চাকরির পরীক্ষা দিতে লোকাল ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন আবদুল কাদির। কমলাপুর নামার পর টের পান পকেটে থাকা মানিব্যাগ চুরি হয়ে গেছে। ধর্মঘটের কারণে বাস চলছিল না, রিকশা ভাড়া চায় তিনগুণ। তাই হেঁটে পরীক্ষা কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যান।
আবদুল কাদির যখন কেন্দ্রে পৌঁছান ততক্ষণে পরীক্ষা শুরু হয়ে আট মিনিট শেষ। দেখা গেলো, কাদির কেন্দ্রে ঢুকতে স্কুলের গেটম্যান রফিকুলের সঙ্গে তর্কে জড়িয়েছেন। পরীক্ষাটা তার জন্য অনেককিছু জানিয়ে দারোয়ান রফিকুলকে অনুনয়-বিনয় করতে থাকেন তিনি।
তাতেও মন গলেনি রফিকুলের। রফিকুল বলছেন, ‘এটি পরীক্ষার কেন্দ্র। এখানে হরতাল-টরতালের কথা বলে লাভ নেই। আমাকে বলা আছে কাউকে ঢুকতে না দিতে।’
কেন্দ্রে ঢুকতে দিতে সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যকেও অনুরোধ জানান কাদির। তাতেও কোনো লাভ হয়নি তার।
অগত্যা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এলেও কাদির বসতে পারেননি তার কাঙ্ক্ষিত পরীক্ষায়। হতাশ হয়ে পাশে বসে পড়েন কাদির।
ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে পরিবহন মালিক সমিতি শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেছে।
তবে এরই মধ্যে শুক্রবার অন্তত ২৬টি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফলে বাস সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন পরীক্ষার্থীরা।
তারা বলছেন, এমনিতেই তারা বেকার। তার ওপর ২০ টাকার ভাড়া ১৪০ টাকা দিয়ে তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে হচ্ছে। এটি তাদের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।
উদয়ন স্কুলে সকালে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তিনটি পদে পরীক্ষা হয়েছে। পদগুলো হলো ১২ গ্রেডের কম্পিউটার অপারেটর, ১৩ গ্রেডের সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর এবং ১৪ গ্রেডের সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর। দেড় ঘণ্টার পরীক্ষা শুরু হয় সকাল ১০টায়।
১২ গ্রেডের কম্পিউটার অপারেটর পদে পরীক্ষার জন্যই আব্দুল কাদির ঢাকায় এসেছেন।
ছলছল চোখে কাদির পুলিশ সদস্যদের বলেন, ‘আজকে ধর্মঘট ছিল। পরীক্ষাটা দেয়ার একটু ব্যবস্থা করে দেন না ভাই। আমার দিকে আমার পরিবার তাকিয়ে আছে।’
পুলিশ সদস্যরা বলছেন, তাদের আসলে কিছু করার নেই। সবকিছু চাইলেও তারা করতে পারেন না।
নিরূপায় হয়ে গেট থেকে ফিরে এসে স্কুলের সামনে বসে যান আব্দুল কাদির। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু।
নিউজবাংলাকে আব্দুল কাদির বলেন, ‘আমার বাড়ি শেরপুর। চট্টগ্রামে একটা দোকানে কাজ করি। পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম থেকে মেইল ট্রেনে ঢাকায় আসি। মেইল ট্রেনগুলো সাধারণত সাড়ে ৭টায় ঢাকা পৌঁছে। কিন্তু এই ট্রেনটা পৌঁছায় ৯টায়। এর মধ্যে আমার অ্যাডমিট কার্ড এবং মানিব্যাগ চুরি হয়ে যায়।
‘তাই কমলাপুর থেকে হেঁটে কাকরাইল আসি। কাকরাইল থেকে তরঙ্গ প্লাস বাসে সায়েন্স ল্যাব। সেখান থেকে হারানো প্রবেশপত্র তুলে হেঁটেই পরীক্ষা কেন্দ্রে আসি। এজন্য আমার ১০ মিনিট দেরি হয়েছে। তাই তারা আমাকে ঢুকতে দিচ্ছে না।’
তবে নিউজবাংলার প্রতিনিধি উদয়ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক জহুরা বেগমকে কাদিরের বিষয়টি জানালে তিনি আবদুল কাদিরকে কেন্দ্রে প্রবেশের ব্যবস্থা করে দেন। ততক্ষণে অবশ্য ২০ মিনিট পেরিয়ে গেছে।
কাদিরের মতো অনেককে দেখা গেছে দেরিতে গিয়ে আর কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেননি।
আরেক পরীক্ষার্থী নিউজবাংলাকে জানান, তিনি উত্তরা থেকে গেছেন পরীক্ষা দিতে। বাস চললে তার ৫০ টাকার মতো ভাড়া লাগত কেন্দ্রে পৌঁছাতে। অথচ তাকে কেন্দ্রে যেতে শুক্রবার পাঁচ শ টাকার মতো খরচ করতে হয়েছে। বদলাতে হয়েছে কয়েকটি পরিবহন। তারপরও হাঁটতে হয়েছে দীর্ঘ পথ।