রাজবাড়ী পৌর এলাকায় পদ্মা নদীতে ফের ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে শহর রক্ষাবাঁধ পড়েছে হুমকিতে।
পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গোদারবাজার এলাকায় সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ভাঙন শুরু হয়। হঠাৎ ১৫০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তলিয়ে যায় দুটি পাকা বসতবাড়ি। হুমকিতে আছে ৩০টি বসতঘর, মসজিদসহ বহু স্থাপনা।
রাজবাড়ী শহর থেকে সড়কটি গিয়ে শেষ হয়েছে বেড়িবাঁধের ওপর গোদারবাজার তিন রাস্তার মোড়ে। একে গোদারবাজারের প্রধান পয়েন্ট ধরা হয়। এই পয়েন্ট থেকে নদী পর্যন্ত রাস্তাটি ছিল প্রায় ৪০ মিটার।
সোমবার দুপুরে দেখা যায়, রাস্তাটির অর্ধেক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। টিকে আছে ২০ মিটার। নদী তীরের বাসিন্দারা এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার আতঙ্কে। অনেকেই নসিমন-করিমনে করে আসবাবপত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অন্যত্র।
স্থানীয় রশীদ ব্যাপারী বলেন, ‘দুপুর ১২টা থেকে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। বাড়ির উঠানের জমি রান্নাঘর, বাথরুম নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঘরটাও এখন চলে যাবে। দুই ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবো?
‘নদীর যে অবস্থা তাতে এখানে থাকার মতো আর অবস্থা নেই। তাই বসতঘর নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ যে ভাঙন শুরু হয়েছে, তাতে শহর রক্ষাবাঁধ টিকবে না বলে মনে হচ্ছে।’
ভাঙনে বিলীন হয়েছে আবুল ব্যাপারী নামের আরেকজনের পাকা ঘর। তিনি একই এলাকার বাসিন্দা, পেশায় ডিম ব্যবসায়ী। তার দুই ছেলে দুই মেয়ে। ঘরের আসবাবপত্র নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে তার ঘরের একাংশ চলে গেছে নদীতে।
রফিক ব্যাপারীও তার এক তলা পাকা বাড়ি থেকে সব কিছু নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘পাশের দুই বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেল দেখতে দেখতে। আমার বাড়িটা নদী থেকে মাত্র ১৫ মিটার দূরে। যে ভাঙন শুরু হয়েছে, মনে হচ্ছে আজকেই সব চলে যাবে। এখন কোথায় যাব, কোথায় থাকব কিছুই বুঝছি না।’
আবুল ব্যাপারীসহ এলাকার বেশ কয়েক জনের অভিযোগ, পদ্মার ভাঙনরোধে সরকার ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। সেই কাজ মোটেও ভালো হয়নি। এ ছাড়া নদী থেকে অবাধে তোলা হয়েছে বালু। এসবই ভাঙনের মূল কারণ। কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। গ্রাম ছাড়িয়ে শহরবাসীর মধ্যেও আতঙ্ক ঢুকে গেছে।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আহাদ জানান, সোমবারের ভাঙনের বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। এই বিষয়ে তিনি কিছু শোনেননি।
৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের আগস্টে। দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, তারা এখনও কাজ বুঝে নেয়নি। চলমান কাজের মধ্যেই ১৫ দফা ভাঙনে প্রায় দেড় হাজার মিটার এলাকার সিসি ব্লক নদীতে বিলীন হয়েছে। শহর রক্ষা বেড়িবাঁধের খুব কাছে চলে এসেছে নদী। কোথাও কোথাও নদী বাঁধ স্পর্শ করেছে।
পদ্মা নদী বিধৌত রাজবাড়ী জেলা। জেলার চারটি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা। পদ্মা নদীর সৌন্দর্যেই একে বলা হয় ‘পদ্মা কন্যা রাজবাড়ী’।