার মধ্যরাত থেকে হঠাৎ তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে ভাড়া সমন্বয়ের দাবিতে আমাদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলছে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।’
শৈল শোভা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি অমল কান্তি দাশ জানান, রোববার কেন্দ্রীয় নেতারা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠক থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এলে বাস চলাচল শুরু হবে।’