বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অভাবনীয় রপ্তানি আয়ে উচ্ছ্বাস

  •    
  • ২ নভেম্বর, ২০২১ ১৭:৫৯

অক্টোবরে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬০ শতাংশের বেশি। সব মিলিয়ে সাড়ে ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিদেশে পাঠিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর আগে কোনো মাসে এত বেশি পণ্য রপ্তানি হয়নি। কেবল এই মাস নয়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসের রপ্তানি আয়ও গড়েছে রেকর্ড। প্রায় ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

যে প্রত্যাশা করা হয়েছিল, ছাড়িয়ে গেছে তাও। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক রপ্তানি আয়ে ধারণার চেয়েও বেশি উল্লম্ফন হয়েছে।

সদ্য সমাপ্ত অক্টোবর মাসে ৪৭২ কোটি ৭৫ লাখ ৩০ হাজার (৪.৭৩ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৭০ পয়সা) এই অর্থের পরিমাণ ৪০ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা।

এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৩৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি; যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এক মাসে এই পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়নি। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪১৭ কোটি ডলার বা ৩৫ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ১ হাজার ৫৭৫ কোটি (১৫.৭৫ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। টাকার হিসাবে যা ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা।

এই চার মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে এনেছেন রপ্তানিকারকরা। লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকে ভর করেই পণ্য রপ্তানিতে সুবাতাস বইছে। অক্টোবরে পোশাক রপ্তানি থেকে মোট ১ হাজার ১৬২ কোটি ১১ লাখ (১২.৬২ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছে; যা মোট রপ্তানির ৮০ দশমিক ১৩ শতাংশ।

এই চার মাসে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অর্থাৎ চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২১ শতাংশ বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১২ দশমিক ৪১ শতাংশ।

পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান রপ্তানি আয়ের এই উল্লম্ফনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সত্যিই আমরা খুশি। এত দ্রুত করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে আমরা ঘুরে দাঁড়াব, ভাবতে পারিনি।’

আগামী দিনগুলোতে রপ্তানি আয় আরও বাড়বে বলে আশার কথা শোনান তিনি।

একই সুখবর দিয়েছেন নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এখনও প্রচুর অর্ডার আসছে। দামও ভালো পাচ্ছি আমরা। সামনে বড়দিন (২৫ ডিসেম্বর)। চীন, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমারের অনেক অর্ডার বাংলাদেশে আসছে। সব মিলিয়ে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য ভালো দিনই অপেক্ষা করছে বলে মনে হচ্ছে।’

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) মঙ্গলবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৪৭২ কোটি ৭৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার আয় করেছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৩৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

২০২০ সালের অক্টোবরে পণ্য রপ্তানি থেকে ২৯৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।

আর অর্থবছরের প্রথম চার মাসে অর্থাৎ জুলাই-অক্টোবর সময়ে মোট ১ হাজার ৫৭৫ কোটি ডলার আয় করে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি।

২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পণ্য রপ্তানি থেকে ১ হাজার ২৮৪ কোটি ৪৬ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। এই চার মাসে লক্ষ্য ধরা ছিল ১ হাজার ৩৮৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার (১৩.৮৯ বিলিয়ন) ডলার।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই তিন মাসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি এসেছে তৈরি পোশাক থেকে।

এই চার মাসে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অথচ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১১ দশমিক ০২ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি নিয়ে শুরু হয়েছিল নতুন বছর। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এই পরিমাণ আয় কমে গিয়েছিল। এর পর থেকে প্রতি মাসেই বাড়ছে রপ্তানি আয়।

আগস্টে পণ্য রপ্তানি থেকে গত বছরের একই মাসের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি আয় আসে দেশে।

পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোরবানির ঈদের ছুটি এবং লকডাউনের কারণে ১০-১১ দিন পোশাক কারখানা বন্ধ থাকায় জুলাই মাসে রপ্তানি আয় কম এসেছিল। ১ আগস্ট থেকে পুরোদমে কারখানায় উৎপাদন চলছে। প্রচুর অর্ডার আসছে; দামও বেশি পাচ্ছি। সব কারখানাতেই এখন উৎসব উৎসব ভাব।’

তিনি বলেন, ‘প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। মানুষ আগের মতো পোশাক কিনছে। সে কারণেই প্রচুর অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের এখানেও করোনা পরিস্থিতির স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ২৫ ডিসেম্বরের বড়দিনকে ঘিরেও ভালো অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে।

‘সব মিলিয়ে বাংলাদেশের পোশাকের জন্য সুদিন আসছে বলেই মনে হচ্ছে। এখন যদি আর কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে আগামী দিনগুলোতে পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি বাড়বে। এবারও একটা ভালো প্রবৃদ্ধি উপহার দিতে পারব আমরা।’

ফারুক হাসান বলেন, ‘জুলাইয়ে রপ্তানি আয় কম আসবে, এটা অবধারিত ছিল। ঈদের ছুটি ও লকডাউনের কারণে টানা ১১/১২ দিন সব কারখানা বন্ধ ছিল। উৎপাদন হয়নি; রপ্তানিও হয়নি। আমরা ওই মাসের রপ্তানির চিত্র নিয়ে মোটেই বিচলিত ছিলাম না।‘

নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বিশ্ব বাণিজ্যের যে গতিবিধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বেশ বাড়বে। ইউরোপ-আমেরিকায় পরিস্থিতি ভালো। তারা এখন প্রচুর পোশাক কেনা শুরু করেছে। আমরা যদি তাদের চাহিদা অনুযায়ী পোশাক দিতে পারি, তাহলে রপ্তানি আরও বাড়বে।’

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-অক্টোবর সময়ে রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ২৬২ কোটি ১১ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১২ দশমিক ৪১ শতাংশ।

এই চার মাসে নিট পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। উভেনে বেড়েছে ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ।

তবে দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত মাছ, কৃষি পণ্যসহ অন্য সব খাতের রপ্তানি আয় বেড়েছে।

জুলাই-অক্টোবর সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ২২ কোটি ৩০ লাখ ডলার আয় হয়েছে। গত বছরের এই চার মাসে আয় হয়েছিল ৪৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৪৫ কোটি ৩৬ লাখ ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই-অক্টোবর সময়ে পাট খাতের রপ্তানি আয় কমেছে ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

এই চার মাসে হিমায়িত মাছ রপ্তানি বেড়েছে ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। কৃষিপণ্য রপ্তানি বেড়েছে ২৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ২৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ৩১ দশমিক ৬০ শতাংশ। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ২ ৯দশমিক ০৪ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল রপ্তানি বেড়েছে ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ।

স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬৫ শতাংশ।

১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের মোট লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা আছে ৩৫ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার আয় করে বাংলাদেশ, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।

২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি (৩৩.৬৭ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম।

এ বিভাগের আরো খবর